এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি: উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার ধানসিঁড়ি নদীর পূর্বপাড়ের অবহেলিত একটি গ্রামের নাম পশ্চিম চর ইন্দ্রপাশা। শত বছর ধরে নদী ভাঙনের কবলে এই গ্রামের একর থেকে একর নদীর বুকে হারিয়ে গেছে। নদী ভাঙনের কবলে কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। এ গ্রামে অধিকাংশ দরিদ্র, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষদের আশ্রয়ে সরকার গুচ্ছগ্রাম, আবাসন ও ভূমিহীন পরিবারকে বসবাসের জন্য সাবেক প্রায়ত রাষ্ট্রপতি এরশাদ সরকারের আমলে জমি ও পরবর্তীতে গুচ্ছগ্রাম, আবাসনে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে প্রায় ২ যুগ আগে পশ্চিম ইন্দ্রপাশা-ভূমিহীন-গুচ্ছগ্রাম এলাকায় ধানসিঁড়ি নদীর পূর্বপাড় থেকে প্রায় ৩ কি.মি. দীর্ঘ মাটির রাস্তাটিতে ইট দিয়ে ইটের রাস্তা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বর্ষা ও বন্যায় রাস্তাটির বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে রাস্তা ভেঙে যায়। ভূমিহীনের উত্তর প্রান্তের কালভার্টও ভেঙে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং গুচ্ছ গ্রাম এলাকার ধানসিঁড়ি শাখা খালের ব্রিজের গোড়ায় মাটি না থাকায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া ইটের এ রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানের ইট ভেঙে সড়ে গিয়ে একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ৩ কি.মি. দীর্ঘ ইট সলিং রাস্তাটি সংস্কার না হওয়ায় অসংখ্য খানাখন্দের কারণে যানবাহন ও মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মঠবাড়ী ইউনিয়নের চর ইন্দ্রপাশা গ্রামের এ রাস্তাটি দিয়ে হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, ব্যাংক, বীমা, পোস্ট আফিস, ইউনিয়ন পরিষদ, থানা, বিভিন্ন এনজিও অফিসসহ গুরত্বপূর্ণ অফিসে যাতায়াতে করে এ এলাকার বসতিরা। রাস্তাটি ভেঙেচুড়ে একাকার হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে কয়েক হাজার পথচারি ও বসবাসকারী সাধারন মানুষকে।
দীর্ঘদিন ধরে রিক্সা-ভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বৃদ্ধ রোগী ও শিশু শিক্ষার্থীসহ মালামাল বহনকারীরা। বাগড়ি বাজার সংলগ্ন চর ইন্দ্রপাশা ব্রীজ থেকে উত্তর দিকে ভূমিহীন, গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ন কেন্দ্র রাস্তাটিতে অটোরিকশা, মোটর সাইকেল ও ভ্যানসহ সকল যানবাহন চলাচল কয়েক বছর ধরে বন্ধ। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তার অবস্থা আরো ভয়ঙ্কর হয়ে পরে। এ রাস্তাটিতে ১টি ব্রিজ ও ২টি কালভার্ট রয়েছে। ব্রিজের দুই পাশের রাস্তার ইট ও মাটি সড়ে গিয়েছে। কালভাট ভেঙে যাওয়ায় চলাচল বন্ধ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অতি নিম্ন মানের মালামাল দিয়ে কালভার্ট নির্মাণ করায় তা ভেঙে গেছে।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহম্মেদ খান দুঃখ প্রকাশ করে জানান, রাস্তা বেহালের কারণে অটোরিকশাসহ কোন প্রকার যানবাহন চলে না। দীর্ঘ কয়েক বছরে সংষ্কার না হওয়া অযত্নে, অবহেলায় এবং কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টির অভাবে সড়কটির এমন দশা।
কলেজ শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম শান্ত জানান, অসুস্থ রোগী দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে তাদের চরম ভোগান্তিতে পরতে হয়। রাস্তা খারাপের কারণে কোনো গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স ডুকে না এ রাস্তায়। রাস্তার ইট উঠে খানাখন্দে ভরে গেছে। অনেকাংশে রাস্তার ইটের কোনও অস্তিত্ব নেই সব বিলীন হয়ে গেছে। সংস্কারের অভাবে রাস্তাগুলোর অন্তত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ স্থান বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির দ্রুত সংষ্কারে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চেয়েছেন।
মঠবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সিকদার জানান, সড়কটি ইতোমধ্যে জেলা উন্নয়ন প্রকল্পে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। রাস্তাটি দ্রুত সংষ্কার হওয়া দরকার। রাস্তাটি বেহাল হওয়ার কারনে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ ভোগন্তি পোহাচ্ছে, আশা করি দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি সংষ্কার করবে।
রাজাপুর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা জানান, খোঁজ খবর নিয়ে জেলা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তাটি দ্রুত সংষ্কার করা হবে।
সান নিউজ/কেটি