সারাদেশ

‘আসমানী’র মতো অভাব-অনটন আর দূর্ভোগে কাটছে ছকিনা’র জীবন 

নিজস্ব প্রতিনিধি, রংপুর : পল্লীকবি জসিম উদ্দিন ষাটদশকের সেই আসমানী কবিতায় লিখেছিলেন ‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা, ভিন্ন পাতার ছানি। একটু খানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পড়ে পানি। একটু খানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে, তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে’।

তেমনি একাবিংশ শতাব্দীতে এসে জসিম উদ্দিনের আসমানী রুপে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পূর্ব দেবু গ্রামের ছকিনা বেগম আজও মাথা গোজার ঠাই পাননি। অভাব-অনটন আর দুর্ভোগে কাটছে তাদের জীবন। সেই কবিতার মর্মবাণী যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে পীরগাছার প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, সমাজ ও বিত্তবানদের। ভিটেমাটিহীন ছকিনা বেগম সুখের আশায় ১৮ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন আরেক ভূমিহীন রফিকুল ইসলামকে।

সুখ তাদের কপালে জোটেনি। অভাব-অনটনে দিন পেরিয়ে গেলেও আজও জোটেনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা। অন্যের জমিতে কাটাতে হচ্ছে জীবন। বর্তমানে অসুস্থ্য স্বামী, তিন সন্তান এবং বৃদ্ধ শাশুড়ীকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে চালিয়ে যাচ্ছেন ছকিনা বেগম।

এ অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুরের পূর্বদেবু আনন্দ বাজার গ্রামের বাসিন্দা ছকিনা’র পরিবারকে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ছকিনা বেগম তার বৃদ্ধ শাশুড়ীকে নিয়ে অন্যের জমিতে কাজ করছেন। অসুস্থ স্বামী রফিকুল ইসলাম বাড়ির উঠানে বসে আছেন। ছোট একটি কুড়ে ঘর থাকলেও তাতে নেই কোন বেড়া। হু-হু করে ঢুকছে হিমেল বাতাস। বর্ষায় পানিতে নাস্তানাবুদ হতে হয় সকলকে। ওই এলাকার বিত্তশালী অনেক ব্যক্তির চোখের কোনায় বসবাস করলেও তারা ফিরে তাকায়নি। দুই মেয়ে, এক ছেলের মধ্যে মেয়ে দু’টি বড়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। অভাবের তাড়নায় খরচ যোগাতে না পারায় বন্ধ সন্তানদের লেখাপড়া।

বাড়ির একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি রফিকুল ইসলাম গত ৬ মাস থেকে অসুস্থ্য। তার মেরুদন্ডের হাড় ক্ষয় হয়ে পাটাচলা করতে পারেন না। গত ২৯ ডিসেম্বর রফিকুল ইসলামের বাবা বৃদ্ধ কছিম উদ্দিনও অসুস্থ্য হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান। তাকে দাফন করা হয় স্থানীয় মসজিদের কবরস্থানে। সেজন্য একমাত্র ছোট বাছুর গরু বিক্রি করে মসজিদ কমিটিকে দিতে হয়েছে ৫ হাজার টাকা। এমনিতেই ভূমিহীন রফিকুলের নাজুক অবস্থা।

তার উপর বাবা’র লাশ দাফনে সমাজপতিদের খড়গ। অর্থের অভাবে রফিকুল ইসলাম বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে।
রফিকুলের স্ত্রী ছকিনা বেগম বলেন, অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় আমার ভাসুর ও শ্বশুর মারা গেছে। এখন স্বামী মৃত্যুর পথযাত্রী। তিন সন্তান নিয়ে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। কাল কি খাব তাও জানি না।
অসুস্থ্য রফিকুল জানান, ধার-দেনা করে অনেক টাকা খরচ করেছি। এখন আর কেউ দেয় না।

ওই গ্রামের আব্দুর রশিদ, আব্দুল মান্নান ও জাফর ইকবাল বলেন, এসব অসহায়দের পাশে কেউ নেই। সবাই ভোটের জন্য পাগল। এ ইউনিয়নে ১২-১৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। কিন্তু কেউ রফিকুলের খোঁজ নেয় না। তার চিকিৎসা ও একটি ঘর দরকার।

স্থানীয় মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহ জাহান মিয়া বলেন, মসজিদের জায়গায় কবর দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী দাফনের জন্য টাকা নেয়া হয়েছে। তারপরও গ্রামে চাঁদা তুলে কুলখানি করে দেয়া হয়েছে।

আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুছ ভূইয়া বলেন, আমি মাঝে মাঝে ঔষধ কেনার জন্য তাকে টাকা দিয়েছি। তার অবস্থা শোচনীয়। ওই পরিবারের পাশে সকলের দাঁড়ানো উচিত।

এব্যাপারে তাম্বুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রওশন জমির রবু সরদার বলেন, ওই গ্রামের যদি কেউ তাদের জমি দান করেন, তাহলে পরবর্তী তালিকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘর করে দেয়া হবে।

সান নিউজ/এইচএস/এনকে/এস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উলিপুরে অম্বিকাচরণ রায় শিক্ষাবৃত্তি প্রদান 

কুড়িগ্রামের উলিপুরে অম্বিকাচরণ রায় শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। সোমবার (২৯...

লক্ষ্মীপুরে মব সৃষ্টি করে জুমার খুতবায় বিএনপি নেতাদের বাঁধা, ভিডিও ভাইরাল

লক্ষ্মীপুরে জুমার নামাজের খুতবায় বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতাদের বির...

অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে দেশের বিজ্ঞানী: রাফায়েল আহমেদ শামীম

রাফায়েল আহমেদ শামীম দেশের উন্নয়নের মূল চালি...

বাগেরহাটে লবণাক্ত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে মৎস্য ঘেরের ভেড়িতে লবণাক্ত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার...

 লক্ষ্মীপুর নারীকে জবাই করে হত্যা, ঘাতক আটক

লক্ষ্মীপুরে রাশেদা বেগম নামে এক নারীকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। নিহত নারী রা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা