রাজবাড়ীর পাংশার মাছপাড়া ইউনিয়নের রামকোল বাহাদুরপুর এলাকার খামার থেকে এবার কোরবানির হাটে আসছে ‘সাদা পাহাড়’ নামে পরিচিত ৩৮ মনের এক বিশাল ষাঁড়। বিশাল আকৃতির এই ষাঁড়টি জেলার মধ্যে সর্ববৃহৎ বলে দাবি করেছেন মালিক প্রশান্ত কুমার দাস।
দৈহিক গঠনে সাদা রঙের হলেও গলা থেকে বুক পর্যন্ত রয়েছে সোনালি আভা। গর্জনে ভরিয়ে তোলে আশপাশ—চেনা মানুষজন বুঝে নেয় কখন ক্ষুধার্ত, কখন গোসল করতে চায় কিংবা আকাশে মেঘ জমলে সে অস্বস্তি প্রকাশ করে গর্জনেই। শান্ত স্বভাবের হলেও আদর না পেলে সে অভিমান করে গর্জে ওঠে বলে জানান খামারের লোকজন।
২০২২ সালের মার্চে ‘ভাই ভাই ডেইরী খামার’ প্রতিষ্ঠা করেন ব্যবসায়ী প্রশান্ত কুমার। কুষ্টিয়ার বালিয়াপাড়া হাট থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদার এক খামারির কাছ থেকে ষাঁড়টি কেনা হয়। এরপর যত্নে-ভালোয় তিন বছরে এটি পরিণত হয় এক বিশাল আকৃতির প্রাণীতে।
প্রশান্ত কুমার জানান, বর্তমানে ষাঁড়টির ওজন প্রায় ১,৪৫০ কেজি বা ৩৮ মন। দৈর্ঘ্যে ৮ ফুট এবং ব্যাসার্ধেও প্রায় সাড়ে ৮ ফুট। এত বড় গরু রাখতে গিয়ে খামারে তিনটি গরুর জায়গা দখল করে বসে আছে ‘সাদা পাহাড়’। প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার থেকে ৩,২০০ টাকার খাবার খায় সে। খাবারে থাকে গমের ছাল, চালের গুঁড়া, খড়, খৈল, খেসারি, ছোলা ও কাঁচা ঘাস।
খামারের দেখাশোনা করেন প্রশান্তের স্ত্রী ভরতী রানী দাস ও কয়েকজন কর্মচারী। কর্মচারী কালাম প্রামাণিক বলেন, ‘প্রতিদিন তিন থেকে চারবার গোসল করাতে হয়। নির্দিষ্ট সময়েই খাবার দিতে হয়—না হলে গর্জন করে নিজের অসন্তোষ জানায়।’
খামারে বর্তমানে মোট ৩৪টি গরু রয়েছে, এর মধ্যে চারটি গাভি এবং বাকিগুলো ষাঁড়। এছাড়াও খামারে দুইটি উন্নত জাতের বড় খাসি রয়েছে, যাদের প্রতিটির ওজন প্রায় ৪৫ কেজি। এই খাসি দুটির নাম ‘লাল বাবু’ ও ‘ধলা বাবু’। গত কোরবানিতে এদের দাম উঠেছিল লাখ টাকার বেশি।
‘সাদা পাহাড়’ নামটি এসেছে তার গায়ের রঙ ও আকারের কারণে। শুরুতে স্ত্রী ভরতী রানী আদর করে তাকে ‘প্রিন্স’ ডাকতেন। এখন এলাকাবাসীও তাকে ‘সাদা পাহাড়’ নামেই চেনে।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ষাঁড়টি বিক্রি করতে চান মালিক। দাম হাঁকছেন ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা। স্থানীয়ভাবে ক্রেতা না মিললে রাজধানী ঢাকা বা চট্টগ্রামের হাটে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস জানান, "এই জেলার মধ্যে এত ওজনের আর কোনো ষাঁড় নেই। খামারিকে দ্রুত স্থানীয়ভাবে বিক্রির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ এত বড় পশু রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।"
সাননিউজ/ইউকে