ঐতিহ্য ও কৃষ্টি

পিটার দ্য গ্রেট, প্রভাবশালী জার

আলিম আল রশিদ

পিটার দ্য গ্রেট রাশিয়ার জার রাজবংশে খুব প্রভাবশালী ছিলেন। ১৬৭২ সালের ৯ জুন মস্কোয় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা ছিলেন জার আলেক্সিস। এবং মা আলেক্সিসের দ্বিতীয় স্ত্রী নাতালিয়া নারিশকিনা৷ তাদের একমাত্র সন্তান পিটার৷ চার বছর বয়সে বাবা মারা যান৷

আগের স্ত্রীর তেরো সন্তান ছিলো আলেক্সিসের৷ ফলে ক্ষমতায় বসা নিয়ে তাদের মধ্যে চরম সমস্যার সৃষ্টি হয়৷ তাই প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে থাকতে হয় পিটারকে৷ সেইসময় অন্তরবর্তীকালীন শাসক ছিলেন তার সৎ বোন সোফিয়া৷

১৬৮৯ সালে সোফিয়া ক্ষমতাচ্যুত হলে পিটারের ক্ষমতায় বসার পথ পরিষ্কার হয়ে যায়৷

রাশিয়ান জারদের মধ্যে পিটার দ্য গ্রেটকে সবচেয়ে ক্ষমতাসীনদের অন্যতম মনে করা হয়৷ তার পশ্চিমাকরণের নীতির ফলেই রাশিয়া একসময় বৃহৎশক্তিতে পরিণত হয়৷

রাশিয়া সেইসময় সবকিছুতে পশ্চিমাদের চেয়ে কয়েক শতাব্দী পিছিয়ে ছিলো৷ শহর ছিলো খুব অল্প৷ কৃষকরা ছিলো ক্রীতদাসের মতো, আইনের অধিকার বলে কিছুই ছিলো না সাধারণ মানুষের৷

ধর্ম বলেও প্রায় কিছুই ছিলে না দেশে, শিক্ষা দীক্ষার অবস্থাও তাই৷ পশ্চিমে নিউটন যখন তার প্রিন্সিপিয়া লেখেন, তখনো মধ্যযুগীয় অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবেছিলো পুরোপুরি রাশিয়া৷

১৬৯৭-৯৮ খ্রিস্টাব্দে পিটার দীর্ঘসফরে পশ্চিম ইউরোপ যান৷ তার সঙ্গে ছিলো ‘গ্র্যান্ড অ্যাম্বাসির আড়াইশ সদস্য৷ সেই সফরের সময় হল্যান্ডের ডাচ-ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন পিটার। তারপর ইংল্যান্ডের নেভি ডকইয়ার্ডেও কাজ করেন তিনি।

প্রম্নশিয়ায় গানারির ওপর পড়াশোনা করেন৷ ফ্যাক্টরি, স্কুল, জাদুঘর পরিদর্শন করেন, এমনকি ইংল্যান্ডের এক পার্লামেন্ট অধিবেশনেও যোগ দেন৷ পশ্চিমা সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, কলকারখানা ও প্রশাসনিক নিয়ম-কানুন দেখে প্রভাবিত হন পিটার৷

১৬৯৮ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে দেশকে পশ্চিমের ধাঁচে আধুনিক করে গড়ে তোলার দীর্ঘকার্যক্রমে হাত দেন৷ ফল হয় অবিশ্বাস্য৷ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটতে থাকে রাশিয়ার৷ তিনিই প্রথম জুলিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। রাশিয়ার প্রথম সংবাদপত্র তার সময়ই প্রকাশিত হয়৷

তার সময় তুরস্ক ও সুইডেনের সঙ্গে যুদ্ধ বাধে রাশিয়ার৷ ১৭০৯ সালে পলটাভায় সুইডিশরা পরাজিত হয়, ফলে এসতোনিয়া, লাটভিয়াসহ ফিনল্যান্ডের কাছের বড় অংশ রাশিয়ার দখলে আসে।

শেষের অংশটিতে বড় এক নদী নেভার তীরে, নতুন শহর গড়ে তোলেন পিটার, শহরটির নাম সেন্ট পিটার্সবার্গ৷ রাশিয়ার নতুন রাজধানী হয় শহরটি। ১৭১২ সালে অবশ্য রাজধানী আবার মস্কোতে স্থানান্তরিত হয়৷

পিটারের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিলো অত্যন্ত পরিকল্পিত ও ব্যয়বহুল৷ ফলে অনেক বেশি করের বোঝা বইতে হয় দেশবাসীকে৷ এর বিরুদ্ধে অসন্তোষ ও বেশকিছু বিদ্রোহের ঘটনাও ঘটে৷ সেসব কঠোর হাতে দমন করেন পিটার৷ তার আমলে তার বিরুদ্ধে অনেকেই থাকলেও বর্তমানে রাশিয়া ও পশ্চিমা ঐতিহাসিকদের সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন যে,জারদের মধ্যে পিটারই ছিলেন সবার সেরা৷

৬ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার দীর্ঘদেহী মানুষ ছিলেন পিটার৷ শক্তিশালী ও সুদর্শন ছিলেন৷ রাজনৈতিক ও সামরিক বিষয়ে জ্ঞান অর্জন ছাড়াও কার্পেন্ট্রি, পেইন্টিং, নেভিগেশন ও জাহাজ নির্মাণ সম্পর্কে ভালো পড়াশোনা ছিল তার৷

দুই বিয়ে করেন পিটার৷ সতেরো বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন ইউডোক্সিয়া নামের এক তরুণীকে৷ মাত্র এক সপ্তাহ একসঙ্গে ছিলেন তারা৷ ১৭১২ সালে ইউডোক্সিয়ার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে৷ এরপর ক্যাথেরিন নামে এক লিথুয়ানিয়ান মেয়েকে বিয়ে করেন৷

ইউডোক্সিয়ার গর্ভে তার এক ছেলের জন্ম হয়৷ তার নাম আলেক্সিস৷ কিন্তু বাপ-ছেলের সম্পর্ক ভালো ছিলো না৷ ১৭১৮ সালে আলেক্সিস পিটারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়৷ পরে নির্যাতনের ফলে কারাগারে তার মৃত্যু ঘটে৷

১৭২৫ খ্রিস্টাব্দে ৫২ বছর বয়সে সেন্ট পিটার্সবার্গে মারা যান পিটার দ্য গ্রেট৷ তার স্থলাভিষিক্ত হন দ্বিতীয় স্ত্রী ক্যাথেরিন৷ পিটার এমন এক শাসক ছিলেন, যিনি জ্ঞানে-বুদ্ধিতে তার সময়ের চেয়ে আধুনিক ও অগ্রগামী ছিলেন৷ তার সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই পশ্চিমাদের মতো রাশিয়ানদের দ্রুত উন্নতি সাধন সম্ভব হয়৷

আজ পিটার দ্য গ্রেটের জন্মদিন। এই দিনে তাকে গভীর শ্রদ্ধা।

সান নিউজ/এম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বোয়ালমারীতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীব...

প্রবাসীর বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ, ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুট

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে ককটেল বিস্ফোরণ ও আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর...

ইবিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিব...

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিহত সবুজের বাড়িতে শোকের মাতম

সুদানে জাতিসংঘের (ইউএন) শান্তিরক্ষা মিশনের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ছয় ব...

উলিপুরে সাংবাদিকদের সাথে এনসিপি মনোনীত প্রার্থীর মতবিনিময়

নির্বাচিত হই বা না হই, আমার সামাজিক, উন্নয়নমূলক এবং মানবিক কার্যক্রম ব্যক্তিগ...

অভিমান ভুলে ঐক্যবদ্ধ মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের বিএনপি নেতাকর্মীরা

দলের অভ্যন্তরীণ বিভেদ ও মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলীয় ঐক্যের স...

সাদিক কায়েমের নেতৃত্বে ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা

হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের গ্রেপ্তার, দেশব্যাপী অভিযান চালিয়ে সব অব...

ওসমান হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

শরিফ ওসমান বিন হাদিকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দ...

গরুর সঙ্গে শত্রুতা: গোয়ালঘরে কৃষকের গরু জবাই করলো দুর্বৃত্তরা

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে রাতের অন্ধকারে এক কৃষকের দুটি গরু গোয়ালঘরে জবাই করে...

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিহত সবুজের বাড়িতে শোকের মাতম

সুদানে জাতিসংঘের (ইউএন) শান্তিরক্ষা মিশনের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ছয় ব...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা