রোজারিও সেন্ট্রালের হয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ও লিওনেল মেসির শৈশবের ক্লাব নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজের বিপক্ষে আগে কখনো জিততে পারেননি আনহেল দি মারিয়া। গতকালও একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল আর্জেন্টিনা প্রিমিয়ার ডিভিশনের ম্যাচটা হয়তো গোলশূন্য ড্রয়েই নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। ম্যাচের ৮০ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর এমনটা মনে হওয়া একেবারেই অমূলকও ছিল না। এর মধ্যে ম্যাচের ৮২ মিনিটে বক্সের বেশ বাইরে ফ্রি–কিক পায় রোজারিও।
ফ্রি–কিকটি নেওয়ার জন্য স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে আসেন দলের সবচেয়ে বড় তারকা দি মারিয়া। রোজারিও ডার্বিতে এর আগ পর্যন্ত আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির খেলায় স্নায়ুচাপ ছিল স্পষ্ট। ম্যাচজুড়ে খুব বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেননি, প্রভাবও ছিল সীমিত।ফলে প্রায় ২৮ গজ দূর থেকে ফ্রি–কিকে গোল করবেন, তা ভাবেননি অনেকেই।
কিন্তু তিনি যে কিংবদন্তিদের একজন! মুহূর্তের মধ্যে দৃশ্যপট বদলে দেওয়ার সামর্থ্য আছে তাঁর। কে জানে, হয়তো এমন একটি মুহূর্তের জন্যই হয়তো অপেক্ষা করছিলেন তিনি এবং জমিয়ে রেখেছিলেন সমস্ত জাদুও।
দি মারিয়া ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বলকে চুমু খেয়ে স্পটে বসান। এরপর কয়েক পা দৌড়ে এসে নেন বাঁ পায়ের জোরালো শট। সেই বলটি ঘণ্টায় ৮১ কিলোমিটার বেগে উড়ে গিয়ে জায়গা করে নেয় গোলকিপার হুয়ান এসপিনোলার বাঁ দিকের কোণে। গোলরক্ষক বলের লাইন বুঝতে পেরে এগিয়ে এসে ঝাঁপও দিয়েছিল। কিন্তু তাতে নান্দনিক একটি দৃশ্যই শুধু তৈরি হয়েছে। বলটা থামানোর কোনো উপায় ছিল তাঁর। মিসাইলের মতো উড়ে এসে বাঁ পাশের কোনা দিয়ে বল জড়ায় জালে।
এমন একটি গোলের পর উদ্যাপনটা যেমন হওয়ার কথা তেমনই হয়েছে। জার্সি খুলে পাগলের মতো উদ্যাপন করেছেন দি মারিয়া, গ্যালারির ভিআইপি বক্সে বসা তাঁর পরিবারও তখন উল্লাসে ভাসছে। গোটা গিগান্তে দে আরোজিতো স্টেডিয়াম মাতল দি মারিয়ার সেই গোলের উচ্ছ্বাসে। এটি শুধু স্মরণীয় এক গোল নয়, এর মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো ডার্বিতে জয়ের স্বাদ পেলেন রোজারিওর এই ঘরের ছেলে।
নিওয়েল’সকে হারানোর প্রতিক্রিয়ায় ম্যাচ শেষে আবেগঘন কণ্ঠে দি মারিয়া বলেছেন, ‘এটা আমি সারা জীবন স্বপ্ন দেখেছি। শুধু চেয়েছিলাম ফিরে এসে এই স্বপ্নটা পূরণ করতে। এখন আরেকটা লক্ষ্য আছে। সেন্ট্রালকে চ্যাম্পিয়ন বানানো। আমার স্ত্রী বলেছিল সুযোগ পেলে আমি পারব। ভাগ্যও এমনই। শেষ পর্যন্ত ফিরে এসেছি সেখানে, যেখানে আমি সত্যিই সুখী। স্বপ্ন পূরণ করতে না পারার কষ্ট আমি অনেক দিন বয়ে বেড়িয়েছি। অনেকেই হয়তো তখন আমাকে অভিশাপ দিয়েছে, কিন্তু কেউ জানে না আমি কতটা কষ্ট সহ্য করেছি। এই জয় আমার স্ত্রী আর মেয়েদের জন্য।’
এর আগে নিওয়েলসে’র বিপক্ষে দি মারিয়া খেলেছিলেন দুই ম্যাচ। ২০০৬ সালে প্রথম ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছিল এবং ২০০৭ সালে অন্য ম্যাচে ১-০ গোলে হেরেছিল রোজারিও। আর এবার শেষ হাসি হাসল দি মারিয়ার রোজারিও সেন্ট্রাল।
শেষ মিনিটে কোচ আরিয়েল হোলান যখন তাঁকে তুলে নিলেন, স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে করতালি দিল অভিবাদন জানিয়েছে তাঁকে। এই ম্যাচ দিয়ে আরও একটি ইতিহাস গড়েছেন দি মারিয়া। ডার্বিতে নাম লিখিয়েই তিনি হয়ে গেলেন প্রথম বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার, যিনি রোজারিও সেন্ট্রালের হয়ে নিওয়েল’সের বিপক্ষে খেললেন।