দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ও মৎস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলে অবস্থিত বাগেরহাট জেলার নয়টি উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষে ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও সারাদেশে সবজি রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে তারা জানান।
শীতকালীন সবজির ব্যাপক উৎপাদনে একদিকে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে সহনীয় দামে সবজি বিক্রি করা সম্ভব হবে। অতিবৃষ্টির কারণে এবারের শীত মৌসুমের সবজি চাষে বিলম্ব হলেও মাটির লবণাক্ততা কেটে গেছে।
এবার বাগেরহাট জেলায় ৩,২৭৮ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে চিতলমারীসহ কয়েকটি উপজেলার ক্ষেতে টমেটোর ফলন শুরু হয়েছে। কাঁচা টমেটো বাজারে আসতে শুরু করেছে। এছাড়া যাত্রাপুর ও বারুইপাড়ার বিশাল মাঠজুড়ে শিম, লালশাক, সবুজ শাক ও পালংশাকও বাজারে আসতে শুরু করেছে।
সবজি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শীত মৌসুমের সবজি স্থানীয় বাজারে আসতে শুরু করবে।
বাগেরহাট সদর, কচুয়া, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল, মোংলা ও চিতলমারী—এই নয়টি উপজেলায় ব্যাপকভাবে টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। এতে ব্যাপক ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় মোট ৪৬০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে লালশাক ৩০ হেক্টর, পালংশাক ৩০ হেক্টর, টমেটো ৪০ হেক্টর, লাউ ১৭০ হেক্টর, বরবটি ৪০ হেক্টর, শিম ২০ হেক্টর, বেগুন ১২০ হেক্টর এবং ওলকপি ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
ফকিরহাট উপজেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মূলা ৫০ হেক্টর, লালশাক ৫০ হেক্টর, পালংশাক ৪০ হেক্টর, ফুলকপি ২৫ হেক্টর, বাঁধাকপি ২৫ হেক্টর, ওলকপি ৩০ হেক্টর, টমেটো ৮৫ হেক্টর, লাউ ৮৫ হেক্টর, বরবটি ৫ হেক্টর, শিম ৩০ হেক্টর, মিষ্টি কুমড়া ১০ হেক্টর, পুঁইশাক ৫ হেক্টর, ধনিয়াপাতা ২০ হেক্টর, পেঁপে ১০ হেক্টর এবং খিরাই ৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
মোল্লাহাট উপজেলায় ৫৬০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে, যার মধ্যে টমেটো ৫২৩ হেক্টর। বাকি জমিতে মূলা, শাক, ফুলকপি, লাউ, শসা ও ধনিয়াপাতার চাষ হয়েছে।
রামপাল উপজেলায় ৯৫ হেক্টর জমিতে মূলা, লালশাক, পালংশাক, লাউ, বরবটি, শিম, ওলকপি, টমেটো ও মিষ্টি কুমড়া আবাদ করা হয়েছে।
কচুয়া উপজেলায় ৪৭৭ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে, যার মধ্যে টমেটো ২৭৫ হেক্টর।
মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় ১৩৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন শাকসবজি আবাদ হয়েছে।
শরণখোলা উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে মূলা, শাক, লাউ, শিম, পেঁপে ও খিরাই চাষ হয়েছে।
মোংলা উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে।
চিতলমারী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৯৯১ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে, যার মধ্যে ৮৫৪ হেক্টর টমেটো চাষ হয়েছে।
কৃষি অধিদপ্তর বাগেরহাটের অতিরিক্ত উপপরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, “চলতি বছরে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১,৬৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অতি বৃষ্টির কারণে রবি ফসলের আবাদ বিলম্বে শুরু হলেও মাটি ও পানির লবণাক্ততা কমে যাওয়ায় সবজির উৎপাদন বৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।”
বাগেরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলহাজ মো. মোতাহার হোসেন জানান, “চলতি বছর সার ও বীজের কোনো ঘাটতি না থাকায় কৃষকেরা বেশি ফসল আবাদে আগ্রহী হয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন আরও বাড়বে। এতে একদিকে কৃষকেরা লাভবান হবেন, অন্যদিকে ক্রেতারাও সাশ্রয়ী দামে সবজি কিনতে পারবেন।”
তিনি আরও বলেন, “কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে। রোগ-পোকা দমন, উন্নত বীজ সরবরাহ এবং কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করতে আমরা নিয়মিত কাজ করছি। ঘেরের পাড়ে টমেটো, লাউ, শিম, মিষ্টি কুমড়া, শসা, ওলকপি ও করলা আবাদে কীটনাশক ব্যবহার খুব কম হয়, ফলে মানুষ নিরাপদ সবজি পাচ্ছে।”
মোতাহার হোসেন আরও জানান, “চলতি বছর টমেটো, লাউ, শিম, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, শসা, ওলকপি, করলা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি আবাদ করে একেকজন কৃষক একরপ্রতি ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। চিতলমারী ও মোল্লাহাটে মৌসুমের শেষের দিকে টমেটো উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কমে যায়, অনেক ক্ষেতেই টমেটো পচে যায়। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার সেখানে তিনটি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে কৃষকেরা আরও বেশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন।”
সাননিউজ/আরপি