কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে মৌসুমী ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে বাজারজাত করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। এখানে ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথাইলিন ও ইথরিল স্প্রে দিয়ে পাকানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফল। বর্তমানে কটিয়াদী বাজারে বিভিন্ন মোকাম থেকে আনা ফলগুলোর অধিকাংশই কৃত্রিমভাবে পাকানো। বাণিজ্যিকভাবে কলা থেকে শুরু করে সব ধরনের ফল পাকানোর জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ও রং ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় একটি আনারস ১২ থেকে ১৫ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যায় না। কিন্তু এ ফলে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক কেমিক্যাল যেমন ৫০০ পিপিএম এনএনএ বা ১০০ পিপিএম জিএ-৩ দ্বারা শোধন করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় প্রায় ৪৬ দিনপর্যন্ত রাখা যায়। বর্তমানে রাসায়নিক প্রয়োগ করে স্বাভাবিক সময়ের আগেই ফল পাকানো হচ্ছে যার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে চলছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় কটিয়াদী উপজেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ফরমালিনও ইথরিল স্প্রে দিয়ে পাকানো ফল। এখানে আপেল, আঙ্গুর, কলা, আম, নাশপাতি কমলা লেবুসহ বিভিন্ন ফল যা দেশের বিভিন্ন মোকাম বা দেশের বাইরে থেকে আসা বেশিরভাগ ফল ঘরে রাখলে সহজে নষ্ট বা পচন ধরে না। কারণ উদঘাটন করতে গিয়ে জানা গেছে, আঙ্গুর, আপেল, নাশপাতি, কমলালেবুসহ দেশের বাইরে থেকে আসা বেশিরভাগ ফলেই মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। তাছাড়া স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অপরিপক্ক ফলে দেওয়া হচ্ছে কারবাইড কিংবা আগুনের তাপ। যে কারণে ফলে আসল স্বাদ যেমন পাওয়া যায় না তেমনি উপকারের বদলে দেখা দেয় মারাত্মক রোগব্যাধি। বিষাক্ত রাসায়নিক ও ফরমালিনযুক্ত এসব ফল খেয়ে মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী কাইয়ুম জানান, "এক গ্রাম ফরমালিন মিশ্রিত পানির মধ্যে ১০ থেকে ১২ কেজি আঙ্গুর বা নাশপাতি ভেজানো হয়, আর আপেল ও কমলালেবুতে দেওয়া হয় ছিটিয়ে। যে কারণে তিন চার সপ্তাহ রাখলেও পচন ধরে না বা এতে মাছিও বসে না। তবে ফরমালিনের ক্রিয়া নষ্ট হয়ে গেলে এই ফল তাড়াতাড়ি পচে যায়। অপর ফল ব্যবসায়ী বাবুল বলেন, আঙ্গুরও নাশপাতি খোলা রাখলে ২ থেকে ৩ দিন ভালো থাকে,আর আপেল ভালো থাকে ৫ দিন। অথচ পাইকারি বাজার থেকে ফল এনে বিক্রি করতে কখনো কখনো এক সপ্তাহেরও বেশি সময় লেগে যায়। যার ফলে তাদের ফরমালিন দেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে না।
সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারীদের মতে, বিশুদ্ধ খাদ্যঅধ্যাদেশ এবং বিশুদ্ধ খাদ্য সংক্রান্ত বিধি যুগোপযোগী করা উচিত। কারণ পুরনো আইন অনুযায়ী ভেজালের দায়ে দুইশত টাকা জরিমানা বা তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান আছে। ফলে খাদ্য ভেজালের জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলে সে দুইশত টাকা জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে যায়, যে কারণে বড় ধরনের সাজার ব্যবস্থা থাকলে এ বিষয়ে ফলপ্রসু কোন কিছু আশা করা যাবে।
কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আর এম ও ডাক্তার শাহরিয়ার নাজিম জানান, ফরমালিনযুক্ত ফল আর্সেনিকের চেয়েও ক্ষতিকর। এতে লিভার সমস্যাসহ ক্যান্সার হওয়ার অধীক ঝুঁকি থাকে।
সাননিউজ/ইউকে