রাজধানীর গুলশানে জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর কথা শুনে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হেসেছেন একটি হত্যা মামলার আসামি অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক।
গুলশান থানার একটি হত্যা মামলায় এবার সিদ্দিককে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসাইনের আদালত।
ওই মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছিলেন এ আসামি।
এ কথা শুনে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সিদ্দিককে হাসতে দেখা হয়। এছাড়া গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ পাওয়ার পরও হাসছিলেন সিদ্দিক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই সামিউল ইসলাম গত ১২ অগাস্টে সিদ্দিককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। আদালত আসামির উপস্থিতিতে শুনানির জন্য এদিন ঠিক করেছিলেন।
বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটের দিকে হেলমেট, হাতে হাতকড়া ও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরা সিদ্দিককে এজলাসে তোলা হয়। আসামির কাঠগড়ায় নেওয়ার পর তার মাথা থেকে হেলমেট, হাত থেকে হাতকড়া, জ্যাকেট খুলে ফেলা হয়। কাঠগড়ার একেবারে সামনে গিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি।
১২টা ৪২ মিনিটের দিকে শুনানি শুরু হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না, এসময় রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শুনতে চান আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষে মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, “এটা ফার্নিচার কর্মচারী হত্যা মামলা। এজাহারনামীয় ২২৩ নং আসামি। তিনি একজন নাট্য অভিনেতা। বন্যের পশুরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। তার থাকার কথা সংস্কৃতি অঙ্গনে। সেখান থেকে বের হয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হতে সহযোগিতা করেছে। হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালান।”
একথা শুনে সিদ্দিককে হাসতে দেখা যায়।
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, “নাট্য অভিনেতা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ রাস্তায় নেমে আন্দোলরকারীদের ওপর হামলা করে, গুলি চালায়। তিনি এজাহারনামী আসামি। তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হোক।”
বিচারক বলেন, “যেহেতু এজাহারনামীয় আসামি। তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হল।”
আদেশের পর সিদ্দিককে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আন্দোলনের মধ্যে গত বছরের ১৯ জুলাই গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন ফার্নিচার কর্মচারী পারভেজ বেপারী।
ওই দিন জুমার নামাজের পর আসামিদের ছোড়া গুলিতে আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর পারভেজের বাবা মো. সবুজ গত বছর গুলশান থানায় মামলা করেন।
গত ২৯ এপ্রিল বিকালে রাজধানীর বেইলি রোড এলাকা থেকে সিদ্দিককে আটক করে একদল যুবক। পরে সিদ্দিককে মারধর করে রমনা মডেল থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রমনা থানা পুলিশ পরে তাকে গুলশান থানায় নিয়ে যায়। পরদিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের হেফাজতে পায় পুলিশ। রিমান্ড শেষে সিদ্দিককে কারাগারে পাঠানো হয়।