শান্তা মারিয়া, কবি, সাংবাদিক, কলামিস্ট
মতামত

ছাত্রী বিবাহিত হলে সমস্যা কোথায়?

শান্তা মারিয়া

অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বুধবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির বৈঠকে সুপারিশ করা হচ্ছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের থাকতে না দেয়ার নিয়ম বাতিল হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটা একটা সময়োচিত পদক্ষেপ। কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে এতদিন এমন একটা আজব নিয়ম চালু ছিল এবং কেউ তা দেখেনি এটা কিভাবে সম্ভব।

নিয়মটি সত্যিই ছিল আজব। নিয়মটি শুনলেই তো মনে প্রশ্নে জাগে ছাত্রী বিবাহিত হলে সমস্যাটা কোথায়? আজব এই নিয়মে বলা হয়েছিল যে কোন ছাত্রী যদি বিবাহিত হয় তাহলে সে নাকি ঢাবির ছাত্রীহলে থাকতে পারবে না। আর বিবাহিত ছাত্রী যদি অন্তঃসত্ত্বা হয় তাহলে নাকি আরও বড় বিপদ। তাকে আর কোনমতেই আবাসিক হলে ঠাঁই দেয়া যাবে না। এমন একটি ভুতুড়ে আইন যে এতদিন বহাল ছিল সেটাই তো কোনদিন জানতে পারিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও।

বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে মা ও সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের পরিবারের কাছে থাকা ভালো। সেটা তো সকলেই মনে করে। কিন্তু যাদের সে উপায় নেই। যারা বাধ্য হয়ে থাকছেন তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য হলগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা কি একান্তই অসম্ভব?

আমার মনে আছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা। অনার্সে পড়ছি তখন। দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষে কয়েকজন সহপাঠিনীর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেই থাকতো। হলে থেকেই তারা মাস্টার্স পর্যন্ত পাস করেন। অনেকে ভালো চাকরিও করছেন এখন।

আমার এক পরিচিত বন্ধু। বিয়ে হয়ে যায় তার অনার্স প্রথম বর্ষে। শ্বশুরবাড়ি ছিল চট্টগ্রামে। স্বামীও সেখানেই ছিল। মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির সময় শ্বশুরবাড়িতে যেত। অনার্স পরীক্ষার তিনদিন আগে মেয়েটির সন্তান হয়। তারপরও সে পরীক্ষা দিয়ে পাস করে। বর্তমানে সে একটি কলেজের শিক্ষক।

কল্পনা করুন তো একবার, যদি এই মেয়েগুলো বিয়ের পর হলে থেকে শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ না পেত তাহলে কি হতো? বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নিরাপদে ছিল বলে তাদের পরিবার থেকে শিক্ষা জীবন চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছিল। নিশ্চয়ই ঢাকায় আলাদা বাড়ি ভাড়া করে অথবা বেসরকারি কোন ছাত্রী হোস্টেলে থাকতে হলে তাদের লেখাপড়াটাই বন্ধ হয়ে যেত।

উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মাঝখানে নারীর বিয়ে হয়ে যাবে এটা কারও কাম্য নয়। এটাকে সমর্থনও করছি না। কিন্তু সামাজিক বাস্তবতা হলো, অনার্স বা মাস্টার্স পড়ার সময় অনেক মেয়েরই বিয়ের আয়োজন করা হয় পারিবারিকভাবে। তখন মেয়ের পক্ষ থেকে পাত্রপক্ষকে অনুরোধ করা হয় তারা যেন বিয়ের পরও মেয়েটিকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। অনেক পাত্রপক্ষ সেটি করেও থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকলে মেয়েটি নিরাপদে আছে বলে মনে করা হয় এবং তখন হয়তো পাত্রপক্ষ তেমন বাধা সৃষ্টি করে না।

কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাধা না দিলেও বিঘ্ন সৃষ্টি করছিল স্বয়ং ভাসুর মানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমন অমানবিক আইন কিভাবে থাকে সেটাই প্রশ্ন। একটা জিনিস বুঝতে পারছি না একটি মেয়ে বিবাহিত হলে সমস্যাটা কোথায় ছিল? মেয়েটির কি তখন বাড়তি হাত পা গজায়? তার কি এমন পরিবর্তন হয় যে সে হলে থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মানেই তো তার বয়স অন্তত ১৮ বছর। ১৮ বছরের উপরেই যদি হয় তাহলে তো তার বিয়ে করাটা আইনগতভাবে কোন অপরাধ নয়। বিয়ে কি অবৈধ না অপরাধ? আর বিবাহিত নারীর সন্তান ধারণও কি অপরাধ?

পিএইচডি করছে যে গবেষক তিনিও তো হলেই থাকবেন। নইলে থাকবেন আর কোথায়। বিশেষ করে তার যদি ঢাকায় পরিবার না থাকে। আর অনেক পিএইচডি গবেষক নারীরই তো বিয়ে হয়ে যায় মাস্টর্সের পরপরই। তাহলে তিনি কি হলে থাকতে পারবেন না? তবে সব ভালো তার শেষ ভালো যার। দেরিতে হলেও এবং জল অনেক ঘোলা করে এমনকি লিগ্যাল নোটিশ ইস্যু হওয়র পর টনক নড়েছে। ঢাবির প্রভোস্ট কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হলে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বাদের থাকার ক্ষেত্রে যে বিধি নিষেধ ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকতে আর বাধা নেই।’

আরও জানিয়েছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে মা ও সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের পরিবারের কাছে থাকা ভালো। সেটা তো সকলেই মনে করে। কিন্তু যাদের সে উপায় নেই। যারা বাধ্য হয়ে থাকছেন তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য হলগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা কি একান্তই অসম্ভব?

লেখক: কবি, সাংবাদিক, কলামিস্ট।

সান নিউজ/এফএইচপি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মুশফিক-শান্তর সেঞ্চুরি; গলে বাংলাদেশের দিন

গলে অনেক সুখস্মৃতির পাশাপাশি হতাশার রেকর্ডও আছে বাংলাদেশের। গল টেস্টের প্রথম...

ইডেন কলেজের পুকুরের পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের পুকুরের পানিতে সাঁতার শিখতে গিয়ে ডুবে সানজিদা আক্ত...

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কার টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা

পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট...

ইরান ট্রাম্পকে হত্যা করতে চেয়েছিল, দাবি নেতানিয়াহুর

ইরানের শাসকগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাদের সবচেয়ে ব...

বাংলাদেশের আলিফ এশিয়ান আরচ্যারির ফাইনালে

সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপ আরচ্যারি স্টেজ-২ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের আলিফ...

বগুড়ায় সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে সভা অনুষ্ঠিত

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু বলেছেন,শহ...

মুশফিক-শান্তর সেঞ্চুরি; গলে বাংলাদেশের দিন

গলে অনেক সুখস্মৃতির পাশাপাশি হতাশার রেকর্ডও আছে বাংলাদেশের। গল টেস্টের প্রথম...

রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই

রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম (৯৩) আর বেঁচে নাই। মঙ্গলবার(১৭ জুন) ভোর...

মোসাদ-এর সদরদপ্তরে হামলার দাবি ইরানের

মোসাদ-এর সদরদপ্তরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবা...

‘মি. ট্রাম্প, আমরা কারা জানতে চাইলে কারবালার ইতিহাস পড়ুন’- ইরান মিলিটারি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বার্তা ছড়িয়ে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা