ফিচার

মোতালেবের সৌদি খেজুর বাগান, বছরে বিক্রি কোটি টাকা

সাজ্জাদুল আলম খান, ভালুকা (ময়মনসিংহ): বাংলাদেশের মাটি যে সোনাফলা সেটা ভালোই উপলব্ধি করেছিলেন আব্দুল মোতালেব। তাই সাহস করেছিলেন মরুর দেশের খেজুর বীজ এনে দেশে ফলানোর। ময়মনসিংহের ভালুকার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামের এই মানুষটি শুধু সুস্বাদু ও মিষ্টি খেজুরই ফলাননি, মাত্র সাতটি গাছ থেকে হাজার হাজার চারা তৈরি করে ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বিদেশের মোহ ছেড়ে দেশে এসে হয়েছেন কোটি টাকার মালিক।

আরও পড়ুন: বিশ্বে একদিনে করোনায় আক্রান্ত ১৬ লাখ

অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন আব্দুল মোতালেব। ১০ হাজার টাকা বেতনে খেজুর বাগানে চাকরি নিয়েছিলেন। চাষাবাদ রপ্ত করে তিন বছরের মাথায় দেশে ফেরেন। সঙ্গে আনেন খেজুরের বীজ। বাগান করে কয়েক বছরের মধ্যে বদলে ফেলেন ভাগ্য। এখন বছরে কোটি টাকার চারা ও খেজুর বিক্রি করেন তিনি।

আব্দুল মোতালেব (৫৪) ময়মনসিংহের ভালুকার পাড়াগাঁও গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি সফল উদ্যোক্তা। সবাই তাকে ‘খেজুর মোতালেব’ বলে ডাকেন।

মোতালেব বলেন, ‘দেশে ফিরে আমার বাড়ির পাশে একটি জমিতে খেজুরের চারা রোপন করি। কিন্তু প্রায় সব গাছই পুরুষ হয়ে যাওয়ায় খেজুর হয়নি। আবার গাছ লাগালে আবারও একই অবস্থা। তৃতীয় দফায় আমি সফল হই। এবার দুটি গাছে খেজুর হয়। সেই দুই গাছ থেকে আজ প্রায় ১২’শ চারা উৎপাদন করেছি। বর্তমানে প্রায় ১শ টি গাছে খেজুর ধরেছে। চলতি বছর ৫ লাখ টাকার খেজুর বিক্রি করেছি।’

কোনো কিছুতে সহজে হাল না ছাড়া মোতালেব বলেন, ‘লোকে বিদেশে গেলে স্যুটকেস-ভর্তি জিনিস নিয়ে আসে, আর আমি এনেছিলাম খেজুর। দেশের মানুষ হাসাহাসি করতো, পাগল বলতো। আমার দেওয়া বীজ থেকে ২৭৫টি চারা বের হয়। চারাগুলো সাইজ করে লাগাইনি। তিন বছর তো বেশি সময় না, মুকুল এলে চারা লাগাবো। শুরু করি ২০০১ সালে। ১৭ মাস পর একদিন আমার বউ এসে বললো-তোমার গাছে মুকুল আইছে। আমি তো বিশ্বাসই করিনি। পরে বাজি ধরে গিয়ে দেখি সত্যি মুকুল বের হয়েছে, কিন্তু পুরুষ। তখন একটা সাহস এলো পুরুষ মুকুল যখন আসছে তখন মেয়েও হবে। সেটা চৈত্র মাসের ১৭ তারিখ ছিল। বৈশাখে একটা এলো সেটাও পুরুষ। পরের বছর পাঁচটা, তারপরের বছর সাতটা, তার পরেরবার নয়টা গাছে মুকুল এলো, সবগুলো পুরুষ। তবুও হতাশ হইনি। তবে টেনশন বাড়ছিল।’

আরও পড়ুন: হবিগঞ্জে বাস-ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ৪

তিনি আরও বলেন, ‘হাল ছাড়ছিলাম না। পরের বছর ১১টা গাছের মধ্যে একটা গাছে মেয়ে মুকুল এলো। তুলে আলাদা করে লাগালাম। এই গাছটাই শাইখ সিরাজের নামে রাখলাম। আজোয়া গাছ। এটাই বাংলাদেশে প্রথম সৌদি খেজুর গাছ। প্রতি বছর উনি আসেন একবার। ওনার কাছে অনেক ঋণ আছে বলেই এটা ওনার নামে রেখেছি।’

মোতালেব বলেন, ‘এখন আমি কাটিং জানি। নারী গাছগুলো থেকে গজানো চারা নারীই হয়। সেগুলো পুরুষ গাছে কাটিং করে বসানো যায়। এটা সারা বাংলাদেশে আমার মতো কেউ পারে না। আমার সব গাছ কাটিং করে মেয়ে বানাইছি।’

আরও পড়ুন: মাদকবিরোধী অভিযানে আটক ৫৮

চারা বিক্রির টাকায় তিনি বাগানের উন্নয়নসহ সংসারের নানা চাহিদা পুরণে সমর্থ হন। তিনি জানান, ছোট আকৃতির প্রতিটি চারা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, ফলধারক একটি গাছ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। তার বাগানে বর্তমানে ১২ শ ছোটবড় গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৭০/৮০ টি গাছে এ বছর খেজুর ধরেছে। প্রতিটি পুর্ণ বয়স্ক গাছে ১২ থেকে ১৩ টি কাঁধি হয়। প্রতিটি কাঁধিতে ১০ থেকে ১২ কেজি খেজুর পাওয়া যায়। আজুয়া জাতের খেজুর প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা, আমবাগ প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা, সুকারী ১ হাজার ৫শ টাকা, বরকি ১ হাজার ৫শ টাকা কেজি বিক্রি হয়। তিনি এক সময় স্ত্রী সন্তান নিয়ে মাটির ঘরে বসবাস করতেন। খেজুর বাগান হতে আয়কৃত টাকায় তিনি দ্বিতল বিল্ডিং বাড়ি করেছেন, ৬ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। যার মূল্য বর্তমানে কোটি টাকার উপরে। তার সাফল্যের জন্য স্ত্রী মজিদা আক্তার সমান অংশীদার।

আজওয়া, ছুক্কারী, আমবাগ, বারহী এবং বকরী জাতের সৌদি খেজুরের মতোই মোতালেবের বাগানের খেজুরের আকার ও স্বাদ। বাজারে এর চাহিদাও বেশ। মোতালেবের বাগানের প্রতি কেজি খেজুর বিক্রি হয় ১ থেকে ২ হাজার টাকা। আর বীজ থেকে পাওয়া চারার দাম কম থাকলেও কলমের চারা বিক্রি হয় সর্বোচ্চ কোটি টাকা পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: শরণখোলায় দুটি হরিণের চামড়া জব্দ

বড় গাছ অর্থাৎ ১৫-২০ বছর বয়সী সব গাছের জন্য চারপাশ দিয়ে মই আকারে বানিয়েছেন লোহার খাঁচা। খেজুর পাড়া, গাছের পরিচর্যা করতে এতে সুবিধা হয়। বানাতে খরচও হয়ে ২০-৩০ হাজার টাকা করে। আর পরিচর্যাও করা লাগে নিয়মিত। পরিষ্কার করা লাগে নিয়মিত। এছাড়া এখন তার কোনো খরচ নেই।

তার বাগানে কর্মচারী আছে ১৫ জন। সারা বছর কাজ করে। একেকজনের মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়া লাগে। বাগান করতে গিয়ে ছয় বিঘা জমি বিক্রি করছিলেন। আবার কিনেছেন। এখন বছরে ৫০ লাখের মতো আয় হয় তার। আবার খরচও আছে। বাড়তি হিসেবে খেজুরের পাশাপাশি আদা ও কচু লাগান। এ থেকে বছরে আসে ১০-১২ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন: জাতীয় দলে ফিরলেন নেইমার

মোতালেব বলেন, ‘সরকারি সহযোগিতা পেলে গাছ বিক্রি না করে হাজার হাজার চারা বানাতাম। আরও কম দামে চারা বিক্রি করতাম। আগে দেড় লাখ টাকা বেচতাম। কয়েকশ লোক আমার কাছ থেকে চারা নিয়ে বাগান করছে। আমাদের দেশে খেজুর শুকানো কঠিন। মেঘ-বৃষ্টি বেশি। তাই কাঁচাই বিক্রি করি। খেজুর পেড়ে পাকা অবস্থায় ৬-৭ দিন লাগে শুকাতে।

উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল হবিরবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াগাও গ্রামে আব্দুল মোতালেবের বাড়িতে প্রতিদিনই দর্শণার্থীদের ভিড় থাকে উল্লেখযোগ‌্য সংখ‌্যক। সাধারণ একটি গ্রামে সৌদি খেজুরের বাগান দেখতে সব বয়সীদের আনাগোনা বেশ উপভোগও করছেন মোতালেব আর তার পরিবার।

সান নিউজ/এমকেএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভূঞাপুরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ফিরোজ চৌধুরী 

খায়রুল খন্দকার, টাঙ্গাইল: ২য় ধাপে...

জেলা প্রশাসকের গাড়ি ভাংচুর, যুবক আটক

মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদ, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:...

লক্ষ্মীপুরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে প্রার্থী আশরাফুল 

সোলাইমান ইসলাম নিশান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে গণসং...

দৌলতখানে ১৩ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল

দৌলতখান প্রতিনিধি: ভোলার দৌলতখান...

ভোলার ৩ উপজেলায় ৩৮ জনের মনোনয়ন দাখিল

ভোলা প্রতিনিধি: ২য় ধাপের উপজেলা প...

চতুর্থ ধাপের ভোটগ্রহণ ৫ জুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ষষ্ঠ উপজেলা পরি...

বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ আহ্বান রাষ্ট্রপতির

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড)...

পদ্মায় গোসলে নেমে ৩ কিশোরের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে পদ্মা...

রাজধানীতে হিট স্ট্রোকে পথচারীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর গুলিস্তানে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাও...

আ’লীগের শান্তি সমাবেশ স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ২৬ এপ্রিল রাজধানীতে শান্তি ও উন্নয়ন...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা