শিক্ষা

অপ্রতিরোধ্য হাফিজুর মুখ দিয়ে লিখেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি

স্বপ্ন মানুষকে নিয়ে যায় অনেক দূর। আর স্বপ্নের হাতছানি যদি তীব্র হয় তবে কোন বাঁধাই যেন মানুষকে আটকাতে পারে না । সেই স্বপ্নবান মানুষের দলের একজন হাফিজুর রহমান। যিনি জন্ম থেকে শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধি।

তার এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় মানসিক শক্তি যেন তার জীবনে আলোর দ্বার খুলে দিল। প্রচেষ্টা আর দৃঢ় মনোবলই এই পথচলার চাবিকাঠি।

জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়ে দাঁড়ালেও শিক্ষার আলোয় সেই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন তিনি। গত ১১ জানুয়ারি হাফিজুর যোগ দিয়েছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রথম সমাবর্তনে।

সংগ্রামী ‘হাফিজুরের জন্ম বগুড়ার ধুনটের বেলকুচি গ্রামে। তার বাবা মফিজউদ্দিন,মা ফিরোজা বেগম। মাতৃগর্ভ থেকেই তার দু’হাত অচল। আর পা দুটি খর্বকায় । হাঁটাচলা না করতে পারলেও পা দিয়েই লিখা শুরু করেন তিনি। '

প্রতিবন্ধী হাফিজুর এর পড়াশুনা প্রথমে বাসায় শুরু হয়। কৈশোরে এসে তার পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। তিনি তার বাবার কাছেই বাংলা-ইংরেজি বর্ণমালা শিখেন। তার বাবা পড়ালেখার প্রতি ছেলের আগ্রহ দেখে স্থানীয় ব্রাক স্কুলে র্ভতি করিয়ে দেন । কিন্তু শারীরিকি প্রতিবন্ধকতার কারনে তার একার পক্ষে স্কুলে যাওয়া- আসা সম্ভব ছিল না। তাই উপায়ন্তর না দেখে তার বাবা তাকে সাইকেলের বিয়ারিং দিয়ে একটি ছোট্র গাড়ি বানিয়ে দেন। সেটিতে রশি বেঁধে দেন এবং সহপাঠীরা তাকে সেই রশি টেনে স্কুলে আনা-নেয়া করতো।

স্কুলে আসা-যাওয়ার এই কষ্ট দেখে শিক্ষকরা তাকে বাড়িতে লেখাপড়া করার পরামর্শ দেন। শিক্ষকদের কথায় এবং তাদের সহযোগিতায় তিনি বাড়িতে পড়ালেখা শুরু করেন। তবে মাঝে মাঝে স্কুলে যেতেন। এভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে ভর্তি হন ধুনট এন.ইউ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানেও পেলেন অপরিসীম সহযোগিতা, স্কুলের শিক্ষকরা পরামর্শ দিলেন বাড়িতে থেকে লেখাপড়ার করার। শুধু পরীক্ষার সময় স্কুলে যেতেন হাফিজুর।

এভাবেই সংগ্রাম,একাগ্রতা এবং চেষ্টার মধ্য দিয়ে তিনি তার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় তার মাথায় নতুন একটি চিন্তা আসে। তিনি পা দিয়ে লিখার বদলে মুখ দিয়ে কলম ধরে লিখতে চেষ্টা করেন এবং সফলও হন।

এরপর মুখ দিয়ে কলম ধরে লিখেই ২০০৯ এসএসসিতে জিপিএ ৪.১৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তারপর ভর্তি হন ধুনট ডিগ্রি কলেজে। সেখান থেকে ২০১১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ ৩.৬০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন হাফিজুর।

উচ্চ মাধ্যামিক শেষ করে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন হাফিজুর। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ পান তিনি। ভর্তি হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে। এ সময় তাকে সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করেন তারই ভাতিজা একাদশ শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ ইব্রাহিম। হুইল চেয়ার ঠেলে ইব্রাহিম তাকে ক্লাসে আনা নেওয়া করেন। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক এবং ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন হাফিজুর। আর জবির প্রথম সমাবর্তনে অংশগ্রহন করে গবির্তন হাফিজুরের মুখে এখন বিজয়ের হাসি।

স্বপ্ন যে মানুষকে অনেক দূর নিয়ে যায়,হাফিজুরেই তার প্রকৃষ্ঠ উদাহরন। এত প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও তিনি চেষ্টা করে গেছেন তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য,এবং সফলও হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষের অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে আছেন হাফিজুরের সংগ্রামী জীবনের এ গল্প।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ

সান নিউজ ডেস্ক: আজ বিশ্ব ম্যালেরি...

রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ২

জেলা প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হেমন্তের মোড়ে আত্মীয...

সাজেকে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা 

জেলা প্রতিনিধি: রাঙ্গামাটির সাজেকের সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ...

গরমে ত্বক ব্রণমুক্ত রাখতে যা খাবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গরমকাল এলেই ব্র...

মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি কাপ্তাই হ্রদে

জেলা প্রতিনিধি: প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণে কাপ্তাই হ্রদে ম...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা