ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ‘খুব সফল’ হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পারমাণবিক স্থাপনাগুলো হল- ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা-ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে ‘খুব সফল’ হামলা সম্পন্ন করেছি। সব বিমান এখন ইরানের আকাশসীমার বাইরে।’
ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, মাটির ২৬২ ফুট গভীরে থাকা ফর্দো পরমাণু কেন্দ্রে ভারী বোমা ফেলেছেন তারা। হামলা চালানো বিমানগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসছে।
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘এটি (ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও পুরো বিশ্বের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’
ইরানে মার্কিন হামলার সময় সিচুয়েশন রুমে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় তার সাথে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
হামলার পর সিচুয়েশন রুমের ছবি প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউজ। প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে ইরানে মার্কিন বোমারু বিমানের হামলার দৃশ্য সিচুয়েশন রুমে বসে দেখেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
একটি ছবিতে ট্রাম্পকে নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে অন্য একটি চেয়ারের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেও দেখা গেছে।
পরে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১০টায় হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ট্রাম্প। এ সময় ইরানকে সতর্ক করে তিনি বলেন, "হয় শান্তি আসবে, নয়তো ইরানের জন্য আরও অনেক বড় ট্র্যাজেডি হবে যা আমরা গত আট দিনে দেখেছি।"
ইরানের ফোর্ডো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর দেশটির জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। হোয়াইট হাউসে দেওয়া ওই ভাষণে ইরানকে ‘শান্তির পথে’ আসার আহ্বান জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, না হলে আরও বড় ও সহজ হামলা চালানো হবে।
ট্রাম্প বলেন, ‘‘ইরানের বিরুদ্ধে আজ আমরা অত্যন্ত সফল হামলা চালিয়েছি। ফোর্ডো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই ‘বড় সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ এখন হয় শান্তি করবে, নয়তো আরও ভয়াবহ পরিণতি বরণ করবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘৪০ বছর ধরে ইরান ‘আমেরিকার মৃত্যু চাই’, ‘ইসরায়েলের মৃত্যু চাই’ বলে আসছে। তাদের রাস্তার বোমায় আমাদের বহু নাগরিক পঙ্গু হয়েছে, প্রাণ হারিয়েছে। শুধু আমরাই নই, তাদের সন্ত্রাসে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। বিশেষ করে কাসেম সোলেইমানি বহু হত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন।’’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘‘আমি অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ইরানকে আর এই পথ চলতে দেয়া যাবে না। আজকের অভিযানে আমরা সফলভাবে তাদের পারমাণবিক সক্ষমতা শেষ করেছি।’’
ইসরায়েলের সহযোগিতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘আমি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভূমিকারও প্রশংসা করি।’’
মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘‘তোমাদের অসাধারণ কাজ আজ বিশ্বের কাছে প্রমাণ হলো। আজকের মতো সাফল্যময় অপারেশন বহু বছর পর দেখা গেল।’’
তিনি জেনারেল ড্যান ‘রাজিন’ কেইন ও অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত সামরিক বিশেষজ্ঞদেরও ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি বলেন, ‘‘শান্তি না এলে ইরানকে আরও কঠিন পরিণতির মুখে পড়তে হবে। আজকের লক্ষ্য ছিল সবচেয়ে কঠিন, বাকিগুলো তুলনামূলক সহজ এবং মিনিটের মধ্যে ধ্বংস করা সম্ভব।’’
ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘বিশ্বের কোনো সেনাবাহিনী আমাদের মতো এমন অভিযান চালাতে পারবে না। ইরানের সামনে এখন শেষ সুযোগ—শান্তি করা অথবা ধ্বংস হওয়া।’’
তিনি জানান, রবিবার সকালে পেন্টাগনে এই অভিযানের বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলন করবেন জেনারেল কেইন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।
ভাষণের শেষে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি, আমাদের মহান সেনাবাহিনীকে ভালোবাসি। ঈশ্বর আমেরিকা, ইসরায়েল ও পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে রক্ষা করুন।’’
সূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স
সাননিউজ/ইউকে