সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
সোমবার (২০ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন,
“আমি মনে করি শেখ হাসিনা একজন নিরপরাধ ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে যেসব চার্জ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়। সাক্ষ্যপ্রমাণেও এসব প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি প্রসিকিউশন। অতএব, তারা দুজনই খালাস পাবেন বলে আমার প্রত্যাশা।”
এদিন ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী।
আসামিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল কিনা—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আমির হোসেন বলেন,
“না, শেখ হাসিনা বা কামালের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। আইনগতভাবে যোগাযোগের কোনো সুযোগ বা নিয়ম নেই। উনি (শেখ হাসিনা) যদি স্বেচ্ছায় আসেন বা ধরা দেন, তখনই কেবল যোগাযোগ করা সম্ভব। তবে আমার আর্গুমেন্ট আরও আছে। আজ সব বলিনি, পরদিন বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করব।”
রায়ের অপেক্ষায় আলোচিত মামলা
গত ১৬ অক্টোবর টানা পাঁচদিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করে প্রসিকিউশন। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ওইদিন আদালতে বলেন,
“এ মামলার সাক্ষ্য ও প্রমাণ অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ও কামাল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন।”
একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেন তিনি।
প্রসিকিউশন তাদের যুক্তিতর্কে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত নানা ঘটনা, গুম-খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বর্ণনা তুলে ধরে। পাশাপাশি, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাস ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক সিদ্ধান্তগুলোও উল্লেখ করা হয় যুক্তিতে।
ট্রাইব্যুনাল ওইদিন আসামিপক্ষের জন্য তিনদিন সময় নির্ধারণ করে দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন আমির হোসেন।
আদালত চত্বরে উত্তেজনা ও আগ্রহ
মামলাটিকে ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণে ছিল ব্যাপক নিরাপত্তা ও গণমাধ্যমের উপস্থিতি। আদালতের এক কর্মকর্তা জানান, “প্রসিকিউশন ও ডিফেন্স—দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে। রায় ঘোষণার আগে আরও কয়েক দফা শুনানি হতে পারে।”
এদিকে রাজনৈতিক মহলেও চলছে তীব্র আলোচনা। কেউ বলছেন, “এটি ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত বিচার হতে যাচ্ছে,” আবার অনেকে মনে করছেন, “রাজনীতির মোড় ঘুরে যেতে পারে এই রায়ের ওপর নির্ভর করে।”
এখন দেশজুড়ে একটাই প্রশ্ন—
রাষ্ট্র কি প্রমাণ করতে পারবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ, নাকি ইতিহাসের মোড় ঘুরবে এক ‘খালাস রায়ের’ মাধ্যমে?
সাননিউজ/এও