গণঅভ্যুত্থানে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহতের ঘটনায় ক্ষমা চাইতে রাজি নন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরং তিনি জানিয়েছেন, তিনি ভারতে থেকেই থাকতে চান। ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে রয়টার্স, এএফপি এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। সাক্ষাৎকারে তিনি তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিচারটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।
জাতিসংঘের স্বাধীন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই, আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে অন্তত ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়। এ ঘটনায় আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে।
তবে এএফপি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, আমি নিজে বাহিনীগুলোকে আন্দোলনে গুলি চালাতে বলেছি- এটা মিথ্যা। চেইন অব কমান্ডের ভেতরে কিছু ভুল হয়েছিল, কিন্তু আমি গুলি চালানোর নির্দেশ দিইনি।’
দ্য ডেইলি স্টার-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা নিজে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। সংবাদমাধ্যমটি ২০২৪ সালের ১৮ জুলাইয়ের একটি ফোন রেকর্ডিং প্রকাশ করে, যেখানে হাসিনা তার ভাতিজা, সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসকে বলেন, “ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিছি, এখন লেথাল ওয়েপন ব্যবহার করবে। যেখানেই পাবে সোজা গুলি করবে।” হাসিনা অবশ্য বলেছেন, অডিওটির বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার তারিখ জানাবে। তবে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি কিংবা কোনো আইনজীবীও নিয়োগ দেননি।
শেখ হাসিনা রয়টার্স-কে বলেন, ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টে মামলা চলছে। রায় আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলেও আমি অবাক বা ভীত হব না।’
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসিনা বলেন, ‘আমি নিহত প্রতিটি মানুষ ও শিশুর জন্য শোক জানাই, কিন্তু এজন্য ক্ষমা চাইতে রাজি নই।’ তার দাবি, বিরোধীরা সরকার উৎখাতের জন্য সহিংসতা উসকে দিয়েছিল।
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দিচ্ছে না। ‘এটি জনগণের মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে,’ বলেন তিনি।
হাসিনা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা অন্যায় এবং আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়।’
তিনি অভিযোগ করেন, তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ এবং ট্রাইব্যুনালটি ‘প্রতিপক্ষদের দ্বারা গঠিত’।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, শেখ হাসিনা “সব অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু।” আদালতের কাছে তিনি শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করেছেন।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি দিল্লিতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন এবং ‘ভারতের বাইরে আশ্রয় নেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।’ লোধি গার্ডেনে নিয়মিত হাঁটতে যান তিনি, তবে নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন।
‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোনো একক ব্যক্তি বা পরিবারের হাতে থাকা উচিত নয়,’ বলেন হাসিনা। ‘আমার এখন অগ্রাধিকার বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও কল্যাণ।’
তিনি আরও দাবি করেন, “বাংলাদেশের জনগণ যা চায়, তা দিতে হলে ইউনূসকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পুনর্বহাল করতে হবে।”
সাননিউজ/এও