জুলাই সনদ ও গণভোট ঘিরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরও গভীর হচ্ছে। সংলাপ ও সাত দিনের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও সরকার, বিএনপি ও অন্যান্য দল কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। উল্টো অবস্থান স্পষ্ট করে বিভক্তি আরও বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার নিজ উদ্যোগে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫’ জারির প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সরকারি সূত্র জানায়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের খসড়া আদেশ এখন আইন মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত করা হচ্ছে। গোপনীয়ভাবে কাজটি চলায় অনেক উপদেষ্টাই জানেন না, আদেশে কী পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, ১৩ নভেম্বরের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি তোলা হবে এবং এ মাসের মধ্যেই আদেশ জারি হতে পারে।
বিএনপির আপত্তি
গণভোটের সময় ও সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে বিএনপি প্রশ্ন তুলেছে। তাদের দাবি, বিদ্যমান সংবিধানে গণভোটের কোনো বিধান নেই, তাই সংসদ নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজন সংবিধানবিরোধী। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “সংবিধানের অধীনে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার নিজে থেকে গণভোটের আয়োজন করতে পারে না।”
ঠাকুরগাঁওয়ে এক কর্মসূচিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এই গণভোট-সনদ শিক্ষিত কিছু লোকের বিষয়, যারা বিদেশ থেকে এসে আমাদের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। আমরা যা মেনে নেব না, তা সংসদে আলোচনা ছাড়া বাস্তবায়িত হতে পারে না।”
আন্দোলনে জামায়াত ও মিত্র দলগুলো
বিএনপি যখন গণভোট প্রশ্নে অনড়, তখন জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ আটটি দল নির্বাচনের আগেই গণভোট চেয়ে আন্দোলনে নামছে। মঙ্গলবার রাজধানীতে বড় জনসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “সরকার যদি সোমবারের মধ্যে আদেশ না দেয়, মঙ্গলবার ঢাকায় আমরা জনসভা করব। মানুষ জানিয়ে দেবে, তারা গণভোট এখনই চায়।”
সরকারের অবস্থান
অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা জানান, সমঝোতা ব্যর্থ হওয়ায় সরকারই আদেশের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করবে। ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হবে, আর গণভোটের সময় নির্ধারণ করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
খসড়া অনুযায়ী, গণভোট হবে জুলাই সনদের ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাবের ওপর। এর মধ্যে রয়েছে সংসদ কাঠামো পরিবর্তন, তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির পুনর্গঠন, ও উচ্চকক্ষ গঠনের বিধান।
এনসিপির দাবি
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলছে, উপদেষ্টারা অচলাবস্থা তৈরি করেছেন, তাই এখন সরকারেরই দায়িত্ব পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “যে ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার ক্ষমতায়, সেটির অন্যথা করা যাবে না। জনগণের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।”
সব মিলিয়ে জুলাই সনদ ও গণভোট এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিভাজনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। একপক্ষ বলছে গণভোট গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের প্রতীক, অন্যপক্ষ বলছে এটি সংবিধানবহির্ভূত চাপ। ফলে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সাননিউজ/এও