জাতীয়

‘ঝাক্কি’তে বুদ হচ্ছে তরুণরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাদকের ধরন ও সরবরাহে এসেছে পরিবর্তন। সম্প্রতি দেশে ‘ঝাক্কি’ নামে নতুন এক মাদকের বিস্তারের খবর জানিয়েছেন আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। জানা গেছে, ভয়াবহ মাদক আইস ও ইয়াবায় যতটা না নেশা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি নেশা ঝাক্কি সেবনে। ইয়াবা ও আইস সেবনে ‘একঘেয়েমি’ হওয়ায় নতুন এই মাদকে ঝুঁকছে মাদকসেবীর।

র‍্যাব বলেছে, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা এসব মাদকের নিয়মিত গ্রাহক এবং তাদের অনেকে এটি বেচা-কেনায় জড়িত।

ঝাক্কি কী?

র‍্যাব কর্মকর্তারা জানান, কয়েকটি মাদক ও ওষুধের মিশ্রণে ঝাক্কি তৈরি করা হয়। যার ভয়াবহতা ইয়াবার চেয়েও বেশি। এই মাদক একবার সেবনের পর দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত একজন মানুষের নেশাগ্রস্ততা কিংবা ঘুম ঘুম ভাব থাকতে পারে। জানা গেছে, সংমিশ্রিত মাদক ‘ঝাক্কি’, ‘ঝাক্কি মিক্স’ বা ‘ককটেল মাদক’ এর সিংহভাগ ক্রেতা অলস সময় পার করতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীরা। অন্যান্য মাদক থেকে এর দামও অনেক চড়া।

জানা যায়, ‘ঝাক্কি’ সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা, মানসিক অবসাদ ও বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। শারীরিক ও মানসিক উভয়ক্ষেত্রে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই মাদক প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

মাদকের সঙ্গে বাড়ছে অন্যান্য অপরাধও

উত্তরায় একটি বায়িং হাউসের নামে বাসা ভাড়া করে গোপনে মাদক সেবন ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল ওপরে উল্লিখিত গ্রেফতার চক্রটি। যেখানে সেবনকারী সিন্ডিকেটের একটি ‘রিং’ বা পরিচিতরা আসা-যাওয়া করত।

ওই আস্তানায় মাদক সেবন করতে আসা শিক্ষার্থীদের অশ্লীল কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ দিয়ে এক পর্যায়ে তাদের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নেয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা। মানসম্মানের ভয়ে ওইসব তরুণ-তরুণীরা কাউকে ঘটনার বিষয়ে কিছু বলতেও পারতে না। চাপ প্রয়োগ করা হতো- অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমে চক্রটির তৈরি করা মাদকের গ্রুপে যুক্ত হওয়ার। কেবল তাই নয় ওই গ্রুপ থেকে নিয়মিত মাদকের ক্রেতা হতে হবে এবং বিত্তশালী ক্রেতা যোগাড় করে দিতে হবে অথবা বন্ধু-বান্ধবীদেরকে মাদকের প্রতি আসক্ত করে তুলতে হবে বলেও চাপ প্রয়োগ করা হত। এমন করে ধারাবাহিকভাবেই চক্রটি মাদকের ভয়ঙ্কর নেটওয়ার্ক তৈরি করে আসছিল।

উত্তরার এই চক্রের মূলহোতা ও সমন্বয়কারী তৌফিক। অর্থের যোগানদাতা জুবেইন ও খালেদ। রুদ্র কেমিস্ট হিসেবে ‘মেথ ল্যাব’ পরিচালনা করতেন। সবুজ সংগ্রহ ও সরবরাহকারী এবং তৌফিকসহ বাকিরা সকলেই মাদক বিপণনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ চক্রে আরও ১০-১৫ জন রয়েছেন।

এই চক্রটিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার জুবেইন লন্ডন থেকে বিবিএ ডিগ্রি নিয়ে ফিরেছেন। তৌফিক দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেছেন। খালেদ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। রুদ্র ও সাইফুল এইচএসসি পাস। আর খালেদ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। রুদ্রের নামে তিনটি মাদক মামলা রয়েছে ও জুবেইনের নামে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে।

চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত ইয়াবা সেবনে চরম আসক্ত হয়ে পড়ে। পরে ৪-৫ বছর ধরে তারা আইস নেয়া শুরু করে। বিভিন্ন সময়ে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের নেশায় উদ্বুদ্ধ করত। ক্ষেত্র বিশেষে গোপন ভিডিও ধারণ করে তাদেরকে ব্ল্যাকমেইলও করত তারা। এছাড়া তারা অস্ত্র দিয়ে ‘এমিং গেম’ জুয়া খেলত।

চক্রের মূল সমন্বয়ক তৌফিক আগে তারা ইয়াবা কারবারে জড়িত ছিলেন। দুই বছর ধরে আইস নিয়ে কাজ শুরু করেন। সম্প্রতি তিনি ঝাক্কি প্রস্তুত শুরু করেন। চক্রটি টেকনাফ ও রাজধানীর মিরপুর, গুলশান-বনানীর বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে আইস সংগ্রহ করে সেগুলো তাদের সার্কেলে সরবরাহ করতেন। এই একটি গ্রুপের বাইরে আরও কয়েকটি ক্লোজ গ্রুপ রয়েছে।

ঝাক্কি সেবনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

এই মাদক সেবনে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা এবং মানসিক অবসাদ ও বিষণ্ণতা তৈরি হতে পারে। শারীরিক এবং মানসিক উভয় ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই মাদকের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়।

র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, তরুণ প্রজন্ম নতুন নতুন মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঝাক্কি সেবনের সঙ্গে জড়িত। প্রথমে যারা ইয়াবা ও আইসে আসক্ত হন পরে তারা আরও বেশি আসক্তির জন্য ঝাক্কি সেবন করেন। এই ঝাক্কি তৈরি করে আসছিল একটি চক্র। চক্রটি রাজধানীর উত্তরায় এই মাদক তৈরিতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বানিয়েছিল ‘মেথ ল্যাব’। সেখানেই তৈরি করা হতো ঝাক্কি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে তারা ইয়াবার রঙ বদলে প্যাকেটজাত করত। এ চক্রে আরও ১০-১৫ জন রয়েছেন।

গ্রেফতাররা একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের সদস্য এবং তারা আইস গ্রহণে মারাত্মকভাবে আসক্ত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও কিছু সিন্ডিকেট ও এই মাদকের সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। যার ভিত্তিতে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন পুলিশের এলিট ফোর্সের এই কর্মকর্তা।

সান নিউজ/এমএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নোয়াখালীতে ভূমি দুস্যুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন 

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর কোম...

ফসলের ক্ষতি করে চলছে অবৈধ ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রি

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

আজ শেরে বাংলার ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ অবিভক্ত বাংল...

খাগড়াছড়িতে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

গরমে বারবার গোসল করা কি ক্ষতিকর?

লাইফস্টাইল ডেস্ক: বৈশাখের শুরু থে...

কম্বোডিয়ায় বিস্ফোরণে ২০ সেনা নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কম্বোডিয়ায় একটি সামরিক ঘাঁটিতে গোলাবারুদ...

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই আজ খুলছে দেশের স...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ রোববার (২৮ এপ্রিল) বেশ কিছ...

খাগড়াছড়িতে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

বরিশালে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৩ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালের বাকেরগ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা