এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে সুপেয় খাবার পানির ব্যবহারের জন্য সরকারিভাবে পুকুরে ৩২ টি সোলার এস পিএসএফ ও হস্তচালিত ২ শতাধিক পিএসএসফ নির্মাণ করা হলেও এর মধ্যে শতাধিক পিএসএফ বছরের পর বছরজুড়ে অকেজো অবস্থা পড়ে রয়েছে। স্বাস্থ্য সম্মত খাবার পানি ব্যবহার করতে পারছে না কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।
আরও পড়ুন : শিশু রেদোয়ান বাঁচতে চায়
সংরক্ষিত পুকুরের ঘেরা বেড়া তারকাটা কেটে ব্যক্তিস্বার্থে অরক্ষিত করে রেখেছে। বেদখল করে পুকুরের পাড়ে গড়ে তুলেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফিল্টার ছাড়াই পুকুর থেকে সরাসরি পানি সংগ্রহ করছেন সাধারণ মানুষ। কোথাও কোথায় পুকুরে মাছ চাষ করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সংশ্লিষ্টদের নেই তদারকি।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নসহ ১টি পৌরসভায় প্রত্যান্ত গ্রামগুলোতে শুকনা মৌসুমের শুরুতেই সুপেয় খাবার পানির পুকুরগুলো পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। খাবার পানি ব্যবহারে উপযোগী করার জন্য সরকারিভাবেজেলা পরিষদের মাধ্যমে অধিকাংশ পুকুর পুনঃখনন করা হয়।
আরও পড়ুন : মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলাকে ভূমিহীন ঘোষণা
এ ছাড়াও জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় সিডর পরবর্তী ২ শতাধিক হস্তচালিত পিএসএফ ও ৩২টি সোলার এস পিএসএফ নির্মাণ করা হয়। সরকারি অর্থ বরাদ্দে প্রতিটি সোলার পিএসএফ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার এবং হস্তচালিত প্রতিটি পিএসএফ’এ ব্যায় ৬০ হাজার টাকা।
এ পিএসএফগুলো নির্মাণের পর থেকে ২/৪ বছর ব্যবহারের উপযোগী থাকলেও বর্তমানে অধিকাংশ পিএসএফ অকেজো অবস্থায় পরে রয়েছে। ফিল্টার ছাড়াই সরাসরি পুকুর থেকে খাবার পানি নিয়ে পান করছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন : রামুতে বাস-ইজিবাইক সংঘর্ষে যুবকের মৃত্যু
বহরবুনিয়া ইউনিয়নের সিরাজ মাষ্টারের বাজার সংলগ্ন সরকারি পুকুরে নির্মিত সোলার পিএসএফ ফিল্টারের মটর নষ্ট হয়ে দেড় বছর ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায়। ১ ও ২নং ওয়ার্ডের দুই গ্রাম ও সীমান্তবর্তী বারইখালী ইউনিয়নের তাফালবাড়ি গ্রামের প্রায় ৩/৪ হাজার মানুষ এ পুকুর থেকে প্রতিনিয়ত খাবার পানি ব্যবহার করছে।
ফিল্টার ছাড়াই সরাসরি পানি পান করায় রোগ পিড়া দিন দিন বাড়ছে। সংরক্ষিত পুকুরের ৩টি স্থান থেকে তার কাটা কেটে গাছ বাসিয়ে বানানো হয়েছে একাধিক ঘাট। পুকুরের জমি বে-দখল করে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছে ৪/৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বনগ্রাম ইউনিয়নের বিষখালী সরকারি পুকুরের সোলার পিএসএফ’র প্যানেল বোর্ডটি চুরি হওয়ায় প্রায় ২ বছর ধরে অকেজো ফিল্টার ছাড়াই পুকুর থেকে পানি ব্যবহার করছেন।
আরও পড়ুন : ঈশ্বরগঞ্জে অটিজম বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
৮ গ্রামসহ সীমান্তবর্তী কচুয়া উপজেলার কন্দপপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। সুপেয় পানি না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে তারা। একই ইউনিয়নের খাবার পনি ব্যবহারে উপযোগী মোহনপুর সরকারি পুকুরে ব্যক্তিস্বার্থে মাছ চাষ করে ব্যবহারে অনুপযোগী করে তুলছে প্রভাবশালীরা।
এদিকে পুকুরে পানি নিতে আসা বহরবুনিয়া গ্রামের কুলসুম বেগম, রাসেল শেখ, বৃদ্ধ আলকাছ শেখ বলেন, দেড় বছর ধরে ফিল্টার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পুকুর থেকে সরাসরি পানি নিয়ে খেতে হচ্ছে। আগেতো জীবন বাঁচাবো, সরকারি কর্মকর্তার, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা এগুলো কি দেখে না।
আরও পড়ুন : নোয়াখালীতে ট্রাক্টার চাপায় ব্যবসায়ীর মৃত্যু
এ সম্পর্কে উপজেলা উপ-সহকারি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় ৩২টি সোলার এস পিএসএফ মধ্যে ২টি অকেজো রয়েছে। ২ শতাধিক হস্তচালিত পিএসএফ’র মধ্যে কিছু পিএসএফ অকেজো।
এগুলো স্থানীয়ভাবে রক্ষাণাবেক্ষন ও দেখভালের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে সুবিধাভোগীদের দায়িত্ব রয়েছে। অনুপযোগী পিএসএফ’র বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদেরকে অবহিত করা হয়েছে। সংরক্ষিত পুকুরে মাছ চাষের বিষয়টি জেলা পরিষদের কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন : প্রবাসীর স্ত্রীকে গণধর্ষণ: যুবক গ্রেফতার
সুপেয় পানির জন্য বিকল্প বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ইতোমধ্যে ৩ হাজার লিটারের ২ হাজার রেইন ওয়াটার হারভেষ্টিং (পানির ট্যাংকি) সরকারিভাবে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্পেশাল বরাদ্দে ৪ হাজার ৩২০টি পানির ট্যাংকি স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
সান নিউজ/এইচএন