বনিক কুমার, গোপালগঞ্জ থেকে
সময়টা এখন বর্ষাকাল। গোপালগঞ্জের নদ-নদী, খাল-বিল জলে টইটম্বুর। নতুন জলে বিলে বিলে শোভা পাচ্ছে সবুজ ও সাদা রংয়ের শাপলা। জাতীয় ফুল শাপলা এ অঞ্চলের মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও সমধিক জনপ্রিয়। আর জেলার শতাধিক বিলে জন্মানো এ শাপলা তুলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন কয়েক হাজার দরিদ্র মানুষ।
কাশিয়ানী-মুকসুদপুর উপজেলার সিংগার বিল ও চান্দারবিল এবং কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়ার জোয়ারিয়ার বিল ও কান্দির বিলসহ শতাধিক বিলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় প্রচুর শাপলা। বর্ষা মৌসুমে কৃষকের তেমন কাজও থাকে না। তাই বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ এ শাপলা তোলার পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। এ পেশায় কোনো পুঁজিরও প্রয়োজন হয় না।
শাপলা তোলার কাজে নিয়োজিতরা বলেন, ‘ভোরে নৌকা নিয়ে বিলে গিয়ে ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলি। প্রতিদিন ১০০ থেকে ৪০০ আটি (১০পিচ শাপলায় এক মোঠা। ১০ মোঠায় এক আটি বা ১০০টি) শাপলা তুলি। দুপুরে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পাই। পাইকারি ব্যবসায়ীরা আবার এসব শাপলা সংগ্রহের পর একত্র করে জেলা সদরসহ আশেপাশের জেলার হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন।’
আর এই শাপলাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গান্ধিয়াশুর, সাতপাড় ও কাশিয়ানি উপজেলার সিংগা, হাতিয়ারাসহ বিভিন্ন স্থানে বাজার গড়ে উঠেছে।
কাশিয়ানীর সিংগা গ্রামের শাপলা সংগ্রহকারী বৌদ্ধনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘বর্ষার সময় বিলে বেশ শাপলা জন্মে। এই সময় আমাদের এলাকায় কোনো ফসল হয় না। তাই আমি প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত সিংগারবিলে শাপলা সংগ্রহ করি। তাতে আমার ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় রোজগার হয়। এভাবেই আমাদের এলাকার অনেকে আয় রোজগার করে সংসার চালান।’
একই গ্রামের নসিমন চালক মনিশংকর মণ্ডল বলেন, ‘সিংগা ব্রিজ থেকে প্রতিদিন দুই তিন নসিমন শাপলা আমরা বাগেরহাটের মোল্লাহাট ও নড়াইল জেলার নড়াগাতী বাজারে নিয়ে যাই। ওইসব এলাকার ব্যবসায়ীরা এখানে এসে শাপলা কিনে নিয়ে আবার ওখানে বিক্রি করেন। প্রতিদিন আমাদের হাজার টাকা রোজগার হয়। এভাবে প্রায় চার মাস চলবে এই শাপলা ট্রিপ।’
পাইকারি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সাতপাড়া, সিংগা ও হাতিয়ারা এলাকার মানুষের কাছ থেকে শাপলা কিনে গোপালগঞ্জ জেলা শহরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি করি। এতে ভালোই আয় হয়। ঘুরে না বেড়িয়ে কাজ করে খাওয়া ভালো। এতে শাপলা সংগ্রহকারীদেরও উপকার হলো, আমারও কিছু হলো। করোনা বলে এ বছর একটু লাভ কম হচ্ছে। তবে মানুষের খাদ্য হিসেবে এই শাপলা বেশ জনপ্রিয়।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, সুদূর অতীত থেকে এই অঞ্চলের মানুষ সবজি হিসেবে খেয়ে থাকেন পুষ্টিগুণ, আয়োডিন ও আয়রন সমৃদ্ধ এই শাপলা । বিক্রি করে দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহও করছেন তারা। অনেকে শাপলার ব্যবসা করে ভালোই আছেন। গোপালগঞ্জের বিলে উৎপাদিত শাপলা জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায়ও পাঠানো হয়।’
সান নিউজ/ এআর