স্বাস্থ্য

বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ গতিতে বাড়ছে হামের প্রাদুর্ভাব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে হামের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গত ২৩ বছরের মধ্যে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঘটনা পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) এক প্রকাশনায় উঠে এসেছে যে, ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে হামে আক্রান্তের ঘটনা বেড়ে ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৭৭০ জনে পৌঁছেছে, যা ১৯৯৬ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ এবং ডব্লিউএইচও’র আওতাধীন সব অঞ্চলেই এটি বেড়েছে।

২০১৬ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাপী হামে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে, যার মধ্যে শুধু ২০১৯ সালেই প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৫০০ প্রাণহানি হয়েছে।

শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) ইউনিসেফ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক অগ্রগতির পর ২০১৯ সাল পর্যন্ত হামে আক্রান্তের ঘটনা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ২০১৬ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে কম হামে আক্রান্তের ঘটনা পাওয়া গেছে। এ বছরের সঙ্গে ২০১৯ সালের তথ্যের তুলনা করে প্রকাশনার লেখকরা এক্ষেত্রে শিশুদের সময়মতো হাম প্রতিরোধ টিকা (এমসিভি১ ও এমসিভি২) দিতে ব্যর্থতার কথাই উল্লেখ করেন, যা এ রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রধান চালিকা শক্তি।

ডব্লিউএইচও মহাসচিব ড. টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইয়েসুস বলেন, হামের প্রাদুর্ভাব ও মৃত্যু কীভাবে প্রতিরোধ করতে হয় তা আমরা জানি। এ তথ্য একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, আমরা বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলে শিশুদের হাম থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছি। সর্বত্র সবার কাছে হামের টিকা পৌঁছে দিতে এবং প্রাণঘাতী এ ভাইরাসকে থামাতে দেশগুলোকে সহায়তা দিতে এবং কমিউনিটিগুলোকে সম্পৃক্ত করতে আমাদের অবশ্যই একত্রে কাজ করতে হবে।

হামের প্রাদুর্ভাব ঘটে যখন ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত না থাকা লোকজন সংক্রমিত হয় এবং টিকা না দেওয়া বা স্বল্প পরিমাণে টিকা দেওয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ রোগ ছড়িয়ে দেয়। হাম নিয়ন্ত্রণ করতে এবং এর প্রাদুর্ভাব ও মৃত্যু ঠেকাতে প্রয়োজনীয় এমসিভি১ ও এমসিভি২-সহ টিকাদানের আওতা জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বাড়িয়ে ৯৫ শতাংশে পৌঁছাতে হবে। বৈশ্বিকভাবে এমসিভি১ দেওয়ার আওতা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ৮৪ থেকে ৮৫ শতাংশের মধ্যে আটকে গেছে। এমসিভি২ দেওয়ার আওতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলেও এর হার বর্তমানে মাত্র ৭১ শতাংশ। হাম নিয়ন্ত্রণ এবং এর প্রাদুর্ভাব ও মৃত্যু ঠেকানোর জন্য উভয় ডোজসহ টিকাদানের আওতা ৯৫ শতাংশ বা তার বেশিতে উন্নীত করতে হবে, যা বর্তমানে এ সীমার অনেক নিচে রয়েছে।

করোনা মহামারি মোকাবিলায় বৈশ্বিক সাড়া কারণে কোনোভাবেই হামের সংকটকে বাড়তে দেওয়া যাবে না যদিও ২০২০ সালে হামে আক্রান্তের ঘটনার সংখ্যা কম, তবে করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা টিকাদান কার্যক্রমকে ব্যাহত করেছে এবং হামের প্রাদুর্ভাব রোধ ও হ্রাস করার প্রচেষ্টাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ২৬টি দেশে হামের টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ৯ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ টিকা না পাওয়ার ঝুঁকিতে ছিল। এর মধ্যে অনেক দেশ চলমান প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করছে। ২০২০ সালের নির্ধারিত টিকাদান কার্যক্রম স্থগিত রাখা দেশগুলোর মধ্যে মাত্র আটটি (ব্রাজিল, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইথিওপিয়া, নেপাল, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন ও সোমালিয়া) প্রথম দিকে বিলম্বের পরে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।

বাংলাদেশে জাতীয় হাম এবং রুবেলা টিকাদান কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে ইউনিসেফ আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়। এ কার্যক্রম ২০২০ সালের মার্চ মাসে পরিচালনার কথা ছিল, তবে করোনার কারণে তা স্থগিত করতে হয়েছিল। এটি এখন করোনা জনিত স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়ার কথা। ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ হাম এবং রুবেলা টিকাদান কার্যক্রম সরকার পরিচালনা করে। এ কার্যক্রমের আওতায় ৯ মাস থেকে ৯ বছর বয়সী প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়া হবে, বাংলাদেশে এ বয়সী শিশুদের ৯৫ শতাংশেরও বেশি।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, করোনা সংকট শুরুর আগে বিশ্ব হামের সংকট মোকাবিলায় সংগ্রাম করছিল, যা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। যদিও করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তবে একটি প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আরেকটি রোগের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের বিনিময়ে হতে পারে না। এর অর্থ হচ্ছে ক্রমবর্ধমান করোনা মহামারি মোকাবিলার সঙ্গে সঙ্গে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য সব রোগের জন্য টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য সবকিছু যাতে আমাদের থাকে তা নিশ্চিত করা।

হাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণ অনেক এবং এগুলো চিহ্নিত করতে হবে। হামের টিকা যাতে সহজলভ্য হয় ও নিরাপদে সরবরাহ করা হয় এবং যত্নকারীরা যাতে এ টিকার জীবন-রক্ষাকারী দিক সম্পর্কে বুঝতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য টিকাদানে নিয়োজিত বৈশ্বিক অংশীদাররা ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোতে নেতা এবং জনস্বাস্থ্য খাতে কর্মরতদের সম্পৃক্ত করছে। ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর ডব্লিউএইচও ও ইউনিসেফ হাম ও পোলিওর প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ ও মোকাবিলার জন্য জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানায়।

সান নিউজ/এসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

জায়েদের ফোন পানিতে ছুড়ে ফেললেন সাকিব

বিনোদন ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেটের...

রাজধানীতে তাপমাত্রা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি তাপপ্রবা...

চীনে সড়ক ধসে নিহত ১৯ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের দক্ষিণাঞ...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ বুধবার (১লা মে) বেশ কিছু খ...

বিরক্ত হয়েই শাকিবের পরিবার এই সিদ্ধান্ত 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ নায়ক শাকিব খানকে নতুন করে...

আমিরাতে প্রবল বৃষ্টিপাত, সতর্কতা জারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রবল বৃষ্টিপা...

এলপি গ্যাসের দাম কমলো 

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোক্তা পর্যায়ে আরেক দফা কমানো হলো তরলীকৃত...

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি’র প্রয়াণ

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

বজ্রপাতে প্রাণ গেল ২ জনের

জেলা প্রতিনিধি : রাঙামাটিতে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃ...

ঢাকায় ফিরল ৮ বাংলাদেশির লাশ  

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার সময় তিউ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা