বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই, দুই একটি ঔষুধ ছাড়াই সকল ঔষুধ কিনতে হয় বাহির থেকে। পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য যেতে হচ্ছে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে।
অন্ত: বিভাগে রোগীদের ৩৫ প্রকারের ঔষুধ সরবরহের নামের তালিকা টানানো থাকলেও ভর্তিকৃত রোগীরা পাচ্ছেন শুধু মাত্র গ্যাসের ট্যাবলেট, জ্বরের প্যারাসিট্যামল, সর্দি কাশির জন্য হিস্টাসিন ট্যাবলেট, সিরাপ ও প্রাথমিক পর্যায়ে দুই একটি স্যালাইন বেশিরভাগ ঔষুধ রোগীদের কিনে আনতে হচ্ছে বাহির থেকে। জরুরী বিভাগে সাধারণ রোগীদের মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহনের জন্য ০১৭৩০-৩২৪৮৭৫ নম্বর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি সার্বক্ষণ বিজি করে রাখা হয়েছে। কোন প্রকার কলকরে পাওয়া যাচ্ছেনা। কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও হয়নি কোন ব্যবস্থা। ঔষুধ কোম্পানির ভিজিট করা প্রতিনিধিদের খুশি করতে ডাক্তাররা হাসপাতালের সরবরাহকৃত তালিকার ঔষুধ না লিখে গ্রæপ পরিবর্তন করে ভিজিট করা কোম্পানিদের ঔষুধ ব্যবস্থাপত্র লিখছেন। যার ফলে সাধারণ রোগীরা অর্থের অভাবে ঔষুধ কিনে খেতে পারছেনা। চিকিৎসা সেবা থেকে হচ্ছেন বঞ্চিত। রোগীরা সকালের নাস্তা পাচ্ছেন ১০ টায়, দুপুরে ১টার খাবার কোন কোন দিন বেলা ২ টায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলবর্তীমোরেলগঞ্জের প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করনে এ উপজেলার ৩৫ শর্য্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি ১৯৬২ সালে নির্মিত হলেও পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ৫০ শর্য্যায় রুপান্তরিত হয়। কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থায় হয়নি কোন পরিবর্তন। লাগেনি আধুনিকতার চিকিৎসার ছোয়া।
বৃহত্তর এ উপজেলার সাধারণ জনগনের স্বাস্থ্য সেবা চলছে এখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে। ডাক্তার, জনবল সংকট সহ রয়েছে নানা বিধ সমস্যা। সরকারি লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায়ে পরিক্ষা নিরিক্ষার আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও ব্যবহৃত হচ্ছে না। রুম ও জনবল সংকটে বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে যন্ত্রপাতি।
হাসপাতালে নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে দূর্গন্ধ পরিবেশে চলছে স্বাস্থ্য সেবা। জরুরী বিভাগের সামনে পানি জমে স্যাঁতস্বেতে পরিবেশ, প্রবেশের মূল গেটের পাশে, টিকিট কাউন্টারে ভিতরে এবং রোগীদের বসার স্থানে চেয়ারের নিচে ময়লা আবর্জনা পড়ে রয়েছে।
ভর্তিকৃত ভাইজোড়া গ্রামের জাহানারা বেগম, চিংড়াখালী গ্রামের রেকসোনা মিম, সোনাখালী গ্রামের মদিনা, উত্তর কালিকাবাড়ী গ্রামের আয়শা বেগম, বড়পড়ি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, হোগলাবুনিয়া গ্রামের মোতালেব শেখসহ একাধিক চিকিৎসাধীন রোগীরা বলেন, ডাক্তার নিয়মিত এসে দেখে যাচ্ছেন ঔষুধ যা লিখছেন নিজেদের বাহির থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে দিচ্ছে মাত্র দুই একটি ট্যাবলেট। রোগীর স্বজনরা বলেন, ৮দিন পর্যন্ত বৃদ্ধ মা মুখে কিছুই খায় না তা দেখে কোন সন্তান বসে থাকতে পাড়েনা তাই স্বার্ণ বন্ধক রেখে মাকে চিকিৎসায় নিয়ে এসেছি। সরকারি হাসপাতাল থেকে শুধু মাত্র একটি সিরাপ ও ক্যাপসুল পেয়েছি। ২হাজার ৫শত টাকার ঔষুধ বাহির থেকে কিনেছি। পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য ৩হজার ৫শত টাকা ব্যায় করেছি আর কতো লাগবে জানিনা। সরকারি হাসপাতালে কি কিছুই নেই। আমাদের মতো গরীবের টাকা না থাকায় চিকিৎসা হচ্ছেনা। তা হলে সরকারি হাসপাতালে এলাম কেন?
এ রকম ৩/৪ হাজার টাকার ঔষুধ বাহির থেকে কিনেছেন একাধিক রোগীর স্বজনরা। অভিযোগ রয়েছে প্রতিদিন সকালে এসে একবার মাত্র রোগীর বোডের নিচ থেকে ময়লার ঝুড়ি নিয়ে যায়। সারাদির আর কোন খবর থাকেনা। দূর্গন্ধের মধ্যে থাকতে হয় রোগীদের। বড় ডাক্তার কে তো কখনও দেখিনা রোগীর কাছে। এসব দেখার কি কেউ নেই ?
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডা: মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি উপজেলায় যোগদানের পরে ঔষুধ ক্রয় কোন টেন্ডার হয়নি। পুর্বের টেন্ডারের ঔষুধ দিয়ে চলতে হচ্ছে, যে কারনে ঔষুধের কিছুটা সংকটে সাময়ীক সমস্যা হচ্ছে। অন্ত: বিভিাগে সরবরাহ কৃত ঔষুধের বাহিরে গ্রæপ পরিবর্তন করে কোন ঔষুধ না লেখার জন্য ডাক্তারদের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। এ রকম কোন ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে দেখা হবে।
সান নিউজ/আরএ