আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অর্থনৈতিকভাবে প্রায় দেউলিয়া ও দেনায় জর্জরিত পাকিস্তানের গত ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত একেবারে তলানিতে থাকা রিজার্ভ ৮.২১ বিলিয়ন ডলার। বছর শেষে ৭ বিলিয়ন ডলার বৈশ্বিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
আরও পড়ুন : রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেবে জান্তা সরকার
পাহাড়সম ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েই ‘মি. টেন পার্সেন্ট’ খ্যাত পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কো-চেয়ারম্যান এবং দুর্নীতির অভিযোগে কয়েক বছর জেল খাটা আসিফ আলি জারদারি আবার পাকিস্থানের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন, এমনটিই শোনা যাচ্ছে। মঙ্গলবার মাঝ রাতের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত করেছে পাকিস্তান মুসলীম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পিপিপি। ডন, বিবিসি, এএফপি।
১৯৫৫ সালে সিন্ধুর নবাবশাহর সুপরিচিত বালুচ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কন্যা বেনজির ভুট্টোকে বিয়ের পর ১৯৮৭ সালে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। তাদের বিয়ের এক বছর পর ১৯৮৭ সালে বেনজির ভুট্টো প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন। পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।
একই বছর, জারদারি জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসাবে তার নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ভুট্টো আলী জারদারিকে পাকিস্তানের বিনিয়োগ ও পরিবেশমন্ত্রী হিসেবে তার প্রশাসনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যা অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। মন্ত্রিসভায় থাকাকালীন বিরোধীরা জারদারির বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন। তিনি পাবলিক ফান্ড চুরি করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছিল। তখন থেকে দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির কারণে তাকে ‘মি. টেন পার্সেন্ট’ তকমা দেওয়া হয়। অর্থাৎ ১০% কমিশন ছাড়া এক পা-ও সামনে বাড়াতেন না তিনি। বিরোধী এবং সরকারি তদন্তকারী উভয়পক্ষ থেকেই অভিযোগ ছিল, জারদারি শত শত মিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে আÍসাৎ করেছেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও ১৯৯৭ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত জেলে ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন : নির্বাচনের ফলাফলে পিটিআইয়ের চ্যালেঞ্জ
২০০৭ সালের আগে পাকিস্তানের বাইরে আলী জারদারি খুব একটা পরিচিত মুখ ছিলেন না। কিন্তু জঙ্গিরা তার স্ত্রীকে হত্যার পর আন্তর্জাতিক মঞ্চে নাম উঠে আসে জারদারির। বেনজির ভুট্টোর মৃত্যুর পর জনগণের সহানুভূতি পেয়ে ২০০৮ সালে তিনি সহজেই প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন। তবে উচ্চ রাজনৈতিক ক্ষমতায় তার যাত্রা আবারও বিতর্ক এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে ছেয়ে যায়। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি অসদাচরণ এবং দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন বারবার। যদিও আদালতে কিছুই প্রমাণিত হয়নি। তিনি একজন বুদ্ধিমান রাজনৈতিক নেতা বলেও বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। গত বছর ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আসিফ আলী জারদারি নিঃসন্দেহে দেশের অন্যতম বুদ্ধিমান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন নারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা হিসেবে দুটি বিলে স্বাক্ষর করেন তিনি। প্রথম বিলে বিভিন্ন প্রথার অধীনে নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া এবং তাদের ন্যায্য উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য কঠোর শাস্তির দাবি করা হয়। দ্বিতীয় বিলে এসিড হামলায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করা হয়েছে। ২০১৩ সালের পর আবারও দ্বিতীয়বারের মতো এ পদে বসতে যাচ্ছেন আলী জারদারি। পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পিপিপির ঐক্যমতের পর বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি।
সান নিউজ/আরএ