পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে ব্যাপক জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগে দায়ের করা তিনটি দুর্নীতি মামলার রায় আজ ঘোষণা করবে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ মোট ২৩ জন এই মামলার আসামি। মামলাগুলোর দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ২৩ নভেম্বর বিচারক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন আজকের তারিখ নির্ধারণ করেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জানান, ২৩ আসামির মধ্যে ২২ জন আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, বেলা ১১টায় রায় ঘোষণা হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, তিন মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৭৭ জন—যার মধ্যে অনেক সাক্ষীই তিন মামলাতেই অভিন্ন।
প্রথম মামলায় হাসিনাসহ ১২ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন ২৮ জন, দ্বিতীয় মামলায় হাসিনা ও পুতুলসহ ১৮ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন ২২ জন এবং তৃতীয় মামলায় হাসিনা ও জয়সহ ১৭ আসামির বিরুদ্ধে ২৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিন মামলার বাইরেও পূর্বাচল প্লট দুর্নীতির আরেকটি মামলার রায় ১ ডিসেম্বর ঘোষণা করবেন বিশেষ জজ আদালত-৪। এতে আসামি হিসেবে রয়েছেন হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকসহ ১৭ জন।
এছাড়া হাসিনা, তার ভাগ্নি আজমিনা সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক এবং ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ আরও ২১ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলা একই আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। দুদকের অভিযোগ, টিউলিপ তার প্রভাব ব্যবহার করে রেহানা, ববি ও আজমিনার জন্যও অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও প্লট বরাদ্দ নিশ্চিত করেছিলেন।
মামলার নথি অনুযায়ী, ছয়টি মামলায় মোট ৫৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন দুদকের ৬ কর্মকর্তা, রাজউকের ৪ কর্মচারী এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী। পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক অঞ্চলে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট অবৈধভাবে বরাদ্দের অভিযোগে ১২–১৪ জানুয়ারি দুদক এসব মামলা দায়ের করে। অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় ২৫ মার্চ, এবং ৩১ জুলাই অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
দুদক জানায়, রাজউকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে হাসিনা তার পরিবারের ছয় সদস্যের জন্য বিধি বহির্ভূতভাবে প্লট নেন, যদিও তারা কেউই যোগ্য ছিলেন না। অভিযোগপত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ধারা ৫(২) অনুযায়ী অপরাধ, প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গসহ একাধিক অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সাবেক সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার, কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সাবেক সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা এবং আরও অনেক সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। আসামিদের মধ্যে খুরশীদ আলম বর্তমানে কারাগারে আছেন।
আজকের রায়কে ঘিরে আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মামলাগুলোর গুরুত্ব ও রাজনৈতিক প্রভাব বিবেচনায় দেশজুড়ে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।
সাননিউজ/এও