জাতীয়
মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চান অভিভাবকেরা, চান বন্ধ হোক স্কুলের কোচিং

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার দিনে স্কুলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখানো এবং কোচিং সেন্টার বন্ধসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবকেরা। তাঁরা যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চেয়েছেন। সেই সঙ্গে মাইলস্টোনসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্য বন্ধের দাবি তুলেছেন তাঁরা।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দিয়াবাড়ি গোলচত্বরে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধন করেন। এতে ৯ দফা দাবি জানানো হয়।

দাবিগুলো হলো ১) সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ২) সারা বাংলাদেশে মাইলস্টোন স্কুলসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। ৩) সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি নিহত শিশুর জন্য পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) এবং প্রত্যেক আহত শিক্ষার্থীদের জন্য এক কোটি টাকা দিতে হবে। ৪) স্কুলের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নিহত শিশুর জন্য দুই কোটি এবং প্রত্যেক আহত শিশুর জন্য এক কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে। ৫) রানওয়ে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থান পরিবর্তন করতে হবে (অন্যথায় রানওয়ের স্থান পরিবর্তন করতে হবে)। ৬) কোচিং ব্যবসার মূল হোতা স্কুল শাখার প্রধান শিক্ষককে (মিস খাদিজা) ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাঁর সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। ৭) স্কুলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমাদের দেখাতে হবে। ৮) বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণব্যবস্থা জনহীন জায়গায় করতে হবে। ৯) মানববন্ধন করতে চাইলে কনক নামের এক শিক্ষক এক অভিভাবকের গায়ে হাত তোলেন। তাঁকে অপসারণ করতে হবে।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মারিয়াম উম্মে আফিয়ার মা উম্মে তামিমা আক্তার বলেন, 'আমার বাচ্চাটাকে আমি কখনো কোচিংয়ে দিতাম না। আমার বাচ্চাটাকে দেড় মাস হয়েছে কোচিংয়ে দিসি। কেন দিয়েছি জানেন? আমার বাচ্চা বাসায় এসে আমাকে বলে, আম্মু আমি যদি কোচিং না করি, মিসরা আমাকে আদর করে না। আমাকে প্রতিদিন বলে, আমি যদি কোচিং না করি, মিসরা আদর করে না।'

আফিয়া স্কুলের বাংলা মাধ্যমের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। কোচিংয়ে দেওয়ার পর মেয়ে খুশি ছিল জানিয়ে তামিমা আক্তার বলেন, ‘যখন বাচ্চাটাকে কোচিংয়ে দিলাম, এক সপ্তাহ পর আমার ময়না পাখি, আমারে জড়াইয়া ধইরা বলে, মা মিসরা আমাকে এখন অনেক আদর করে।'

আফিয়ার মা উম্মে তামিমা আক্তার আরও বলেন, ‘এখানে যে বাচ্চাগুলো মারা গেছে, সব কোচিংয়ের বাচ্চা।... কোচিংয়ের বড় একটা অংশ তাদের কাছে যায়, বড় একটা অ্যামাউন্ট তারা পায়... এ স্কুলে কোচিংয়ের জন্য যতটা প্রেশার দেওয়া হয়, আমার মনে হয় না, অন্য কোথাও এত প্রেশার দেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, পরীক্ষায় খারাপ করিয়ে কোচিংয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়। অভিভাবকেরা কোচিংয়ের পক্ষে নন বলেও জানান তিনি।

নিহত শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দীন বাপ্পীর বাবা মোহাম্মদ আবু শাহীন বলেন, ‘শিক্ষকেরা বলে আপনার বাচ্চা ক্লাসে পড়া পারে না। আপনার ছেলের পড়াশোনা ভালো না। বিভিন্নভাবে মানসিক টর্চার করে, এভাবেই কোচিং করাতে বাধ্য করে।’

বাপ্পী স্কুলের বাংলা মিডিয়ামের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। বোরহান উদ্দীন বলেন, তাঁর আরেক ছেলে বেলাল উদ্দীন স্কুলের প্লেতে পড়ে। তাকেও কোচিংয়ে ভর্তি করাতে স্কুল কর্তৃপক্ষ চাপ দিচ্ছে।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক বলেন, স্কুল শাখার প্রধান খাদিজা মিস। তিনি কোচিং ব্যবসার মূল হোতা। নিহত মাহেরিন চৌধুরী মিস বারবার নিষেধ করেছেন, কিন্তু খাদিজা মিস শোনেননি। মাহেরীন মিসের সঙ্গে এ নিয়ে দ্বন্দ্বও ছিল তাঁর। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোচিং ব্যবসার মূল হোতা খাদিজা মিসকে অপসারণ করতে হবে।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অভিভাবকেরা বলেন, ‘আজ আমরা মারামারি করতে আসিনি। এসেছিলাম মানববন্ধন করতে। স্কুল কর্তৃপক্ষ, একজন শিক্ষকও তো আমাদের কাছে আসেননি। আমরা তো সন্তানহারা অভিভাবক। কেউ তো এসে বললেন না, আসেন আপনাদের সঙ্গে কথা বলি।’ উল্টো মানববন্ধনে আসা শিক্ষার্থীদের স্কুলে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ অভিভাবকদের।

অভিভাবকদের অভিযোগ, আজ মানববন্ধন করতে গেলে মাইলস্টোনের একজন শিক্ষকের সঙ্গে তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ওই শিক্ষক একজন অভিভাবকের গায়ে হাত তোলেন। এ জন্য লিখিত আট দফার সঙ্গে তাঁরা আরও এক দফা যুক্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষকের অপসারণ দাবি করছেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের হাতে নিহত ছাত্রছাত্রীদের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। এ সময় তাঁরা ‘কোচিংয়ের নামে ব্যবসা, বন্ধ কর, বন্ধ কর’, ‘ফুল-পাখি সব পুড়ল কেন, জবাব চাই, দিতে হবে’, ‘কী এসেছে কী এসেছে, বিমান এসেছে, বিমান এসেছে, কী করেছে কী করেছে, মায়ের বুক খালি করেছে’, ‘শিক্ষা না ব্যবসা, শিক্ষা-শিক্ষা’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

সাননিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ঘূর্ণিঝড় নিয়ে যা জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি...

লুটপাটের ভিডিও করায় সাংবাদিককে হেনস্তা 

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধ...

নিহত যুবদল নেতার পরিবারের পাশে তারেক রহমান

বগুড়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত যুবদল নেতা রাহুল সরকারের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়...

ফিলিস্তিনের জলসীমায় ইসরায়েলের কোনো কর্তৃত্ব নেই

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ওপর ইসরায়েলের 'আক্রমণ ও আগ্রাসনের' নিন্দা জা...

দুর্ব্যবহারের কারণে এনসিপির সংবাদ সম্মেলন বর্জন

রাজধানী ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্য...

শাপলা নয় এনসিপিকে বালতি-বেগুনসহ ৫০ প্রতীকের অপশন

শাপলা প্রতীক নয় বরং বেগুন, বালতিসহ ৫০টি প্রতীক থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এন...

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৯৬

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এইডস ম...

আ. লীগের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজ...

লুটপাটের ভিডিও করায় সাংবাদিককে হেনস্তা 

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধ...

গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক, নিরাপত্তার দাবি জামায়াতের

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করার ঘটনায় ইসরায়েলের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার তীব্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা