জাতীয়

ম্যানুয়াল সিস্টেমের কারণেই দুর্ঘটনা : তিতাস এমডি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

পাইপের লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে তা নারায়ণগঞ্জের মসজিদে জমে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছিলেন অর্ধ শতাধিক মানুষ, যাদের অধিকাংশই মারা গেছেন।

ঢাকায় তিতাস গ্যাসের পাইপলাইন কীভাবে কোথায় গেছে, তা বলার মতো কেউ এখন এই কোম্পানিতে নেই বলে জানিয়েছেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুক্তাদির আলী।

শনিবার এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “১৯৭৭-৭৮ সালে ঢাকায় বিতরণ লাইন নির্মাণ শুরু হয়েছে। নেটওয়ার্কটা কীভাবে সাজানো হয়েছে তা একটি কাগজের ম্যাপিং করা ছিল। আমরা যখন দায়িত্বে ছিলাম তখন একজন লোক নিযুক্ত ছিলেন যিনি প্রয়োজন হলে ম্যাপ এনে দেখাতেন যে কোন লাইন কোন দিকে গেছে।

“তিনি অবসরে চলে যাওয়ার পর এখন কেউ আর বলতে পারে না যে, কোন পাইপলাইন কোন দিকে গেছে। এসব ম্যানুয়াল সিস্টেমের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে।”

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক সাময়িকী ‘এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’ আয়োজিত এই আলোচনা সভার বক্তারা জ্বালানি গ্যাসের আবাসিক সংযোগ নেটওয়ার্কের অনেক স্থানেই ‘লিকেজ থাকার কথা’ জানিয়ে পুরোনো লাইনগুলো স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন বলেন, “সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের একটি মসজিদে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ- জ্বালানির ব্যবহার ও ভোক্তা নিরাপত্তা বিয়ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পুরনো লাইনগুলো সংস্কার বা বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি লিকেজ ও ঝুঁকি নিরূপনে আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করতে হবে।”

সভায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার আব্দুস সালেক (সালেক সুফী) বলেন, “গ্যাস-বিদ্যুৎসহ এ ধরনের ইউটিলিটি লাইন স্থাপনের ক্ষেত্রে ২৫ বছর থেকে ৩০ বছর একটা লাইফ সাইকেল থাকে। আমাদের সংযোগগুলো অনেকাংশে এই লাইফটাইম পার করেছে। এগুলো সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তারপরেও বিভিন্ন ধরনের লিকেজ হতে পারে। লিকেজ চিহ্নিত করতে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।

“কোম্পানিগুলোর নিয়মিত এসব সমস্যা পর্যবেক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে জিআইএস মনিটরি বা বিভিন্ন ধরনের স্মার্ট সেন্সিং ইক্যুইপমেন্ট বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমারা সুরক্ষা পেতে পারি।”

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আরেক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সুলতানা নাসরিন বলেন, “লাইডার ইউটিলিটি লোকেটর নামের একটি আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে যার মাধ্যমে ড্রোন কিংবা অন্যান্য যানবাহন দিয়ে মাটির উপরে ও ভূগর্ভের ইউটিলিটি লাইনগুলোর ঝুঁকি ও সমস্যা চিহ্নিত করা যায়।”

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য এবং তিতাসের সাবেক এমডি আজিজ খান বলেন, “এত কম সংখ্যক লোক দিয়ে চুরি ঠেকানো ও লিকেজ চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। অধিকাংশ স্থানে পাইপগুলো পুরান হয়ে গেছে। পাইপ রিপ্লেস করা প্রয়োজন। তাতে করে অবৈধ সংযোগগুলোও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।”

বাখরাবাদের সাবেক এমডি শহীদুল আবেদিন বলেন, “ডমেস্টিক সংযোগ থেকেই অধিকাংশ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। ডমেস্টিক নেটওয়ার্ক, রাইজার এগুলো অনেক বেড়ে গেছে। দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ডমেস্টিক থেকে হয়েছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কেরানীগঞ্জে ৮-১০ কিলোমিটার নেটওয়ার্ক রয়েছে যেগুলো কে করেছে কীভাবে করেছে কোনো তথ্য নেই। লেজারবুকে এগুলোর হিসাব নেই।

“এগুলো চিহ্নিত করতে হবে। ট্রান্সমিশনে তেমন দুর্ঘটনা হয়নি। ৭০ থেকে ৮০ ভাগ রয়েছে ডমেস্টিক নেটওয়ার্ক। আবাসিক খাতে যে গ্যাস যাচ্ছে তার ৪০ শতাংশেরই কোনো হদিস নেই। তাই আবাসিক সংযোগগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। তাতে রাজস্ব আয় বাড়বে এবং দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে।”

বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, “গ্যাসের ইউটিলিটি কোম্পানিগুলোর মেইন্টেনেন্স বাজেট বলে কিছু নেই। এখন যেসব আধুনিক প্রযুক্তির কথা বলো হয়েছে এগুলো পরিচালনার অভাবে সুফল দেবে না। নষ্ট হয়ে পড়ে থাকবে।”

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মকবুল ই এলাহী চৌধুরী বলেন, “এখানে অনেক আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আমি বলব, এই মুহূর্তে যা আছে তা নিয়েই লিকেজ ও চোরাই লাইন চিহ্নিত করার কাজ শুরু করতে হবে। ঝুঁকি মোকাবেলায় গ্রাহক ও ইউটিলিটি সবার দায় দায়িত্ব রয়েছে।”

সান নিউজ/পিডিকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ঢাকায় এলেন, সফরের কর্মসূচী 

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সফরে আজ শন...

ফুটবল বিশ্বকাপের ড্রয়ের তারিখ ঘোষণা করলেন ট্রাম্প 

ছেলেদের ২০২৬ বিশ্বকাপ ফুটবলে গ্রুপ পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ ডিসেম্বর য...

জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্...

মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের এক মাস পর তাসনিয়ার মৃত্যু

রাজধানী উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের...

ডাকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে সব বলে দেব : ঢাবি উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে...

জীবন থেকে কলম: বিভুরঞ্জনের অসমাপ্ত গল্প

বিভুরঞ্জনকে আমি তার শৈশবকাল থেকেই চিনি। আমাদের বামপন্থী আন্দোলনের একটি শক্তিশ...

যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বাংলাদেশি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফুল

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীতে পদোন্নতি পেয়ে ব্রিগেডিয়া...

সংবিধানে পিআর পদ্ধতি নেই, সংবিধানের বাইরে যেতে পারি না : সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, আনুপাতিক পদ্ধতি...

ইসরায়েলি হামলা বাড়ছে, গাজায় আরও ৭১ ফিলিস্তিনি নিহত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় নতুন করে আরও অন্তত...

মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের এক মাস পর তাসনিয়ার মৃত্যু

রাজধানী উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা