আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার অধিকাংশ এলাকায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে অন্তত ৩৮৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধুমাত্র তুর্কিতেই নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২,৩৭৯ জন। বাকিরা প্রতিবেশী দেশটিতে মারা গেছেন।
আরও পড়ুন : সহায়তার ঘোষণা বাইডেনের
সোমবারের (৬ ফেব্রুয়ারি) এই ভূমিকম্পকে ১৯৩৯ সালের আরজিনক্যান ভূমিকম্পের পর 'সবচেয়ে বড় বিপর্যয়' হিসেবে অভিহিত করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোগান। আগের ওই ভূমিকম্পে ৩৩ হাজার লোক মারা গিয়েছিল।
দেশ দুটির দুর্গত অঞ্চলজুড়ে ব্যাপকভাবে উদ্ধার অভিযান চলছে। সোমবার রাতেও চলে উদ্ধারকাজ। তবে গ্রাম ও শহরগুলোয় উদ্ধারকর্মীদের ধ্বংসস্তূপ অনুসন্ধানের সাথে সাথে এই সংখ্যা নিয়মিত বাড়ছে। হাজার হাজার মানুষ এই ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডে নিহত ১০
তুরস্ক সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক আবেদন জানানোর পর সাহায্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।
সিরিয়ায় নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। এই অঞ্চলটির সীমান্তের উভয় পাশের শিবিরগুলোতে লক্ষাধিক শরণার্থীর আবাসস্থল।
আরও পড়ুন : চিলিতে দাবানলে নিহত ২৩
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, সোমবার ভোররাতে গাজিয়ানটেপের কাছে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। তখন সব মানুষ ঘুমে।
স্থানীয় সময় আনুমানিক বেলা দেড়টায় সেখানে ৭.৫-মাত্রার নতুন এক কম্পন আঘাত হানে। তবে কর্মকর্তারা বলেছিলেন, সেটা 'আফটারশক নয়।'
আরও পড়ুন : পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আর নেই
ভূমিকম্পে দুটি দেশেই শত শত ভবন ধসে পড়ার পর ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষকে বাঁচাতে উদ্ধারকর্মীরা আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। ভূমিকম্পটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তুরস্ক ও সিরিয়া ছাড়াও লেবানন, সাইপ্রাস এবং ইসরাইলজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ এর কম্পন অনুভব করেন।
তুরস্কের একই অঞ্চলে আরও একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, যার কেন্দ্রস্থল ছিল কাহরামানমারাস শহরের কাছে।
দুর্গত এলাকা থেকে যেসব ছবি পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বাসাবাড়ি ও সড়কে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারকারী দলগুলোকে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : চীনা বেলুনটি ধ্বংস করলো যুক্তরাষ্ট্র
তুরস্কের ১০টি শহর ও প্রদেশের স্কুল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। পাশাপাশি হাতায়, মারাশ এবং আন্তেপের বিমানবন্দরগুলো বন্ধ বা আংশিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
অপরদিকে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল প্রতিবেশী তুরস্কে হলেও সিরিয়াতেও বহু শত মানুষ মারা গেছে। এই দুর্যোগের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ভিডিও এবং ছবি উঠে আসছে।
আলেপ্পোর উত্তর-পশ্চিমে এক শহর থেকে পাওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে ভবনগুলো ধসে পড়ার সাথে সাথে ধুলোর বিশাল মেঘের মধ্য দিয়ে বাসিন্দারা পালিয়ে যাচ্ছে, চিৎকার করছে।
আরও পড়ুন : বিমানবাহী রণতরী ডুবিয়ে দিল ব্রাজিল
ভূমিকম্পে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকা সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই সেখানে চিকিৎসা সেবা এবং জরুরি সরবরাহের সুযোগ সীমিত।
সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কাজ করা একটি ত্রাণ সংস্থা হোয়াইট হেলমেট জরুরি সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, তুরস্ক পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলগুলোর একটিতে অবস্থিত। ১৯৯৯ সালে দেশটির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।
সর্বশেষ ভূমিকম্পটি ঘটেছে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পশ্চিমমুখী ‘পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট’-এর চারপাশে।
আরও পড়ুন : ভূমধ্যসাগরে ১০ অভিবাসীর মৃত্যু
সিসমোলজিস্টরা দীর্ঘকাল ধরে বলে আসছেন যে এই ফল্টটি অত্যন্ত বিপজ্জনক, যদিও গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে কোনো উল্লেখযোগ্য কিছু হয়নি।
বিশেষ করে, ১৮৮২ সালের ১৩ অগাস্ট সেখানে ৭.৪-মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যা আজকের রেকর্ড করা ৭.৮-মাত্রার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
তা সত্ত্বেও, ১৯ শতকের ওই ভূমিকম্পে অনেক শহরের প্রচুর ক্ষতি হয়। আলেপ্পো শহরে ৭,০০০ মানুষ মারা যায়। শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের আফটারশক চলতে থাকে প্রায় এক বছর ধরে। সূত্র : আল জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন।
সান নিউজ/এইচএন