মোঃ রাশেদুজ্জামান রাশেদ, পঞ্চগড়: পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রায় ৬ শত নরমাল ডেলিভারি (স্বাভাবিক সন্তান প্রসব) রেকর্ড করলেন সিএইচসিপি মেহেরুন নেহার লিলি। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রতিফলন করলেন তিনি। এতে করে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে গর্ভবতী মায়েদের আস্থা তৈরি করে এলাকায় প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
গত সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ৮ বছর ধরে চালিয়ে আসা নরমাল ডেলিভারি ৬শ-তে সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সবার কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন এই নারী। সরকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌছে দেয়া স্বাস্থ্য সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি আস্থা বহুগুণে বেড়েছে।
জানা গেছে, সীমান্তের এক অজপাড়াগা বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে কাজিপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক। ১৯৯৮ সালে ক্লিনিকটি স্থাপনে এ এলাকার জমি দিয়েছিলেন রমিনা খাতুন। এ ক্লিনিকটি থেকে তেঁতুলিয়া হাসপাতালের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার ও জেলা আধুনিক সদর হাসপাতাল ৩৫ কিলোমিটার। ২০১১ সালে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়ে তেঁতুলিয়া হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন প্রাথমিক চিকিৎসা।
২০১৪ সালে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে কমিউনিটি স্কীল বার্থ এটেনেডেন্ট (সিএসবিএ) বিষয়ে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পরের বছর থেকেই অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি নরমাল ডেলিভারি কার্যক্রম শুরু করেন। প্রথম ডেলিভারির কাজটি করেছিলেন বুকে দুরু দুরু ভয় নিয়ে। ১ ঘন্টার চেষ্টায় সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবের পর ছড়িয়ে পরে কাজের পরিচিতি। একে একে দীর্ঘ ৮ বছরে ৬শ নরমাল ডেলিভারি করে এলাকার হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের কাছে হয়ে উঠেন আস্থার নতুন ঠিকানা।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনীদের হত্যার লিস্ট করেছে রাশিয়া
মেহেরুন নেহার লিলি বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমার প্রচণ্ড ভয় লাগতো। ভাবতাম আমার দ্বারা এ জটিল কাজ কিভাবে সম্ভব হবে। ফরিদা আক্তার নামের এক নারীর প্রথম ডেলিভারি সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে আমার সাহস বেড়ে যায়। শীত কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে রাতভর পরিশ্রম করে যখন গর্ভবতী মায়ের গর্ভ হতে ফুটফুটে সুস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। তখন ভুলে যেতাম সব কষ্ট। ডেলিভারি করতে পারলে আমার খুব আনন্দ হয়। আমার নিকট আত্মীয় অনেকের ডেলিভারি করেছি যেটা আমার অতৃপ্ত ভাললাগা ও প্রাপ্তি। আমার এ অসাধ্য কাজে সার্বিক পরামর্শসহ সাহস জুগিয়েছেন তৎকালীন সিভিল সার্জন ডাঃ পীতাম্বর রায়, এইচ আই শরীফ উদ্দিন, এএইচআই জমির উদ্দিন এবং এইচএ দেলোয়ার হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
লিলি আরও বলেন, ভালোবাসা দিবসে আল্পনা বেগম নামের এক প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি করে ৬শ পূর্ণ করলাম। নতুন বছরে জানুয়ারিতে ১১টি ও চলতি মাস ফেব্রুয়ারি ৫টি নরমাল ডেলিভারি করেছি। বিশেষ করে এখানকার হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ যারা সিজার করাতে পারেন না, তারা খুব সহজে নরমাল ডেলিভারির আস্থা নিয়ে আমার কাছে আসছেন। এখন পর্যন্ত কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটি শিশু ও মা সুস্থ রয়েছেন। এখন রাত-দিনে সমস্যা হলেই ডাক পড়ে। রোগীরা সরাসরি কিংবা মুঠোফোনে সমস্যার কথা বলছেন। তাদের সেবা করতে পেরে ভালো লাগে।
আরও পড়ুন: শহিদ মিনারে দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ১০
প্রসূতি আল্পনা বেগম জানান, লিলি আপা ভালো মানুষ। যখনই তাঁকে ফোন দিই তখনই পাওয়া যায়। নরমাল ডেলিভারিতে তাকে ডাকলেই পাওয়া যায়। খুব সুন্দরভাবে অল্প সময়েই আমার ডেলিভারি সম্পন্ন করেছেন। এতে আমার খরচও বেঁচে গেছে। তাঁর কাজে আমিসহ সবাই সন্তুষ্ট।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.আবুল কাশেম বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে ৬শ পূর্ণ হওয়াটা অত্যন্ত গৌরবের। উত্তরাঞ্চলে এরকম রেকর্ড খুবই কম। অত্র উপজেলার অন্যান্য ক্লিনিকগুলোতে গর্ভবতী নারীর অভিভাবকরা কমিউনিটি ক্লিনিকে এনে নরমালি ডেলিভারি করাচ্ছেন। সিএইচসিপি মেহেরুন নেহার লিলির এ রেকর্ড প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সান নিউজ/এমকেএইচ
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            