ছবি : সংগৃহিত
শিক্ষা
সুন্দরগঞ্জে বিদ্যালয়ে জটিলতা

ফায়দা লুটছে এক শ্রেণির বোর্ড কর্মকর্তা!

গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি : শিক্ষায় জাতির মেরুদন্ড এই প্রবাদটি প্রাচীন কাল থেকেই বিশ্বের মানুষের কাছে সমাদৃত। পরবর্তীতে এ প্রবাদটির সাথে মিল রেখে মনীষীরা বলেছিলেন সুশিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। আর এ শিক্ষা গ্রহণের স্থান হল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত।

আরও পড়ুন : ট্যাব বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

এ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে গতিশীল করতে সরকার বিভিন্ন ধাপে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেখাশুনা করার জন্য শিক্ষা বোর্ড স্থাপনসহ প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলাকে গুরুত্ব দিয়ে জেলা ও উপজেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস স্থাপন করেন। শিক্ষা কর্মকর্তারাই প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও শিক্ষার মান উন্নয়নে এসব দেখা শুনা করে থাকে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ ১৫৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও ডিপ্লোমা ইন্সিটিউট ৩টি, কারিগরী কলেজ ৮টি এবং বেসরকারি আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার সুনাম এক সময় চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল কিন্তু বর্তমানে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান খুবই হতাশা জনক।

উপজেলায় ৫২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৫টি কলেজ রয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের পদ ও নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। আর এই জটিলতাকে পুঁজি করে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ফায়দা হাসিল করছে।

আরও পড়ুন : নকল করতে বাধা দেওয়ায় তাণ্ডব

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্মপুর দৌলত ডাকুয়া মেমোরিয়াল (ডিডিএম) উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে মোঃ শরিফুল ইসলাম ও শিরিন মোছাঃ শামসাদ বেগম এর মধ্যে জটিলতা চলে আসছে। তথ্য সূত্রে জানা যায়, গত ২০১১ সালের এপ্রিল মাসের ৮ তারিখে শরিফুল ইসলামকে প্রধান শিক্ষক পদে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রদান করেন।

তিনি ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সফলতার সাথে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালন করে আসা কালীন সময়ে ২০১৭ সালে শরিফুল ইসলামকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়। তবে তাকে চ‚ড়ান্তভাবে বরখাস্ত না করে বিধি-বহির্ভ‚তভাবে গত ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসের ৫ তারিখে শিরিন মোছাঃ শামসাদ বেগমকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ায় উক্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। জটিলতা দিনে দিনে বাড়তে থাকলে বিষয়টি মহামান্য হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ে।

মহামান্য হাইকোর্ট শিক্ষক শরিফুল ইসলামকে Contempt Petition No-420/2017, date: 12-01-2023 and writ petition No- 11509/2012, date: 05-05-2014 এর আলোকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্ধারণ করেন। স্মারক নং: ৪ জি-১৭৬৩-ম/০৭.২৬১ এর ভিত্তিতে শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মাধ্যমিক-১, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ, ঢাকা এর স্বাক্ষরিত এক পত্রের আলোকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে শরিফুল ইসলামকে ২সপ্তাহের মধ্যে এমপিওভুক্তির জন্য আদেশ প্রদান করেন।

আরও পড়ুন : নোয়াখালীতে ৪ শিক্ষককে অব্যাহতি

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ, ঢাকা, স্মারক নং: ৪ জি-১৭৬৩-ম/০৭.২৬১ এর আলোকে শরিফুল ইসলামকে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্ধারণ করা হলে প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুরে এডহক কমিটি অনুমোদনের জন্য ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১২ তারিখে আবেদন করেন।

বোর্ড কর্তৃক ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ২তারিখে বিদ্যালয় পরিদর্শক মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত এক পত্রে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি ৬ মাসের জন্য অনুমোদন দেন। যার স্মারক নং: ২/এস/২৫/১৩৬৫(৬). কোন একটি মহলকে খুশি করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ১২ তারিখের স্মারক নং: ২/এস/২৫/১৪৫৩(৬) পত্র দ্বারা গত ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ২ তারিখের ২/এস/২৫/১৩৬৫(৬) নং স্মারক পত্রটি কোন কারণ ছাড়াই প্রত্যাহার করেন।

ফলে ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ২ তারিখে অনুমোদিত এডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে একটি (৩৮৫৬/২৩নং) রীট পিটিশন দায়ের করেন। যার ফলে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ ০২-০৪-২০২৩ ইং তারিখে ১২-০৩-২০২৩ ইং তারিখের ২/এস/২৫/১৪৫৩(৬) স্মারকটি ৬ মাসের জন্য নিবৃত্তি) করেন অর্থাৎ ০২-০৩-২০২৩ ইং তারিখের স্মারক নং ২/এস/২৫/১৩৬৫(৬) অনুযায়ী পূর্বের কমিটি ৬ মাসের জন্য বহাল থাকলে ও ১৬-০৪-২০২৩ ইং তারিখে স্মারক নং- ২/এস/২৫/১৭৭৩(০৬) এর আলোকে আরো একটি এডহক কমিটি দেয়ায় বিদ্যালয়ে দু'টি এডহক কমিটির উদ্ভব হয়েছে। ০২-০৪-২০২৩ ইং তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত ৩৮৫৬/২৩ নং রীট পিটিশনের আদেশের বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুরের চেয়ারম্যানকে ১২-০৪-২০২৩ ইং তারিখে পত্র দ্বারা অবগত করা হলেও ১৬-০৪-২০২৩ ইং তারিখে আবু হেনা মোস্তফা কামাল বিদ্যালয় পরিদর্শক মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর স্বাক্ষরিত স্মারক নং: ২/এস/২৫/১৭৭৩(০৬) এর আলোকে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে একেএম রেজাউল করিম (মুক্তি) কে সভাপতি করে নতুন আরেকটি এডহক কমিটির অনুমোদন দেয়। সচেতন মহলের প্রশ্ন হলো ''মহামান্য হাইকোর্ট বড় নাকি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড বড়.?"

আরও পড়ুন : নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের ৪র্থ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন

প্রধান শিক্ষক মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, কাগজ পত্র ও মহামান্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী আমি অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক। পরে তাকে দাফতরিক কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে এ আশঙ্কায় আমি প্রতিষ্ঠানে কম গেলেও ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা আমার স্বাক্ষরেই দেয়া হচ্ছে। শিরিন মোছাঃ শামসাদ বেগম বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ কি আছে আমি জানি না, তবে মাউশি ও দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর এর বিদ্যালয় পরিদর্শক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ধর্মপুর ডি.ডি.এম উচ্চ বিদ্যালয় নামেই আমি জানি, তবে শরিফুল ইসলাম ধর্মপুর দৌলত ডাকুয়া মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় নামে কাগজ পত্র দাখিল করায় আমি কমিটি অনুমোদন দিয়েছি। অনুমোদিত কমিটি প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, বোর্ড কতৃপক্ষ প্রত্যাহার করার ক্ষমতা রাখেন। প্রত্যাহারের ব্যাপারে কোন পরিপত্র আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে- তিনি কোন উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এছাড়াও প্রধান শিক্ষকের পদ ও নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে মহামান্য হাইকোর্ট ও নিম্ম আদালতে মামলা মোকদ্দমা চলছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নতুন দুলাল ভরট উচ্চ বিদ্যালয়, সীচা উচ্চ বিদ্যালয়, চন্ডিপুর এফ.হক স্কুল এন্ড কলেজ, বজরা কঞ্চিবাড়ী আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়, ঝিনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বজরা হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, শিবরাম স্কুল এন্ড কলেজ, শোভাগঞ্জ গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়, ঘগোয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

আরও পড়ুন : কর্মমুখী শিক্ষা বাড়ানোর তাগিদ

মাধ্যমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে মামলা মোকদ্দমা চলায় শিক্ষার মান নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগী মহল উদ্বিগ্ন। এমন কি উপজেলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধর্মপুর আব্দুল জব্বার ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকগণ দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে।

দীর্ঘ দিন ধরে দুই গ্রুপের মধ্যে অধ্যক্ষ নিয়ে চলমান ঝামেলায় কলেজে নিয়মিত কোন ক্লাস হচ্ছে না। এতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা হতাশায় ভুগছে। অভিভাবক, শিক্ষানুরাগী মহল ও এলাকাবাসী কলেজের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সদয় দৃষ্টি কামনা করছেন।

সান নিউজ/এইচএন

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নোয়াখালীতে ভূমি দুস্যুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন 

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর কোম...

ফসলের ক্ষতি করে চলছে অবৈধ ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রি

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

ভূঞাপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় 

খায়রুল খন্দকার, টাঙ্গাইল: প্রচণ্ড তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ট। নেই...

গরমে বারবার গোসল করা কি ক্ষতিকর?

লাইফস্টাইল ডেস্ক: বৈশাখের শুরু থে...

আজ শেরে বাংলার ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ অবিভক্ত বাংল...

হিটস্ট্রোকে একদিনেই ৬ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রা...

আইনি সেবায় মানবিকতাকেও স্থান দেয়া উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আইনি সেবা প্রদানকালে পুঁথিগত আইন প্রয়োগের...

ভূঞাপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় 

খায়রুল খন্দকার, টাঙ্গাইল: প্রচণ্ড তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ট। নেই...

প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরছেন কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: থাইল্যান্ড সফর শেষে আগামীকাল ব্যাংকক থেকে...

ডিপিএস এসটিএস স্কুলে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিপিএস এসটিএস স্কুল ঢাকার ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা