ঐতিহ্য ও কৃষ্টি

‘অরণ্য নগরী’

ফিচার ডেস্ক: ইট পাথরের শহরে বুক ভরে শ্বাস নেয়ার উপায় নেই। সারাবিশ্বে একই অবস্থা। বন জংগল উজাড় করে তৈরি হচ্ছে আবাসিক ভবন, শপিংমল, অফিস। এ থেকে বাঁচতে এবং পরিবেশ রক্ষায় কৃত্রিম উপায় বের করছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো।

সেই ধারাবাহিকতায় এবার টাটকা অক্সিজেনে ভরপুর এক শহর বানাচ্ছে সিঙ্গাপুর। যার নাম দিয়েছে ‘অরণ্য নগরী’। নাগরিক আরামের সঙ্গে কোনো আপস না করেই সেই শহরে থাকবে গহীন অরণ্যে প্রকৃতির কোল ঘেঁষে থাকার ব্যবস্থা।

নামে শহর ঠিকই। আদতে জঙ্গল তৈরি হচ্ছে কৃত্রিমভাবে। আবার নাগরিক সব সুবিধাও থাকবে। নিষিদ্ধ এসি,থাকছে না কোনো যান্ত্রিক গাড়ি,শব্দদূষণ বা কারখানার ধোঁয়া। যেদিকে তাকাবেন, সবুজ ঘন জঙ্গল। এমন এক স্বপ্নপুরী বানাচ্ছে সিঙ্গাপুর।

যেখানে মেইন রোডটাও কিনা থাকছে মাটির তলায়! চোখ খুললেই সবুজ। কানে প্রকৃতির শব্দ। গাড়ির ধোঁয়া, হর্নের আওয়াজ, যানজটের মতো সমস্যাকে জীবন থেকে অনায়াসে বাদ দিতে পারবেন নাগরিকরা। কারণ অরণ্য নগরে থাকবে ট্রাফিকমুক্ত রাস্তাঘাট।

যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্ত থাকবে এই শহর

ট্রাফিক মুক্ত! তবে কি এই শহর বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো? যান চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে না? তা নয়। গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে। তবে পুরোটাই হবে মাটির নীচে। মাটির উপরে, সবুজ বনবীথিতে শুধু সাইকেলে অথবা হেঁটে ঘুরে বেড়াতে পারবেন বাসিন্দারা।

নাম 'ফরেস্ট টাউন' বা 'অরণ্য নগরী'। তবে এই প্রকল্পের আরও একটি নাম আছে। 'দ্য তেনগা প্রজেক্ট'। সিঙ্গাপুরের প্রথম স্মার্ট এবং দীর্ঘস্থায়ী শহর হতে চলেছে এই তেনগা।

সিঙ্গাপুরের পশ্চিমের যে এলাকায় এই নগর গড়ে উঠছে এক সময়ে সেখানে সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হত। ছিল একটি বড় ইটভাঁটাও। আর তার লাগোয়া বিস্তৃত তেনগা অরণ্য। তবে তেনগার অরণ্য নগরী সবুজায়নের লক্ষ্যে সবুজকেই ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তেনগার বিশাল অরণ্যভূমির উপরেই গড়ে উঠছে অরণ্য নগরী। কাটা হচ্ছে প্রচুর গাছ।

মাটির উপরে, সবুজ বনবীথিতে এক স্বপ্নপুরী বানাচ্ছে সিঙ্গাপুর

সিঙ্গাপুরের বন সংরক্ষণ আন্দোলনকারীরা এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, তেনগায় যে সবুজ শহর গড়ার কথা ভাবা হচ্ছে, তা আদতে সাধারণ মানুষের জন্য একটি নিষিদ্ধ শহরে পরিণত হতে চলেছে। তেনগা অরণ্য শহরে পরিণত হওয়ার আগে তেনগা অরণ্যে শেষ বারের মতো সফরে গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরের বনপ্রেমীরা।

ওই সফরকে ‘তেনগাকে বিদায় জানানোর সফর’ বলে চিহ্নিত করেন তারা। তাদের প্রশ্ন- অরণ্য জীবনের এই সুযোগ শুধু বিত্তবানরাই পাবেন কেন? কেন সাধারণ জনগণ এই শহরে থাকার সুবিধা পাবেন না?

অরণ্যপ্রেমীদের মতে, অরণ্য ধ্বংস করে আধুনিক সুযোগ সুবিধার যে ব্যবস্থা এই শহরে থাকবে, তাতে খরচ হবে প্রচুর। সাধারণ নাগরিকের পক্ষে সেই খরচের নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়। তাই সাধারণ মানুষের ওই নগরে বাস করার সুযোগ থাকবে না।

৭০০ হেক্টর জমির উপর ৫টি বাসযোগ্য ডিস্ট্রিক্ট নিয়ে তৈরি এই শহরে ঠাঁই পাবে ৪২ হাজার বাড়ি। নতুন অরণ্য নগরীতে যে ৫টি বাসযোগ্য ডিস্ট্রিক্ট থাকবে, তাদের নাম হবে- গার্ডেন, পার্ক, ব্রিকল্যান্ড, ফরেস্ট হিল এবং প্ল্যান্টেশন। এই ৫টি এলাকার পরিকল্পনা করা হয়েছে নাগরিকদের সুস্থ জীবন যাপনের কথা মাথায় রেখে।

শুধু সাইকেলে অথবা হেঁটে ঘুরে বেড়াতে পারবেন এখানকার বাসিন্দারা

এমনকি এই শহরের বাসিন্দাদের জীবিকাবৃত্তির জায়গাও হবে শহরেরই লাগোয়া ২টি আলাদা ডিস্ট্রিক্টে। পরিকাঠামো সংক্রান্ত কাজের জায়গা হবে জুরং ইনোভেশন ডিস্ট্রিক্টে। আর শহরের বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে জুরং লেক ডিস্ট্রিক্টকে।

অরণ্য নগরীর মাঝ বরাবর থাকবে ১০০ মিটার চওড়া বনভাগ। যা শহরের এক প্রান্তে থাকা জলাধারকে জুড়বে অন্য প্রান্তের প্রকৃতি সংরক্ষণ ক্ষেত্রের সঙ্গে। এই বনভাগে থাকবে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ব্যবস্থা। নাগরিকদের প্রমোদ ভ্রমণের ব্যবস্থাও থাকবে এখানেই।

স্মার্ট সিটি ইন্ডেক্স-এ এই বছরেও বিশ্বে সবার প্রথমে রয়েছে সিঙ্গাপুর। ‘এশিয়ার সবুজতম শহর’ বলে খ্যাতিও আছে সিঙ্গাপুরের। তবে সিঙ্গাপুরের তেনগা স্মার্ট শহরে হাওয়াও বইবে পরিকল্পনা অনুযায়ী।

দেশের আবাসন এবং উন্নয়ন বিষয়ে তত্ত্বাবধানকারী বোর্ড জানিয়েছে, কম্পিউটারের সাহায্যে শহরটির প্রতিটি বাড়ি এমন ভাবে তৈরি করা হবে, যাতে হাওয়ার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর তার সাহায্যেই কমানো যাবে তাপমাত্রাও।

এই শহরে প্রকৃতির কোলে বাস হবে আপনার

স্মার্ট শহরের আলোও হবে স্মার্ট। জনমানবহীন এলাকায় নিজে থেকেই নিভে যাবে স্মার্ট লাইট। ফলে কমবে বিদ্যুতের ব্যবহার। সিঙ্গাপুরে মোট বিদ্যুৎ নির্বাহের এক তৃতীয়াংশই খরচ হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে। তবে অরণ্য নগরীর বিদ্যুতের এই খরচ কমানো যাবে।

আবাসন এবং উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গোটা শহরে একটিই কেন্দ্রীয় তাপ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবস্থা থাকবে। যা শহরের প্রতিটি বাড়ির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে। আলাদা আলাদা ভাবে বাতানুকূল ব্যবস্থা করার থেকে অনেক কম বিদ্যুৎ খরচ হবে এতে।

অরণ্য নগরীর বর্জ্য সংগ্রহেও রয়েছে বিশেষত্ব। দূষণ প্রতিরোধে এখানে থাকবে স্বয়ংক্রিয় বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা। প্রতিটি বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ হয়ে তা এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হবে মাটির নীচে। বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে তেনগাকে স্মার্ট এনার্জি শহর বানানোরও পরিকল্পনা রয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে একটি সফটওয়্যার চালিত প্রক্রিয়া কার্যকর করার কথা ভাবা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় একটি অ্যাপের সাহায্যে নাগরিকরা তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের হিসাব দেখতে পারবেন। তা নিয়ন্ত্রণ করতেও পারবেন।

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ঘূর্ণিঝড় নিয়ে যা জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি...

লুটপাটের ভিডিও করায় সাংবাদিককে হেনস্তা 

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধ...

নিহত যুবদল নেতার পরিবারের পাশে তারেক রহমান

বগুড়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত যুবদল নেতা রাহুল সরকারের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়...

ফিলিস্তিনের জলসীমায় ইসরায়েলের কোনো কর্তৃত্ব নেই

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ওপর ইসরায়েলের 'আক্রমণ ও আগ্রাসনের' নিন্দা জা...

দুর্ব্যবহারের কারণে এনসিপির সংবাদ সম্মেলন বর্জন

রাজধানী ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্য...

শাপলা নয় এনসিপিকে বালতি-বেগুনসহ ৫০ প্রতীকের অপশন

শাপলা প্রতীক নয় বরং বেগুন, বালতিসহ ৫০টি প্রতীক থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এন...

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৯৬

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এইডস ম...

আ. লীগের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজ...

লুটপাটের ভিডিও করায় সাংবাদিককে হেনস্তা 

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধ...

গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক, নিরাপত্তার দাবি জামায়াতের

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করার ঘটনায় ইসরায়েলের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার তীব্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা