স্বাস্থ্য

চট্টগ্রামের হাসপাতালে হাহাকার

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রামে শনাক্ত ও মৃত্যুতে প্রতিদিনই রেকর্ড গড়ছে করোনা। এর মূলে স্বাস্থ্যবিধি না মানা। কঠোর লকডাউনেও করোনাকে থোরাই কেয়ার করছেন চট্টগ্রামের মানুষ। ফলে বেসামাল হয়ে উঠেছে করোনাও। গত বছর মার্চ মাসে চট্টগ্রামে যখন করোনা হানা দেয় তখনও এমন পরিস্থিতি ছিল না।

করোনার ভয়ে তখন অনেকেই নিজ থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে চলে গিয়েছিল। বাকিদের ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। লকডাউনে তখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত সবকিছুই বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল গণপরিবহন। খেটে খাওয়া মানুষও ঘর থেকে তেমন বের হয়নি।

আর এখন লকডাউনের পুরো চিত্রটাই উল্টো। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুরোদমে খোলা, চলছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। মহানগরে এবং দুরপাল্লার গণপরিবহণও চলছে নানা কৌশলে। স্বাস্থবিধি মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা কোথাও মিলছে না। নেই আইনের কঠোর প্রয়োগও।

যার ফলে দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনা। পরিণতি হিসেবে বাড়ছে মৃত্যু। এরমধ্যেও একটু বাচার আশায় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য চলছে হাহাকার। চরম এই বাস্তবতাকে স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের করোনা পরিস্থিতি সত্যি ভালো নয়। মানুষ কোনো বিধিনিষেধ মানছে না। অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।

সর্বশেষ সোমবার (১২ জুলাই) চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদিন ২ হাজার ১৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৭.৭৬। সেই সাথে মারা গেছে ৯ জন। রোববার ২ হাজার ৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭০৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার ৩৪.০৫। সেই সাথে ১৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে।

তিনি বলেন, জুলাই মাসের ১২দিনে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ১০৫ জন। একই সময়ে করোনায় মারা গেছেন ৭৯ জন। অথচ গত জুন মাসে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছিল ৫ হাজার ২৫৯ জন। মারা যায় ৭৯ জন। অর্থাৎ জুলাই মাসে এসে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণ। কিন্তু মৃত্যুর কারণ হাসপাতালে অপর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা। করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি মানায় যেমন ব্যর্থতা রয়েছে। তেমনি আক্রান্তের তুলনায় হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর্যাপ্ত শয্যা পর্যন্ত নেই। আইসিইউ যেন সোনার হরিণ। রয়েছে হাই-ফ্লো ন্যাজালসহ নানা উপকরণ সংকট।

এদিকে আইসিইউ না পেয়ে গত শনিবার (১০ জুলাই) বিকেলে মারা যান নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ডি-ব্লকের বাসিন্দা হাজী দৌলতুর রহমান (৭২)। তার ছেলে ফারুক রশীদ জানান, গত বৃহস্পতিবার করোনা পজিটিভ হন তার বাবা। এরপর শুক্রবার হঠাৎ শ^াসকষ্ট শুরু হলে তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করা হয়। কারণ তার আইসিইউ জরুরী ছিল। কিন্তু শয্যা সংকটের কারণে তাকে ভর্তি করানো হয়নি। শনিবার বিকেলে তিনি মারা যান।

নগরীর সল্টগোলা ক্রসিং এলাকার বাসিন্দা মো. মহিউদ্দিন জানান, গত কয়েকদিন ধরে জ¦র ও অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই তাকে করোনার চিকিৎসা দেন চিকিৎসক। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঘরে থেকে চিকিৎসা নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন।

তাদের মতে, চট্টগ্রামে এমন অসংখ্য লোক করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে গেলেও নমুনা টেস্ট ছাড়াই চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন। করোনা পজিটিভ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করা হলে শয্যা খালি নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। তাদের অনেকেই সংকটাপন্ন অবস্থায় মারাও গেছেন।

শয্যা সংকটের কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. আবদুর রব বলেন, চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত প্রতি ১০০ জনে ৩০ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন। সে হিসেবে প্রতিদিন ১৮০-২০০জন করোনা আক্রান্তের আইসিইউ প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা আছে মাত্র ১৮টি। ২০০ সাধারণ শয্যার সবকটিতে করোনা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

চমেক হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা আছে ১০টি। ২০০টি কোভিড শয্যার একটিও খালি নেই। সরকারি বিআইটিআইডি হাসপাতালেও ৫০ শয্যার একটিও খালি নেই। সবগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা চলছে।

বেসরকারি চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ৯২টি কোভিড শয্যা রয়েছে। এরমধ্যে ১৬টি আইসিইউ এবং এইচডিইউ শয্যা। এসব শয্যার বাইরে ৯৫ জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে অতিরিক্ত শয্যা ব্যবহার করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. আবু সাঈদ।

তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিনই অনেক করোনা আক্রান্ত রোগী আসছে। কিন্তু আমরা তাদের শয্যা বা আইসিইউ দিতে পারছি না। চিকিৎসার অভাবে অনেক করোনা আক্রান্ত রোগী চোখের সামনে মারা যাচ্ছে। এ নিয়ে আমরা খুবই ব্যথিত।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ন কবীর বলেন, চট্টগ্রামে এবার বয়স্কদের সাথে তরুণেরাও আক্রান্ত হচ্ছে। রোগীও প্রতিদিন বাড়ছে। কিন্তু শয্যা খালি না থাকায় রোগী ভর্তি নেওয়া যাচ্ছে না। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে আমরা রোগীদের সুস্থ করার চেষ্টা করছি।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, হাসপাতালে আগে যেখানে প্রতিদিন দেড় হাজার লিটার অক্সিজেন লাগতো, বর্তমানে সেখানে সাড়ে তিন হাজার লিটার অক্সিজেন লাগে। আইসিইউ সাপোর্টও আগের চেয়ে বেশি লাগছে। কিন্তু আইসিইউ বেড তো বাড়েনি। আবার করোনা-পরবর্তী নানা জটিলতায় কোনো রোগী মারা যাচ্ছে। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা আছে ২৬টিতে। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আছে ১৭১টি। এরমধ্যে সরকারি হাসপাতালে আছে ৪৭টি। ৮০টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের মধ্যে সরকারিতে রয়েছে ৫৬টি।

উল্লেখ্য, গত বছর মার্চ মাসে চট্টগ্রামে প্রথম এক ব্যক্তি করোনা শনাক্ত হন। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৮২৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৫০ হাজার ৬৬১ জন নগরের ও ১৫ হাজার ১৬৮ জন উপজেলার বাসিন্দা। আর এ পর্যন্ত মোট ৭৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৫০০ জন নগরের ও ২৮০ জন উপজেলার বাসিন্দা।

সান নিউজ/

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আজ বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ...

কাতারের সঙ্গে ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও কাতা...

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে দুই জেলের লাশ উদ্ধার 

জেলা প্রতিনিধি: কক্সবাজার জেলার চ...

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা