নিজস্ব প্রতিনিধি: বহুল প্রত্যাশিত ‘সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি’ আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকাল ১০ টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাস ভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-১ ইসমাত মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক চিঠির সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সেই সাথে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: জানাজাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, নিহত ১
উল্লেখ্য, ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনে পাস হয়। ৩১ জানুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আইনটিতে সম্মতি দেন। পরে ১৩ আগস্ট এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
আইন অনুসারে, ‘সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি’র প্রবাসী স্কিমে প্রবাসী বাংলাদেশি, প্রগতি স্কিমে বেসরকারি চাকরিজীবী, সুরক্ষা স্কিমে স্ব-কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি এবং সমতা স্কিমে স্বল্প আয়ের নাগরিকরা অংশ নেবেন।
আপাতত সীমিত আকারে এ কর্মসূচি চালু করা হবে।
আরও পড়ুন: পরাজিত শক্তিই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে
পেনশন কর্মসূচির আওতায় ১৮-৫০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা থাকবে। মাসিক চাঁদা হবে সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। তবে কর্মসূচি পরিবর্তন এবং চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, পেনশন ব্যবস্থায় নগদ টাকায় কোনো লেনদেন হবে না। সব কর্মকাণ্ড অনলাইনে হবে। তবে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করেও চাঁদা দেওয়া যাবে।
সূত্র আরও জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয় প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে পেনশন কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে।
আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরছেন নওয়াজ
পেনশন কর্তৃপক্ষের জন্য একটি স্বতন্ত্র অফিস প্রতিষ্ঠা করা হবে। বর্তমানে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইয়াজদানি খানকে তার নিজ দায়িত্বের বাইরে পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিধি অনুসারে, সচিব পদমর্যাদার কোনো ব্যক্তির এ দায়িত্ব পালন করার কথা।
চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাই থেকেই দেশে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’ চালু করা হবে।
আরও পড়ুন: দেশের জিডিপি বেড়েছে সাড়ে ৪ গুণ
তবে নানা জটিলতার কারণে তা জুলাইয়ে কার্যকর করা যায়নি। কিছুটা দেরি হলেও সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে চালু হচ্ছে ‘সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি’।
পেনশন কর্মসূচি চালুর আগে ৫ টি সংস্থার সাথে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) হবে।
সংস্থাগুলো হচ্ছে- নির্বাচন কমিশন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, সোনালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড। ইতিমধ্যেই এসব এমওইউ‘র খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের শ্রদ্ধা
তবে শুধু এমওইউ’র মাধ্যমেই এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যাবে না। প্রয়োজন অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই)। এপিআই হচ্ছে এক ধরনের সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে একটির সাথে একাধিক কম্পিউটারের যোগাযোগ স্থাপন করা যায়।
সরকার দেশের সর্বস্তরের জনগণকে টেকসই পেনশন কাঠামোয় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩’ প্রণয়ন করেছে।
আইন অনুসারে, জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে ১৮-৫০ বছরের বেশি বয়সী সব নাগরিক পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। যিনি ধারাবাহিকভাবে ১০ বছর চাঁদা দেবেন, তিনি পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন।
আরও পড়ুন: আরও ১০ মৃত্যু, হাসপাতালে ১৯৮৪
চাঁদা দাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে মুনাফাসহ জমার বিপরীতে আজীবন পেনশন দেওয়া হবে। এছাড়া পঞ্চাশোর্ধ্বরা ১০ বছর চাঁদা দেওয়া শেষে যে বয়সে উপনীত হবেন, সেই বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন।
এ ব্যবস্থায় প্রত্যেক চাঁদা দাতার জন্য একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র পেনশন হিসাব থাকবে। এতে কর্মস্থল পরিবর্তন হলেও নতুন হিসাব খোলার প্রয়োজন হবে না। পেনশন কর্তৃপক্ষ সর্ব নিম্ন চাঁদার হার নির্ধারণ করবে। মাসিক চাঁদা দিতে দেরি হলেও বিলম্ব ফিসহ পেনশন হিসাব চালু রাখা যাবে।
আরও পড়ুন: বিএনপির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
কোনো পেনশনার ৭৫ বছর বয়সের আগে মারা গেলে, তার নমিনি অবশিষ্ট সময়কালের পেনশন প্রাপ্য হবেন। আবার কোনো পেনশনার ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে, জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ নমিনিকে দেওয়া হবে।
কোনো প্রয়োজনে চাঁদা দাতার আবেদনের প্রেক্ষিতে জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে নেওয়া যাবে। পরে নির্ধারিত ফিসহ তা পরিশোধ করতে হবে।
বিনিয়োগ বিবেচনায় পেনশনের চাঁদা কর রেয়াতযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। মাসিক পেনশন বাবদ পাওয়া অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।
আরও পড়ুন: যেকোনো মূল্যে দেশকে বাঁচাতে হবে
এছাড়া পেনশন বাবদ জমাকৃত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একটি ‘সর্বজনীন পেনশন তহবিল’ গঠন করা হবে। চাঁদা জমা, হিসাব সংরক্ষণ, পুঞ্জীভূত অর্থের সুষ্ঠু এবং নিরাপদ বিনিয়োগ ও পেনশন দেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদিত হবে এ তহবিলে। এক বা একাধিক তফসিলি ব্যাংকে তহবিলের অর্থ রাখা যাবে।
‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’ আইন অনুসারে, একটি ‘জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। ঢাকায় এর প্রধান কার্যালয় হবে। এতে কর্তৃপক্ষের একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও ৪ জন সদস্য থাকবেন। সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবেন তারা।
আরও পড়ুন: ইসলামী ব্যাংকের আলোচনা সভা
তাদের চাকরির মেয়াদ ও শর্ত বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে এবং কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন নির্বাহী চেয়ারম্যান। কর্তৃপক্ষসহ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বহন করবে সরকার।
স্থাবর বা অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন ও অধিকারে রাখতে এবং হস্তান্তর করতে পারবে পেনশন কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে সরকারের পূর্বানুমোদন ক্রমে নিজ নামে ঋণ নিতে পারবে।
আরও পড়ুন: ফের নোবিপ্রবির ভিসি দিদার-উল-আলম
পাশাপাশি নিজ নামে মামলা দায়ের এবং আদালতের মাধ্যমে সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব ক্রোক করতে পারবে কর্তৃপক্ষ। এ আইনে পেনশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুযোগ রাখা হয়েছে।
এছাড়া অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের একটি পেনশন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে।
আরও পড়ুন: স্থগিত পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা
এর সদস্য হবেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, এফবিসিসিআই’র সভাপতি, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি প্রমুখ।
সান নিউজ/এনজে
