শিক্ষা

১২শ বিদ্যালয়ে আবেদন করেও মেলেনি চাকরি

নিজস্ব প্রতিবেদক: নবম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করেন নরসিংদীর মনোহরদীর শাহনাজ পারভীন। গত ৩০ মার্চ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে ১ হাজার ২০০টি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে আবেদন করেন তিনি। তাঁর বেসরকারি কলেজেও নিবন্ধন থাকায় ১৯টি কলেজে আবেদন করেন। মোট ১ হাজার ২১৯টি বিদ্যালয়-কলেজের আবেদন ফি, কম্পিউটার দোকানের খরচসহ সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু কোথাও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাননি শাহনাজ পারভীন।

শাহনাজ পারভীনের বাবা নেই। তাঁরা পাঁচ ভাইবোন। তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ৩৬ বছর বয়সী শাহনাজ পারভীন বিয়ে করেননি। তিনি বলেন, ‘আমি বাবার বাড়িতে যে অংশ (সম্পত্তি) পাব, তা ভাইদের দিয়ে টাকা নিয়েছি। এখন আমার আর কিছু রইল না।’

৮ অক্টোবর দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন শাহনাজ পারভীন। যাঁরা আগে নিবন্ধন পেয়েছেন, তাঁদেরকে আগে নিয়োগ দেওয়ার দাবিতে ওই দিন ‘প্যানেলপ্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষক সংগঠন’ ব্যানারে আয়োজিত মানবন্ধনে অংশ নিতে এসেছিলেন তিনি।

এত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনের কারণ জানতে চাইলে শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘আমার সরকারি চাকরির বয়স পেরিয়ে গেছে। পরবর্তী সময়ে এনটিআরসিএতেও আমার আবেদনের সুযোগ না-ও থাকতে পারে। এবার আমার বিষয়ে উচ্চবিদ্যালয়ে ১ হাজার ৫০০টি পদ ছিলো। এই নিয়োগের পর হয়তো আর পদ না-ও থাকতে পারে। আমি চেয়েছিলাম, বাংলার যে প্রান্তেই একটা পদ ফাঁকা থাকুক, সেটা যেন আমার হয়। একটা চাকরির আশায় এত টাকা খরচ করেছিলাম।’

অভিযোগ করে এই চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, দুই প্রতিষ্ঠানে সিট এখনো ফাঁকা। তারা বলেছে, সিট ফাঁকা, কিন্তু কেউ আবেদন করেননি। অথচ সেখানে তিনি আবেদন করেছিলেন। তাঁকে নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে এনটিআরসিএতে অভিযোগ করেছেন জানিয়ে শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘তারা এখনো আমাকে কিছু জানায়নি। এ ছাড়া নারী কোটায় সাড়ে ৮ হাজার পদ ফাঁকা ছিলো, আমি নারী ছিলাম, তা-ও আমাকে নেওয়া হয়নি।’

৮ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অর্ধশতাধিক বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পাওয়া এনটিআরসিএর সনদধারী চাকরিপ্রত্যাশী মানববন্ধনে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ছয়জনের সঙ্গে গণমাধ্যমের কর্মীদের কথা হয়। তাঁরা প্রত্যেকে জানান, শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন। এনটিআরসিএ একটি আবেদনের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হলে তাঁরা আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তেন না। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে এনটিআরসিএ।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান বলেন, আগে নিবন্ধন পরীক্ষা হতো, পাস করলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়োগ দিয়ে দিত। ২০১৫ সালের পর মেধার ভিত্তিতে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার পর থেকে বাছাইয়ের কাজটি হয় অটোমেশনের মাধ্যমে। আবেদনের কোনো সীমাবদ্ধতা না থাকায় যাঁরা খুব কম নম্বর পাওয়া, তাঁরা অনেকগুলো স্কুলে আবেদন করেন। কম নম্বর পেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করে নিয়োগ না-ও হতে পারে। তাঁরাও এত বেশি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে বলেন না।

৭০ নম্বর পেয়েও নিয়োগ পাননি শেরপুরের নালিতাবাড়ীর হাসিবা আফরিন। তিনি বলেন, ‘২৯৫টি উচ্চবিদ্যালয়ে আবেদন করতে গিয়ে আমার ৩৮ হাজার ৩৫০ টাকা খরচ হয়েছে। আমার স্বামী ধার করে এসব টাকা জোগাড় করেছেন। করোনার মধ্যে এমনিতেই আয়-রোজগার নেই। তার মধ্যে এত টাকা ধার করেছি। এখন কীভাবে শোধ করব, জানি না।’

মাদারীপুরের ঘটমাঝির মো. তাইজুল ইসলাম ৫২০টি উচ্চবিদ্যালয়ে আবেদন করেন। সব মিলিয়ে এতে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ৭২ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘একটি আবেদনের মাধ্যমে নিয়োগ হলে আমার এত টাকা খরচ হতো না।’

এ বিষয়ে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান বলেন, বিসিএসের মতো একটি আবেদনের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে কাজ করছেন তাঁরা। এখানে সমস্যা হলো, অনেকগুলো মামলা আছে, এসব জটিলতার কারণে পারা যায় না। তারপরও চেষ্টা করা হচ্ছে।

এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে এই প্রক্রিয়া শুরুর পর মোট ১৬টি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা হয়েছে। তার মধ্যে ১৫টি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে ৬ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি চাকরিপ্রত্যাশী নিবন্ধিত হয়েছেন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত এনটিআরসিএ নিয়োগের সুপারিশ না করায় তখন কত শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন, সেই তথ্য তাদের কাছে নেই। ২০১৫ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮৬ হাজার ২৮৯ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ।

নিবন্ধন পেয়েও চাকরি না হওয়া ব্যক্তিদের দাবি, প্রথমে যাঁরা নিবন্ধন পেয়েছেন, তাঁদের আগে নিয়োগ দিতে হবে। ইতিমধ্যে নিবন্ধনপ্রাপ্তদের নিয়োগ দেওয়া শেষ না করে নতুন করে নিবন্ধনের জন্য পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নতুন করে পরীক্ষার সুযোগ রাখা যাবে না এবং শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সান নিউজ/এফএআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত 

ভোলা প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহ থেকে...

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর গণসংযোগ

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ

সান নিউজ ডেস্ক: আজ বিশ্ব ম্যালেরি...

টঙ্গীবাড়ি ভাতিজারা পিটিয়ে মারলো চাচাকে

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

গরমে ত্বক ব্রণমুক্ত রাখতে যা খাবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গরমকাল এলেই ব্র...

মাকে গলা কেটে হত্যা করল ছেলে

জেলা প্রতিনিধি: বিয়ে না দেওয়ায় চা...

পঞ্চগড়ে দুই শিশুর মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে চাওয়াই নদীতে গোসল করতে নেমে আলমি আক্...

চারতলা থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

খায়রুল খন্দকার টাঙ্গাইল : টাঙ্গাই...

শনিবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না 

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাইপলাইনের কাজে...

ভারতীয় ৩ কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র স...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা