মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার বিদায়ী ওসি আবু বকর সিদ্দিক ও এসআই নাহিদ মাসুমের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে এক যুবদল নেতাকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী আল ইসলাম উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে, বিষয়টি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানাজানি হওয়ার পর ওসি আবু বকরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে প্রমাণ বের হয়ে এলে বিপাকে পড়েছেন ওসি। কিন্তু গতকাল শনিবার (৫ ডিসেম্বর) অভিযুক্ত ওসি সিরাজদিখান থানা থেকে বিদায় নেওয়ায় এ বিষয়ে আর অগ্রগতি জানা যায়নি।
জানা যায়, উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের খাসকান্দি গ্রামের মৃত মুসা মাদবরের ছেলে আল ইসলাম (৪২) বর্তমানে স্থানীয় একটি মামলায় কারাগারে আটক রয়েছেন।
গত ৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শকের মাধ্যমে তাঁকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাহিদ মাসুম ও সিরাজদিখান থানার ওসি আবু বকর। বিষয়টি জানাজানি হলে আল ইসলামের স্বজন ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
আওয়ামী লীগের মামলায় যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন প্রসঙ্গে জানতে সিরাজদিখান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত গণমাধ্যমকর্মীরা একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি। এছাড়া থানায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
পরে এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হয় আওয়ামী লীগের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিরাজদিখান থানার এসআই নাহিদ মাসুমের সঙ্গে। তিনি আল ইসলামকে আওয়ামী লীগের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়টি স্বীকার করেন। একপর্যায়ে সেই এসআই এই প্রতিবেদকের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে আল ইসলামের চেহারা সম্বলিত খেজুর গাছ ও কড়ই গাছে লাগানো কয়েকটি ফেস্টুনের ছবি পাঠান। তখন তার কাছে পুনরায় ‘ফেস্টুনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের কী সূত্র’ জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সদস্য আলী আকবর নিরব বলেন, আল ইসলাম ২০১৩ সাল থেকে সিরাজদিখান উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আমার সঙ্গে রাজনীতি করেন। বিএনপির দুর্দিনে তিনি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়ে জেলও খাটেন। সম্প্রতি এলাকার একটি স্থানীয় বিষয় নিয়ে মামলা হলে আল ইসলাম গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে। এর মধ্যেই গত ৪ ডিসেম্বর তার ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ পুলিশের যোগসাজশে তাকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী দমন আইনে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য শো–অ্যারেস্টের আবেদন করে। এটা কি মগের মুল্লুক নাকি? একজন বিএনপি নেতাকে আওয়ামী লীগের মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে চাইবে পুলিশ? বিষয়টি হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। আমরা এর প্রতিকার চাই।
পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. ফিরোজ কবির বলেন, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়—এরকম কোনো কাজে যদি কোনো সদস্য জড়িত হয়ে পড়ে সে বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
প্রসঙ্গত— গত ১৯ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচির সমর্থনে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ব্যানারে সিরাজদিখানের বাসাইলে একটি মিছিল হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারে আসামি হিসেবে নাম না থাকলেও জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যুবদল নেতা আল ইসলামকে।
সাননিউজ/আরপি