মো. রাকিব হাসান, ত্রিশাল: ময়মনসিংহের ত্রিশালে সাড়ে ৪ লাখ জনসাধারনের চিকিৎসার জন্য একমাত্র আশ্রয় কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল। এ উপজেলা হাসপাপতালে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১২টি ইউনিয়ন থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন রোগীরা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান
কিন্তু সাধারণ জনগণের অভিযোগ, সকাল ১০ টায় হাসপাতালে এসে টিকিট কেটে লাইনে দাড়িয়ে থাকলেও ডাক্তারের দেখা মিলেনা। বেশীর ভাগ ডাক্তার আসেন দুপুর ১২ টার পর। আসলেও কিছুক্ষন থেকে নাস্তা করতে চলেযান দোকানে। সেখানে দেন আড্ডা। জোহোরের আযান হলে নামাজে যান, সময় হয় দুপুরেরর খাবারের।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১১টা বেজে ১০ মিনিট উপজেলা হাসপাতালে রোগীর দীর্ঘ লাইন। উপচে পড়া ভিড়ে লাইনে দাড়িয়ে টিকিট কাটছেন বয়বৃদ্ধ থেকে শুরু করে অন্তসত্তা নারীরা। অনেক কষ্টের পর টিকিট পেলেও ডাক্তারের দরজার সামনে আবার লাইনে দাড়াতে হচ্ছে। রোগীরা দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে আশায় থাকেন ডাক্তার দেখাবেন কখন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান
বেশীর ভাগ ডাক্তারের দরজার সামনে লাইনে দাড়িয়ে আছেন রোগীরা। কিন্তু বেশির ভাগ চেম্বারেই নেই ডাক্তারের দেখা। দুপুর ১২ টা হাসপাতালের নিচতলা ডাক্তারের চেম্বার ১০৪, ১০৫, ১০৮, ১০৩,২০১ কক্ষের সামনে লাইনে দাড়িয়ে আছেন রোগীরা। রুমে নেই ডাক্তার। জ্বলছে লাইট, চলছে ফ্যান। হাসপাতালের নিচতলা থেকে দুতলা পর্যন্ত রোগীর ভীড়। যোগাযোগ করার জন্য যাওয়া হলো উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার রুমে। সেখানে দেখা মিললনা উনার। বাহির থেকে দরজা বন্ধ।
আলা উদ্দিন রামপুর ইউনিয়ন থেকে বোনের কানের সমস্যা নিয়ে সকাল ১০ টায় ডাক্তার দেখাতে এসে পাচ্ছেননা ডাক্তার। তিনি বলেন, কয়েক ঘন্টা থেকে বসে আছি ডাক্তার সাব রুমে নাই। আমার ছোট বোনের কানের ব্যথায় থাকতে পারছেনা। কখন যে ডাক্তার আসেন আল্লাহ জানেন। আমার মত অনেকেই বসে আছেন।
বালিপাড়া ইউনিয়ন থেকে সেবা নিতে আসা ষাটউর্ধো আমজাত আলী বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে কান ও গলার সমস্যায় ভোগতেছি। টিকিট কেটে বসে আছি ঘন্টাখানেক যাবৎ কিন্তু কয়েক জনের কাছে জানতে চাইলে বলছেন ডাক্তার বাহিরে আসেন। আমরা অনেক দুর থেকে এসে এমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছি নিয়মিতই।
ত্রিশাল ইউনিয়ন থেকে গাইনি ডাক্তার দেখাতে আসা মুর্শিদা বেগম বলেন, আমি সকাল সাড়ে ১০ টায় এসে দেখি ম্যাডাম নিচে গেলেন। এখন ১২ টার বেশী বাজে ফিরে আসেন নাই। ঘন্টাখানেকের উপরে দাড়িয়ে আছি আমরা অনেক মহিলা। ডাক্তার দেখাতে এলে আমাদের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এখানে অনেক অন্তসত্তা নারীও রয়েছে।
সাখুয়া ইউনিয়ন থেকে আমিনা খাতুন তার দেড় বছরের শিশুকে ডাক্তার দেখাতে এস অপেক্ষায় বসে আসেন। তিনি বলেন, কষ্ট করে লাইনে দাড়িয়ে টিকেট কেটে নিয়ে এসে দেখি রুমে ডাক্তার নেই। অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করছি। অনেকের কাছে জানতে চাইলেও কেউ ডাক্তারের কথা বলতে পারেনা।
ভোক্তভোগী আরিফুল, রায়হান মিয়া, হারুন অর রশিদ, আবুল খায়ের, নাহিদা আফিরিনসহ অনেকেই জানান, সরকারী এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলেও এখানে অনেক সমস্যায় ভরপুর। ডাক্তারা ঠিক সময়য়ে অফিসে আসেনা। আসলেও কিছু সময় বসে হাসপাতালের ক্যান্টিনে গিয়ে আড্ডা দেন। দুপুর হলেই চলেযায়। অনেক ডাক্তার ক্লিনিকে আসতে বলেন। হাসপাতালের ভিতরে দালালরা বসে থাকেন। রোগীদের বিপদে ফেলে নিয়ে যান ক্লিনিকে। ডাক্তারা সমযমত অফিসে না আসলেও অফিস শেষ হবার আগেই বাসায় চলে যান। আমার সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এ প্রতিকার থেকে মুক্তি চাই।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: নজরুল ইসলামের রুমে গেলে তাকে পাওয়া গেল না। মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমি সকালে অফিসে এসে বাহিরে পরির্দশনে বের হয়েছি। ডাক্তারগণ নিয়মিতই অফিস করেন। এ হাসপাতালে রোগীর অনেক চাপ সামলাতে হয়। প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ১৮০০ রোগী ডাক্তারগন দেখে থাকেন। রোগীদেখে ক্লান্ত হওয়ার কারণে অনেকেই রিফ্রেশম্যান্টের জন্য বাহিরে যান। আর গাইনি বিভাগের ডাক্তার সিজারে ব্যস্ত থাকার কারণে একটু সমস্যা হয়েছে। তারপরও আমি ডাক্তারদের নিয়ে বসে আলোচনা করবো। রোগীদের কিভাবে সহজতর সেবা দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা করবো। আমরা সেবা নিতে আসা রোগীদের প্রতি আন্তরিক। আমাদের ডাক্তারের তেমন সল্পতা নেই। সার্জারী, চক্ষুসহ তিন জন ডাক্তার কম আছেন। আমি নিয়মিত হাসপাতাল পরিদর্শ করি। কাল থেকে দুইবার পরিদর্শন করবো।
সান নিউজ/এনকে