জাতীয়

৩৭ বিলিয়ন ডলারের ডেল্টা তহবিল

নিউজ ডেস্ক:

বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হিসেবে বহু আলোচিত ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা বা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। এ মহাপরিকল্পনার অধীনে আপাতত ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ৮০টি প্রকল্প নেবে সরকার।

ডেল্টা প্ল্যানের অংশ হিসেবে ২০৩০ সাল নাগাদ উন্নয়ন ব্যয় পরিচালনায় তহবিলের পরিমাণ হবে সাড়ে ৩৭ বিলিয়ন বা ৩৭৫০ কোটি ডলার। এই পরিমাণের অর্থ ব্যয় করে আগামী ১০ বছরে ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এটি ২১০০ সাল পর্যন্ত ঐতিহাসিক ব-দ্বীপ পরিকল্পনার অংশ।

সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়ের এই তহবিল গঠনে কোনও আইনের পরিবর্তন প্রয়োজন নেই। প্রতি বছরের উন্নয়ন তহবিল থেকেই এই তহবিলের প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দেওয়া সম্ভব। তবে সরকার চাইলে এর জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখতে পারে।

তারা উদাহরণ হিসেবে বলছেন, সম্প্রতি তারল্য সংকট মেটাতে পুঁজিবাজারের জন্য প্রতিটি ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকা করে তহবিল গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১০ বছরে সরকার এরকম একাধিক তহবিল গঠন করেছে। ‘ডেল্টা তহবিল’ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত রেখে এরকম একটি তহবিল গঠনের পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদন পায় ডেল্টা প্ল্যান-২১০০। এরপর দীর্ঘদিন কেটে গেলেও গঠিত হচ্ছিল না এর গভর্ন্যান্স কাউন্সিল। অতঃপর গত ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাকে চেয়ারম্যান করে ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। এ কাউন্সিল বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে তহবিল গঠনের রূপরেখাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী আপাতত ২০৩০ সালের মধ্যে প্রস্তাবিত ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, জিডিপির আড়াই শতাংশ টাকা এ খাতে ব্যয় করা হবে। বর্তমানে ব্যয় করা হচ্ছে ১ শতাংশ।

সূত্র জানায়, বর্তমানে জিডিপির ১ শতাংশ পরিমাণ টাকা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে, যা ২০৩০ সাল নাগাদ আড়াই শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এরমধ্যে ২ শতাংশ নতুন বিনিয়োগ এবং শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় করা হবে। জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ সরকারি তহবিল থেকে এবং শতকরা ২০ ভাগ বেসরকারি খাত থেকে আসবে।

২০৩০ সালের মধ্যে এই ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

একশ বছরের এই ঐতিহাসিক পরিকল্পনাটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে যুক্ত থেকেছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ডেল্টা প্ল্যান গভর্ন্যান্সের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পরিকল্পনামন্ত্রী। কমিটির সদস্য হচ্ছেন কৃষিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী, নৌপরিবহনমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য কমিটির সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, উন্নত দেশের পথে হাঁটতে হলে প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ প্রয়োজন। এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

ডেলটা প্ল্যান-২১০০ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত, কারিগরি ও আর্থসামাজিক ঐতিহাসিক দলিল। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ও জিডিপি উভয়ই বেড়েছিল। যদিও করোনা কিছুটা সমস্যা তৈরি করছে। তবে এটি আমরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো। মূল্যস্ফীতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু প্রভাব রয়েছে। সেই প্রভাব মোকাবিলা করে দেশকে কীভাবে উন্নয়নের সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্তৃত ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বা ডেল্টা প্ল্যান।’

উল্লেখ্য, সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ১০টি মন্ত্রণালয় পানি ব্যবস্থাপনা বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে। সেগুলো হলো কৃষি মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দশটি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হবে ডেল্টা তহবিলের টাকায়, যেটি এখন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নোয়াখালীতে ভূমি দুস্যুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন 

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর কোম...

ফসলের ক্ষতি করে চলছে অবৈধ ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রি

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

আজ শেরে বাংলার ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ অবিভক্ত বাংল...

গরমে বারবার গোসল করা কি ক্ষতিকর?

লাইফস্টাইল ডেস্ক: বৈশাখের শুরু থে...

খাগড়াছড়িতে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

হিটস্ট্রোকে একদিনেই ৬ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রা...

আইনি সেবায় মানবিকতাকেও স্থান দেয়া উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আইনি সেবা প্রদানকালে পুঁথিগত আইন প্রয়োগের...

ভূঞাপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় 

খায়রুল খন্দকার, টাঙ্গাইল: প্রচণ্ড তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ট। নেই...

প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরছেন কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: থাইল্যান্ড সফর শেষে আগামীকাল ব্যাংকক থেকে...

ডিপিএস এসটিএস স্কুলে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিপিএস এসটিএস স্কুল ঢাকার ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা