অপরাধ

আপিলের চার বছর আগেই ফাঁসি

নিজস্ব প্রতিবেদক: উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তির চার বছর আগেই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তথ্য মিলেছে। এ বিষয়ে জেলারের সুর ভিন্না। আইন অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই ২০১৭ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে দাবি তার।

মৃত্যুদণ্ডকালীন জেলার আবু তালেবের বক্তব্য জানা যায়নি।

বর্তমান জেলার তুহিন কান্তি খানের দাবি, দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের লিখিত আদেশ তাদের কাছে আছে। দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন, সেই নথিও তাদের কাছে।

তবে এই দাবির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উচ্চ আদালতে আট বছর আগে দুই আসামির মামলা পাওয়া আইনজীবী।

যাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তারা হলেন, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারি ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের আব্দুল মোকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ু।

১৯৯৪ সালের ২৮ জুন কুমারি ইউনিয়নের দুর্লভপুর এলাকার সাবেক মেম্বার মনোয়ার হোসেন খুন হন।

ওই ঘটনায় তার চাচাতো ভাই মো. অহিমউদ্দিন বাদী হয়ে ২৬ জনের নামে মামলা করেন। মামলার এজাহারে মোকিম ও ঝড়ুর নাম আসে।

২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এই মামলার বিচারে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড, দুজনকে যাবজ্জীবন ও অপর আসামিদের খালাস দেয় চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২। মৃত্যুদণ্ড পান একই ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, মোকিম ও ঝড়ু।

বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুসারে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে। মামলার ডেথ রেফারেন্স নম্বর ছিলো ৩৯/২০০৮। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই ও ৮ জুলাই মামলার রায় ঘোষণা করে। বাকি আসামিদের খালাস দেয়া হয়।

হাইকোর্টের রায়ের পরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে আরও তিনটি ধাপ বাকি থাকে। প্রথমত আপিল বিভাগে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করা যায়। সেখানেও নাকচ হলে রায় পুনর্বিবেচনা বা রিভিউয়ের সুযোগ থাকে।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর রাতে ফাঁসি কার্যকর হয় আব্দুল মোকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ুর। রিভিউয়েও রায় না পাল্টালে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ থাকে।

সেই বিধান অনুযায়ী এরপর ঝড়ু ও মোকিমের পক্ষ থেকে হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়।

আট বছর আগে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যে আবেদন করা হয়েছিলো, তার শুনানির তারিখ পরে বুধবার। কিন্তু শুনানির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে আইনজীবী হতবাক হয়ে যান। তিনি জানতে পারেন, আরও চার বছর আগেই দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে গেছে।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর রাতে আসামি দুজনের ফাঁসি হয় বলে তাদের স্বজনরা আইনজীবী হুমায়ন কবিরকে জানান।

এই আইনজীবী বলেন, হাইকোর্ট যখন তাদের ফাঁসির আদেশ দেয়, তখনই আমরা ২০১৩ সালে আপিল করে রাখি। দীর্ঘদিন পর বুধবার তালিকায় আসে মামলাটি। এটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ১১ নম্বরে আছে।

মামলাটি যখন তালিকায় আসে, তখন আমরা আসামির পরিবারকে খবর দিই। আসামি মোকিমের স্ত্রী এসে জানান, চার বছর আগেই ফাঁসি কার্যকর করেছে। তার আগে কারাগারে তারা শেষ সাক্ষাৎও করেছেন। ফাঁসি কার্যকরের পর লাশ এনে দাফনও করা হয়।

ঘটনাটি আপিলের দৃষ্টিতে এনেছিলেন কি না, এমন প্রশ্নে হুমায়ন কবির বলেন, বুধবার মামলাটি তালিকায় থাকলেও শুনানি হয়নি। যেদিন শুনানি হবে সেটি আদালতের দৃষ্টিতে বিষয়টি আনবো। ঘটনাটি যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই কারও না কারও ভুলে হয়েছে।

বিষয়টি বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য আবেদন জানাবেন বলে জানান এই আইনজীবী।

বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে আমি এখনও তেমন কিছু জানি না। না জেনে তো এ বিষয়ে বলা ঠিক হবে না।

ঘটনাটি নিয়ে উচ্চ আদালত থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের তথ্য মিলছে না।

জেলার তুহিন কান্তি বলেন, আমাদের কাছে যে ডকুমেন্টস আছে সেটা দেখতে পাচ্ছি সব ঠিক আছে। এখন কোথাও সমস্যা আছে কি না ঢাকা থেকে কাগজপত্র এলে বোঝা যাবে।

আপিল বিভাগে শুনানি হওয়ার আগে কীভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কাগজপত্র থাকবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপিল নিষ্পত্তির কপি ও রাষ্ট্রপতির নামঞ্জুরের কপি আমাদের কাছে আছে।’

কপিগুলো দেখতে চাইলে অবশ্য তিনি তা দেখাতে রাজি হননি।

জেলারের বক্তব্যের বিষয়ে আইনজীবী হুমায়ন কবির বলেন, আপিলের শুনানি হলে আমরা জানতাম। আমার জানামতে শুনানি হয়নি। যখন শুনানি হবে তখন বিস্তারিত বলবো। এ বিষয়ে আপাতত আর কথা বলতে চাচ্ছি না।

সান নিউজ/এফএআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মুশফিক-শান্তর সেঞ্চুরি; গলে বাংলাদেশের দিন

গলে অনেক সুখস্মৃতির পাশাপাশি হতাশার রেকর্ডও আছে বাংলাদেশের। গল টেস্টের প্রথম...

রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই

রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম (৯৩) আর বেঁচে নাই। মঙ্গলবার(১৭ জুন) ভোর...

বাংলাদেশের আলিফ এশিয়ান আরচ্যারির ফাইনালে

সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপ আরচ্যারি স্টেজ-২ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের আলিফ...

এনসিপির কর্মসূচি ঘোষণা; দেশব্যাপী পালনের নির্দেশ

দেশব্যাপী পালনের জন্য এনসিপির কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। জুলাই গণহত্যার বিচার,...

বগুড়ায় সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে সভা অনুষ্ঠিত

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু বলেছেন,শহ...

জিআই পণ্য হাড়িভাঙ্গা আম সংগ্রহ উৎসব ২০২৫- এর উদ্বোধন

জিআই পণ্য হাড়িভাঙ্গা আম সংগ্রহ উৎসব ২০২৫ এর উদ্বোধন ও আম চাষীদের সাথে মতবিনিম...

সামরিক হস্তক্ষেপ করলে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ হবে যুক্তরাষ্ট্রের: খামেনি

ইরান-ইসরাইল সংঘাতে যদি যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে তবে তাদের ‘অপূরণীয় ক্...

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ আর কতদিন চলতে পারে

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ আর কতদিন চলতে পারে। তেল আবিবের আকাশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠ...

মেটার নতুন সিদ্ধান্ত; ফেসবুকে থাকছে না ভিডিও!

মেটার নতুন সিদ্ধান্ত; ফেসবুকে থাকছে না ভিডিও! ভিডিও কনটেন্টে পরিবর্তন আনছে সা...

এনসিপির কর্মসূচি ঘোষণা; দেশব্যাপী পালনের নির্দেশ

দেশব্যাপী পালনের জন্য এনসিপির কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। জুলাই গণহত্যার বিচার,...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা