সান নিউজ ডেস্ক: খুলনার বহুল আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের মেয়ে জান্নাতুল নওরীন এশার (২২) মৃত্যুর ঘটনায় তার প্রেমিক প্লাবন ঘোষের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে চার্জশিট দিতে যাচ্ছে গুলশান থানা পুলিশ। এর আগে এশার মৃত্যুর ঘটনায় তার মা সানজিদা আক্তার শোভা মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: আফগানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা
এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, আসামি প্লাবন ঘোষ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। প্লাবন ঘোষের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এশার। সেই প্রেম থেকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে প্লাবন ঘোষ তা প্রত্যাখ্যান করে। এরপরই এশা প্লাবন ঘোষকে ভিডিও কলে রেখে বাসার বেড রুমে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
এ ব্যাপারে গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, এশার বাসা থেকে উদ্ধার করা মোবাইল ফোন ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তদন্ত করার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে এই আত্মহত্যায় প্লাবন ঘোষের প্ররোচনা রয়েছে। এশার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পুলিশ হাতে পেয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তার দুই হাতে ব্লেড দিয়ে কাটা জখমের চিহ্ন রয়েছে। তার মৃত্যু ‘আত্মহত্যাজনিত কারণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়া যাচ্ছেন মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান
তিনি আরও বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা ক্রাইম সিন আলামতের সিআইডির পর্যবেক্ষণের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া ভিকটিম ও আসামির ডিএনএ (ডি-অক্সি রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) নমুনা সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টও এই মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। আমরা এসব রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। রিপোর্ট হাতে পেলেই আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলাটির চার্জশিট দাখিল করা হবে।
এশার বান্ধবী সুমী বলেন, এশার সঙ্গে আমার ১৫ বছরের সম্পর্ক। ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি। ঘটনার আট মাস আগে প্লাবনের সঙ্গে এশার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্লাবন হিন্দু ধর্মের হওয়ায় দুই পরিবারের কেউই তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি। এজন্য বিয়েও করতে পারেনি। এসব নিয়ে প্লাবনের সঙ্গে এশার প্রায়ই ঝগড়া হতো।
আরও পড়ুন: সংক্রমণ ও প্রাণহানির শীর্ষে জাপান
তিনি আরো বলেন, এশার যেদিন মৃত্যু হয়, সেদিনও প্লাবনের সঙ্গে সন্ধ্যায় তার ঝগড়া হয়। ওই ঝগড়ার জের ধরে এশা তার দুই হাত ব্লেড দিয়ে রক্তাক্ত করে ভিডিও কল দেয়। তাতেও প্লাবন বিয়েতে রাজি না হয়ে উল্টো বিবাদে জড়ায়। একপর্যায়ে প্লাবন ঘোষকে ভিডিও কলে রেখেই গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে এশা।
এশার মামাতো ভাই এসএম সাদিকুল আলম রুশো বলেন, এশা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছে। শাহজাদপুরে সুবাস্তু টাওয়ারে মায়ের সঙ্গে থাকত। পড়াশোনা অবস্থায় আট মাস আগে প্লাবনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সে। এরপর থেকেই পরিবারের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করত এশা। এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঐ ছেলে ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় দুই পরিবারের মধ্যে সমস্যা চলছিল। এসব নিয়ে প্লাবনের সঙ্গে এশার প্রায়ই ঝগড়া হতো।
আরও পড়ুন: লুটপাট করেছে বিএনপি
এশার মা সানজিদা আক্তার শোভা অভিযোগ করে বলেন, বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিকের ছেলে প্লাবন ঘোষ। প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর সন্তান হওয়ায় পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবেই প্লাবনকে গ্রেফতার করছে না। পুলিশ চাইলেই আসামিকে গ্রেফতার করতে পারত। পুলিশের গড়িমসির কারণে সময় পেয়ে প্লাবন ঘোষ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রসঙ্গত, খুলনার এরশাদ শিকদার ১৯৯৯ সালে গ্রেফতার হন। এরশাদ শিকদার গ্রেফতার হওয়ার চার-পাঁচ মাস পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা আক্তার শোভার গর্ভে এশা জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে খুলনা জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এরশাদ শিকদারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরশাদ শিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা আক্তার শোভা খুলনার মেয়ে। তিনি ছিলেন একজন আইনজীবীর স্ত্রী। পরকীয়ায় জড়িয়ে এরশাদ শিকদারকে বিয়ে করেন। এরশাদ শিকদারের ফাঁসির পর শোভাকে এরশাদ শিকদারের বাড়ি স্বর্ণকমল থেকে বের করে দেন প্রথম স্ত্রী ও অন্যরা। এরপর তিনি খুলনায় কিছু দিন পার্লার ব্যবসা করেন। তারপর চলে যান ঢাকায়। অন্যদিকে এরশাদ শিকদারের প্রথম স্ত্রী খোদেজা বেগমের তিন সন্তান রয়েছে। তারাই বর্তমানে এরশাদ শিকদারের রেখে যাওয়া সম্পত্তি ভোগদখল করছেন।
আরও পড়ুন: মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আমি কেন?
এদিকে, গত ৩ মার্চ রাতে গুলশান থানাধীন শাহজাদপুরের সুবাস্তু নজরভ্যালী অ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্ল্যাটে প্রেমিক প্লাবন ঘোষকে ভিডিও কলে রেখে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন এশা। পরদিন ভোরে গুলশান থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। ওই দিনই এশার মা এরশাদ শিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা আক্তার শোভা গুলশান থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা করেন। মামলায় এশার প্রেমিক প্লাবন ঘোষকে আসামি করা হয়। মামলার পর থেকেই প্লাবন ঘোষ পলাতক বলে দাবি করছে গুলশান থানা পুলিশ।
এর আগে ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে মামলার এজাহারে এশার মা বলেন, গত ৩ মার্চ রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে প্লাবন এসে এশা ও তার এক বান্ধবীকে আমাদের বাসার নিচ থেকে নিয়ে যায়। এশার বান্ধবী আমাকে জানায়, ঘোরাঘুরির সময় এশা ও প্লাবনের মধ্যে মোবাইল ফোনে একটি কল আসাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এশার বান্ধবী তাদের দুজনকে নিজের বাসায় নিয়ে গিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে। সেখানে সমাধান না হওয়ায় এশা বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে এশা তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি তখন বাসায় ঘুমাচ্ছিলাম। পরে জানতে পারি, শুক্রবার ভোর ৫টা ২৪ মিনিটে প্লাবনের কাকা আমার মেয়ের বান্ধবীকে ফোন করে জানায়, এশার বাসায় যাও, সে পাগলামি করছে, আত্মহত্যার চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে তলব করবে ঢাকা
এরপর ভোর ৫টা ২৯ মিনিটে প্লাবন আমাকে ফোন করে জানায়, আপনার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছে। আমি তার ফোন পেয়ে দ্রুত এশার রুমের দরজা খোলার চেষ্টা করি। কিন্তু দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পাই। পরে বাসার সিকিউরিটি গার্ড মেজবাহ, আলামিন ও এশার বান্ধবীর সহায়তায় দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করি। আমরা দেখতে পাই, এশা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। এরপর সিকিউরিটি গার্ডদের সহায়তায় আমরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এশা মারা যায়।
এজাহারে এশার মা আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি, তারা ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল প্লাবন ঘোষ। এজন্য সে কৌশলে এশার সঙ্গে ঝগড়া বাধায় এবং ইচ্ছে করেই এশাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। প্লাবন এশাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে।’
সান নিউজ/কেএমএল