পরিবেশ
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে বাংলাদেশ

বিষমুক্ত হচ্ছে না ঢাকার আকাশ

বিশেষ প্রতিনিধি:

‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ’ নামের একটি প্রকল্পে বাংলাদেশকে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দেয় বিশ্বব্যাংক। সেখান থেকে গত ১০ বছরে দেশে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর খরচ করেছে ২২১ কোটি টাকা। এর অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ১২৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে প্রশিক্ষণের নামে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর, গাড়ি কেনা, পরামর্শক ফি ও ভবন নির্মাণে। প্রকল্পটির অধীনে ১০ বছরে বিদেশে প্রশিক্ষণে গেছেন ২৯৬ জন কর্মকর্তা। তাদের কেউ কেউ আবার ১০ বারও বিদেশ সফর করেছেন অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রকল্পটি শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। ফলাফল হিসেবে বিশ্বের শীর্ষ বায়ু দূষণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম আসছে ঘুরে ফিরে। দেশে বায়ুর মান চরম খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে গত এক দশকে।

বিশ্বব্যাংকের ওই অর্থ পরিবেশ অধিদপ্তর কীভাবে ব্যয় করেছে, পরিবেশ উন্নয়নে কী ধরনের ভূমিকা রেখেছে, ঢাকার বায়ুমান উন্নয়নে পরিবেশ অধিদপ্তর কি ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে , এমন বেশ কয়েকটি বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে তলব করেন আদালত।

অবস্থা তথৈবচ। গত রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালেও ২৫৫ টি দেশের মধ্যে ঢাকা ছিল বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার একেবারে শীর্ষে।

পরিবেশ বিজ্ঞানী, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী, বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে সরকারের খোদ পরিবেশমন্ত্রী এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কণ্ঠে বাংলাদেশের বায়ুর মান নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ পেলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণে ঢাকার বায়ু হরহামেশাই এক নম্বর স্থান দখল করে নিচ্ছে দূষিত শহরের তালিকায়। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট এবং এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলুশন রিসার্চ- সম্প্রতি পৃথক দুটি গবেষণাপত্রেও ঢাকায় বায়ু দূষণের মারাত্মক ঝুঁকির কথা প্রকাশ করেছে।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বায়ু দূষণের ৫৮ শতাংশ উৎস হচ্ছে মহানগরীর আশেপাশের অঞ্চলে স্থাপিত ইটভাটা। আর রাস্তাঘাটের ধুলা এবং মোটরগাড়ি ও কারখানার দূষণ মিলে ২৬ শতাংশ। যদিও পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে পাঁচ বছর আগেও বায়ুদূষণে ওই তিন খাতের অবদান ছিল ১৫ শতাংশ।

অবস্থার ভয়াবহতা বিবেচনায় উচ্চ আদালত থেকে ৮ দফা নির্দেশনাও দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঢাকা শহরের মধ্যে বালি বা মাটি পরিবহন করা যান বাহন ঢাকনা যুক্ত করতে হবে। নির্মাণ কাজ যাতে ঢাকানা দিয়ে করা হয়, সড়কগুলোতে পানি ছিটাতে হবে। সড়কের মেগা প্রজেক্টের নির্মাণ কাজ এবং কার্পেটিং আইন কানুন ও চুক্তির টার্মস এন্ড কন্ডিশন মেনে করতে হবে। যেসব গাড়ি কালো ধোয়া ছাড়ে সেগুলো জব্দ করতে হবে এবং যেগুলো পুরাতন হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

ঢাকা সিটিতে বায়ু দূষণের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে বলে স্বীকার করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন নিজে। গত বছরের ২৫ নভেম্বর সচিবালয়ে এক সভায় তিনিও কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন সাংবাদিকদের কাছে। ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান বাড়ানো, ঢাকার চারপাশের জলাশয়গুলোকে রক্ষা করা এবং সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ইউটিলিটি সার্ভিসের কাজের জন্য সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করাসহ আদালতের কথাগুলোই পুণরুচ্চারিত হয় মন্ত্রীর মুখে।

কিন্তু এর কোনটিই কার্যকর হয়নি। আদালতের নির্দেশে রাজধানীর সড়কগুলোতে প্রথম কয়েকদিন কয়েকটি স্থানে মাঝেমধ্যে কিছু পানি ছেটানো হলেও কাজের কাজ ওই পর্যন্তই।

ঢাকার আশপাশের সবগুলো ইটভাটা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধ করার জন্য গত ২৫ নভেম্বর নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশের পর ৪২৮টি ইটভাঁটা বন্ধ করা হলেও সারাদেশে গত পাঁচ বছরে ইটভাটার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৩ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেব মতে, এর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৯৫৯টি। আর ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৯০২টিতে। অর্থাৎ বায়ু এবং পরিবেশ দূষণের একই কারণ বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে উঠে এলেও তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থাতো নেয়া হয়ইনি, বরং বিস্তৃতি ঘটেছে বায়ু ও পরিবেশ দূষণের কারণগুলোর।

স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের মতে, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে বায়ুদূষণের মাঝে বাস করছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘হেলথ এফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ‘ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশ’-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘বৈশ্বিক বায়ুদূষণ পরিস্থিতি-২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বায়ুদূষণে প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু শ্বাসজনিত জটিল সমস্যার শিকার হয় এবং একই কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে। ঢাকার অবস্থা সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক জানাচ্ছে, পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের কারণে বছরে মারা যায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষ এবং আবাসিক দূষণের কারণে বছরে সাড়ে ৪ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

আরেক গবেষণায় ঢাকার রাস্তার ধুলায় সর্বোচ্চ মাত্রায় সিসা, ক্যাডমিয়াম, দস্তা, ক্রোমিয়াম, নিকেল, আর্সেনিক, ম্যাঙ্গানিজ ও কপারের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মাটিতে যে মাত্রায় ক্যাডমিয়াম থাকার কথা, ধুলায় তার চেয়ে প্রায় ২০০ গুণ বেশি পাওয়া গেছে। আর নিকেল ও সিসার মাত্রা দ্বিগুণের বেশি। এতে করে খুব সহজেই স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে নগরবাসী, বিশেষ করে শিশুরা।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইটভাঁটা, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজ, তীব্র যানজট, মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযান ও শিল্পকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ভারী মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অসহনীয় করে তুলছে পরিবেশকে।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেছেন, প্রতিনিয়ত ঢাকাসহ সারাদেশের পরিবেশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে বায়ু দূষণ। প্রতিবছরই বায়ু দূষণ সময়ের সঙ্গে খারাপ হচ্ছে। আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় সার্বিকভাবে ঢাকার পরিবেশ খারাপ হচ্ছে বেশি।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মোরেলগঞ্জে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাজানো শ্লীলতাহানীর মামলা!

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মকর্তা, কর্মচারি...

আসামীকে নির্যাতনের দায়ে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ 

মাদারীপুরের রাজৈরে ইলিয়াছ খালাসী নামের এক আসামিকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে...

আসামীকে নির্যাতনের দায়ে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ 

মাদারীপুরের রাজৈরে ইলিয়াছ খালাসী নামের এক আসামিকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে...

মোরেলগঞ্জে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাজানো শ্লীলতাহানীর মামলা!

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মকর্তা, কর্মচারি...

দুর্গাপূজা, এআই গুজব ও সামাজিক সম্প্রীতির অগ্নিপরীক্ষা

দুর্গাপূজা, এক অনন্য ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব, দক্...

সংগীতশিল্পী থেকে অভিনয়ে ইমতিয়াজ আহমেদ রনী

উদীয়মান তরুন সংগীতশিল্পী ইমতিয়াজ রনী এবার নতুন পরিচয়ে হাজির হচ্ছেন। আসছে সৈয়দ...

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর পরিচালনা পরিষদের এক সভা ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫,...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা