মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: পদ্মা সেতু দিয়ে আজ থেকে পরীক্ষামূলক রেল চলাচল শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টা ২৫ মিনিটে পদ্মা সেতুতে ওঠে পরীক্ষামূলক ট্রেনটি। এর মধ্য দিয়ে নতুন দিগন্তে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। ট্রেনটি আগামী ১০ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গভাবে রেল চলাচল উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করবে।
স্বাধীনতার পর মুন্সীগঞ্জের উপর দিয়ে এই প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে মুন্সীগঞ্জের মানুষের মাঝে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনরে উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হয়েছে পদ্মাপাড়ের মানুষের।
বৃহস্পতবিার সকাল ১০ টা ৮ মিনিটে পরীক্ষামূলক একটি ট্রেনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। পরীক্ষামূলক এই কার্যক্রম চলবে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত।
পরীক্ষামূলক ট্রেনে যাত্রী হিসাবে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। আরও রয়েছেন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এবং রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: সারাদেশে বাড়তে পারে বৃষ্টির প্রবণতা
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানিয়েছেনে, ঢাকার কমলাপুরের রেলস্টেশন থেকে ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেল পথের কাজ পুরোপুরি শেষ।
শুরুতে মাওয়া প্রান্তে মাওয়া স্টেশন, পদ্মা সেতু পার হওয়ার পর পদ্মা স্টেশন এবং ভাঙ্গা জংশন স্টেশন পর্যন্ত রেল চলাচল করবে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পরে ব্যয় হবে প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সফল ট্রেন চলাচল করেছে গত ৪ এপ্রিল।
পাঁচ মাসের মাথায় এবার পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা থেকে ভাঙ্গা অংশের ৮২ কিলোমিটারে প্রথমবারের মতো চলল পরীক্ষামূলক ট্রেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এবং দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের সমন্বয়ে কাজ শেষ হয়েছে গুণগত মান বজায় রেখে।
প্রকল্পের প্রকৌশলী সাদমান শাহরিয়ার জানান, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা অংশের ৮২ কিলোমিটার পথে মাওয়া, পদ্মা, ভাঙ্গাসহ মোট ১০ টি স্টেশন রয়েছে। সবগুলোরই প্রায় ৯০ শতাংশের অধিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ অংশের নিমতলি, শ্রীনগর ও মাওয়াতে রয়েছে ৩ টি আধুনিক স্টেশন। এগুলোর অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ইন্টারনেট কর্মীর মৃত্যু
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ জামিউল ইসলাম বলেন, সর্বোচ্চ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রেল চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে ভায়াডাক্ট। পরীক্ষামূলক চলাচলের জন্য আনা হয়েছে নতুন লোকমোটিভ।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানান, চলতি মাসের শেষ দিকেই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের টার্গেট রেখে খুঁটিনাটি কাজ চলছে। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার অংশের অগ্রগতি ৯০ শতাংশের বেশি।
পদ্মা সেতু ঘিরে দেশের নতুন রেল নেটওয়ার্কের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হতে যাচ্ছে ভাঙ্গা জংশন। এখানকার ১০টি রেললাইনের মধ্যে ছয়টি লাইন চালুর পথে। আর ২২টি ভবনের মধ্যে ২১ টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সার্বিক অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের ঢাকা থেকে ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হবে আগামী বছর। আর পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সফল হলে আগামী ১০ অক্টোবর থেকে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের রেলপথে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন।
সান নিউজ/এনজে