নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাদক মামলায় জামিন পেলেন বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান। ১৫ মার্চ রবিবার সকালে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে তাকে জামিন দেয়া হয়।
আরিফুল ইসলামের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন জানান, ২৫ হাজার টাকা জামানত রেখে আরিফকে জামিন দেয়া হয়েছে।
রোববার সকালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল এবং জামিন আবেদন করা হলে তিনি তা শুনানির জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পাঠান। এরপর সকাল ১১টার দিকে শুনানি শেষে ২৫ হাজার টাকা বন্ডে এবং একজন আইনজীবী ও প্রেস ক্লাবের সভাপতির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা।
এদিকে বাংলা ট্রিবিউনের এই জেলা প্রতিনিধিকে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদণ্ড দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ১৭ জনকে রিটে বিবাদী করা হয়।
বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদের পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসান জনস্বার্থে সকালে রিটটি দায়ের করেন। এ বিষয়ে আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রশিদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হতে পারে।
এছাড়াও রিটে ফৌজদারি কার্যবিধি, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এবং সংবিধানের ৩১,৩২,৩৫ এবং ৩৬ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
গত ১৩ মার্চ শুক্রবার রাতে ডিসি অফিসের দুই-তিন জন ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৫-১৬ জন আনসার সদস্যের একটি দল তাকে ধরে নিয়ে ভ্রাম্যামান আদালতে কারাদণ্ড দেয়। তারা কেবল দণ্ড দিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি, পরে তাকে উলঙ্গ করে দুই চোখ বেঁধে নির্যাতনও করেন। সেসময় পুরো দৃশ্য ভিডিও করা হয়। আর এসব ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিন। এমনটাই অভিযোগ করেছিলেন আরিফের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতু।
এদিকে আরিফুল ইসলাম রিগানের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ ছিল বা মধ্যরাতে টাস্কফোর্স অভিযানের নামে কাউকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতে শাস্তি দেয়া যায় কি না, তার কোনও আইনি ব্যাখ্যা দিতে পারেননি কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন।
এদিকে প্রশাসনের এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সারাদেশে সৃষ্টি হয়েছে তুমুল সমালোচনার। সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নির্যাতনের ঘটনায় বিব্রত সরকারের বিভিন্ন মহল। ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন সাংবাদিক সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।
এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক অতিরিক্ত সচিব ও একজন যুগ্ম সচিব জানান, কুড়িগ্রামের বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর। কোনোভাবেই মধ্যরাতে টাস্কফোর্সের অভিযান আইনসম্মত নয়। অবশ্যই টাস্কফোর্সকে সকাল না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, এটাই বিধান। মধ্যরাতে অভিযান ও সাজা দেওয়ার বিষয়টি প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে কলে মনে করেন তিনি। এ ধরনের কর্মকাণ্ড মাঠপর্যায়ে সরকার ও প্রশাসনের ওপর জনগণের আস্থা কমায় এবং পরিস্থিতি বিরূপ করে তোলে বলে মন্তব্য তাঁর।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আরিফুল ইসলামের ওপর যদি অন্যায় হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই জেলা প্রশাসককে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
আরিফের পরিবারের দাবি, জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন জেলা প্রশাসক পারভীন।
এছাড়া, সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়োগ ও সুলতানা পারভীনের অনিয়ম নিয়েও প্রতিবেদন তৈরি করেন আরিফ। এরপরই একাধিকবার তাকে ডিসি অফিসে ডেকে নিয়ে হুমকিও দেয়া হয়।
সান নিউজ/সালি
Newsletter
Subscribe to our newsletter and stay updated.