মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: (৫ই আগষ্ট) আ’লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পদ্মা- মেঘনা ও গোমতী নদী মোহনাগুলো নৌ-ডাকাত বাহিনীর অবৈধ বালুর মহলে আধিপত্য বিস্তারে একাধিক ডাকাত বাহিনী মরিয়া হয়ে উঠেছে। জেলা সদর ও গজারিয়া উপজেলার মেঘনা নদীতে খুন আর গুলি বিনিময় নিত্যদিনের ঘটনায় দাঁড়িয়েছে। আধিপত্য বিস্তারের কারণে ঘটছে গুলাগুলি ও হত্যা। এতে নিরাপত্তাহীন হয়ে উঠেছে নৌপথ স্হানীয়দের দাবী।
এদিকে, মেঘনায় এখন সক্রিয় রয়েছে নয়ন-পিয়াস, কিবরিয়া মিজি ও কানা জহিরের নেতৃত্বাধীন ৩ টি ডাকাত বাহিনী। গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দিনগত রাতে জেলা সদরের আধারা ইউনিয়নের কালীরচর গ্রামের অদুরে মাঝ মেঘনায় দু’দল ডাকাত গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে ২ জন নিহত ও ১ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রাত সাড়ে ৭ টার দিকে কিবরিয়া মিজি ও জহিরুল ইসলাম ওরফে কানা জহিরের লোকজনের মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: প্রোগ্রামের চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ
নিহতরা হচ্ছেন- রিফাত হোসেন তুহিন (২৮) ও রাসেল ফকির (৩৩)। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আইয়ুব আলীকে (৪০) মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। নিহত রিফাত হোসেন তুহিনের বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে। অপর নিহত রাসেল ফকির জেলা সদরের আধারা ইউনিয়নের ভাষানচর গ্রামের কামাল ফকিরের ছেলে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, অবৈধ বালু উত্তোলনের নিয়ন্ত্রন নিতে কিবরিয়া ও কানা জহির বাহিনীর মধ্যে ওই গোলাগুলির ঘটনার প্রধান কারন। মুন্সীগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিল্লাল হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৩ জনকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ২ জনকে মৃত ঘোষনা ও অপর আরেকজনকে ঢামেকে প্রেরন করেন।
তিনি দাবী করেন, গোলাগুলির ঘটনাটি চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে হয়েছে। তাই বেশি কিছু বলতে পারবেন না। তবে চাঁদপুর নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। তদন্ত করে দেখছি। ঘটনাটি ঘটেছে মুন্সীগঞ্জের সীমানায় কালীরচর গ্রাম সংলগ্ন ভাষানচরে।
আরও পড়ুন: আকাশ পথে হঠাৎ অসুস্থ বাবর
পুলিশের সূত্র মতে, কিবরিয়া মিঝি জেলা সদরের কালীরচর গ্রামের মৃত বাতেন মিজির ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি ও দস্যুতাসহ মুন্সীগঞ্জ সদর, গজারিয়া ও মতলব উত্তর থানায় রয়েছে ডজন খানেক মামলা। একই গ্রামের মোহাম্মদ বেপারীর ছেলে জহিরুল ইসলাম ওরফে কানা জহিরের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ সদর, চাঁদপুর, গজারিয়া ও লৌহজং থানায় হত্যা ও ডাকাতিসহ দুই ডজন মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে, গত ১০ জানুয়ারি দিনগত রাত ১০ টার দিকে জেলার গজারিয়া উপজেলার কালীপুরা গ্রামের মেঘনা শাখা নদীতে স্পিডবোটে মহড়া দিতে গিয়ে ট্রলারের সঙ্গে নয়ন-পিয়াস বাহিনীর ৪ ডাকাত সদস্য নিহত হয়। এরা হচ্ছে ওদুদ বেপারী (৩৬), বাবুল সরকার (৪৮), সাবিক (২৬) ও নাঈম (২৪)। রাতের মেঘনায় নয়ন-পিয়াস বাহিনীর ওই সদস্যরা নৌযানে চাঁদাবাজি করতেই স্পিডবোট নিয়ে মেঘনায় নেমেছিলো বলে জানিয়েছেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা।
এরআগে বালু উত্তোলনের দ্বন্ধের জেরে খুন হয়েছে মেঘনার কুখ্যাত নৌ-ডাকাত বাবলা বাহিনীর প্রধান উজ্জল খালাসী ওরফে বাবলা (৪২)। গত বছরের ২২ অক্টোবর সকালে জেলার গজারিয়া উপজেলার মল্লিকেরচর গ্রামের একটি বাড়িতে অবস্থানকালে প্রতিপক্ষের গুলিতে খুন হন বাবলা। নয়ন বাহিনীর প্রধান নয়ন সরকার হচ্ছেন জেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের বাতের সরকারের ছেলে ও বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড পিয়াস সরকার একই গ্রামের মাহমুদ আলীর ছেলে। ডাকাত নয়নের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জসহ নদীবেষ্টিত বিভিন্ন জেলার থানা গুলোতে ৩২ টি মামলা রয়েছে। এছাড়া পিয়াসের বিরুদ্ধে রয়েছে ২৭ টি মামলা।
আরও পড়ুন: জুমার পর শিবিরের গণমিছিল
এছাড়া জেলা সদরের আধারা ইউনিয়নের জাজিরা গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরে রাতের আঁধারে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহবায়ক আবু ইলিয়াস শান্ত সরকারকে (৩৫) হত্যার অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ১ নভেম্বর দিনগত রাত ১০ টার দিকে প্রতিপক্ষরা তাকে হত্যা করে বলে নিহতের পরিবার দাবী করেছে। তবে পুলিশ বলছে স্পিডবোট ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষে যুবদল নেতার মৃত্যু হয়।
পরিবার ও পুলিশের ভিন্ন মতের কারনে যুবদল নেতার মৃত্যু এখনও রহস্যের বেড়াজালে আবদ্ধ। এ ঘটানয় নিহতের ভাই মামুন সরবার বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ ও আরো ৬-৭ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আর এ মামলায় ডাকাত গ্রুপ কিবরিয়া বাহিনীর প্রধান কিবরিয়া মিজিকে ৩ নম্বর আসামী করা হয়েছে।
মেঘনা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন ও চাঁদাবাজিতে ডাকাত বাহিনী গুলোর মধ্যকার সাম্প্রতিক খুনোখুনি ও গোলাগুলি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার শামসুল আলম সরকার বলেন, নদীতে নৌ-পুলিশ ও কোষ্টগার্ড রয়েছে। বিষয়টা তাদের কাজ। নৌ-পুলিশ ও কোষ্টগার্ড অভিযান চালিয়ে থাকে। আমরাও নৌডাকাত বা জলদস্যুদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। কাউকে আটক করতে পাছি। আটকে অভিযান চলছে।
সান নিউজ/এমএইচ
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            