কোনো ছাত্রসংগঠনই এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটি হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পারেনি। ছাত্রীদের জন্য পাঁচটিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট হল আছে ১৮টি। এর মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সর্বোচ্চ ১৪টি হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পেরেছে। ইসলামী ছাত্রশিবির ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ কোনো হলেই প্যানেল দেয়নি। অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোরও একই অবস্থা।
ভিপি (সহসভাপতি) ও জিএসসহ (সাধারণ সম্পাদক) প্রতিটি হল সংসদে পদ আছে ১৩টি। সে হিসাবে সব হল মিলিয়ে মোট ২৩৪টি পদ আছে। এর বিপরীতে এবার প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে ১ হাজার ১০৮ জন শিক্ষার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে।
ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–সমর্থিত ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’–এর নেতারা বলছেন, নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে তাঁরা হলগুলোতে কোনো প্যানেল দিচ্ছেন না। তবে হল সংসদের নির্বাচনে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেককে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
হলের ভেতরে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি না বা থাকলে তার ‘রূপ’ কেমন হবে, তা নিয়ে ক্যাম্পাসে নানা তর্কবিতর্ক চলছে। হল সংসদের নির্বাচনে দলীয় প্যানেল শিক্ষার্থীদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সে আলোচনাও আছে। হলে ছাত্রদলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ৮ আগস্ট রাতে ক্যাম্পাসে যে বিক্ষোভ হয়, তাতে শিবির, ইসলামী ছাত্রী সংস্থা ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতাদের কেউ কেউ নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় ছিলেন। এমন প্রেক্ষাপটে হল সংসদের নির্বাচনে দলীয় প্যানেল দেওয়ার মাধ্যমে হলের ভেতরে ছাত্ররাজনীতিকে একধরনের বৈধতা দেওয়া হবে বলে শিবির ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতারা মনে করেন।
ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও ডাকসু নির্বাচনে জিএস পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদ বলেন, ‘হলে রাজনীতি থাকা না থাকা নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়ায় এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মতামত নিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম। এই মতামতের ভিত্তিতে হলে রাজনীতির বিষয়ে একটা রূপরেখা তৈরি করা সম্ভব ছিল। কিন্তু প্রশাসন তা করেনি। সব মিলিয়ে হলে রাজনীতির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা যেহেতু দ্বিধাগ্রস্ত, তাই আমরা হলে প্যানেল না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আমরা অনেকের সঙ্গে আলাপ করছি। আমাদের কর্মীদের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জায়গা থেকে প্রার্থী হওয়া অনেককে আমরা সমর্থন দিতে পারি।’
অন্যদিকে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতারা হলে প্যানেল না দিলেও যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ও ডাকসু নির্বাচনে জিএস পদপ্রার্থী আবু বাকের মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হল সংসদে আমাদের ছাত্রসংগঠনের অনেক নেতা–কর্মী নির্বাচন করছেন। তাঁরা হলের অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে একটা বোঝাপড়ায় এসেছেন, যা প্যানেলের মতোই।’
ছাত্রদের ১৩টি হলেই পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পেরেছে ছাত্রদল। তবে ছাত্রীদের পাঁচটি হলের মধ্যে শুধু রোকেয়া হলে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল রয়েছে। এ ছাড়া কবি সুফিয়া কামাল হলে ৯টি পদে, বাংলাদেশ–কুয়েত মৈত্রী হলে ৩টি পদে, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৬টি পদে ও শামসুন নাহার হল সংসদে ৫টি পদে প্রার্থী দিয়েছে ছাত্রদল। অবশ্য এই চার হলের ভিপি ও জিএস পদে ছাত্রদলের প্রার্থী আছে।
ছাত্রীদের সব হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে না পারার বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব ছাত্রী হলে আমাদের নেতা-কর্মী থাকলেও নানা কারণে অনেকে প্রার্থী হতে চাননি।’
হল সংসদের নির্বাচনে অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর প্যানেল না দেওয়ার বিষয়ে ছাত্রদলের এই নেতা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কেউ চাইলে নিজ উদ্যোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতেই পারেন। এটিকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু ছাত্রী সংস্থার মেয়েরা গুপ্ত রাজনীতি করছে কথিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে। তারা ছাত্রদলের নামে নানা অপপ্রচার করছে, বিভিন্ন সময় ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মব তৈরি করছে। এটা তাদের গুপ্ত রাজনীতির একটা কৌশল। এ ধরনের রাজনীতি পরিহার করা উচিত।’
হল সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ছাত্রদের জগন্নাথ হলে ১৩ পদে প্রার্থী ৫৯ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৬৪ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৬২ জন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ৭০ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৭৮ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৮১ জন, বিজয় একাত্তর হলে ৭৭ জন, কবি জসীমউদ্দীন হলে ৬৯ জন, স্যার এ এফ রহমান হলে ৬৭ জন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৬৫ জন, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৬৮ জন, মাস্টারদা সূর্য সেন হলে ৭৯ জন এবং অমর একুশে হল সংসদের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ৮১ জন। এই হলগুলোর প্রতিটিতে ১৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে ছাত্রদল।
ছাত্রীদের পাঁচটি হলে কোথাও মোট পদের দ্বিগুণের বেশি, কোথাও তিন গুণের বেশি প্রার্থী হয়েছেন। কবি সুফিয়া কামাল হল সংসদের ১৩টি পদে প্রার্থী হয়েছেন ৪০ জন, রোকেয়া হলে ৪৫ জন, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ৩১ জন, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩৬ জন আর শামসুন নাহার হল সংসদে প্রার্থী হয়েছেন ৩৬ জন ছাত্রী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে বৈধঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে কেউ চাইলে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর ২৬ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে।
ছাত্রদল, শিবির ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর চারটি হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।