পটুয়াখালী প্রতিনিধি : পটুয়াখালীতে ১৮ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে উপকূলবাসী। প্রতিবছরই ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে হয় সাগর উপকূলের মানুষদের। ঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে এই অঞ্চলের মানুষদের টিকে থাকতে হয়। ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনলেই নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় উপকূলীয় মানুষদের।
আরও পড়ুন : সাগরে গভীর নিম্নচাপ
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপকুলের প্রায় ১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই শত শত গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়।
ইতিমধ্যে গত কয়েকবছরে ঝড়ের কবলে পড়ে নদীগর্ভে চলে গেছে হাজারো মানুষের সাজানো স্বপ্ন। অনেকের চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়েছে বসত ভিটা।
এমন পরিস্থিতিতে কিছু কিছু এলাকায় বাঁধ সংস্কারে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের।
আরও পড়ুন : ৪ জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, পটুয়াখালী জেলায় বেরিবাধঁ রয়েছে ১৩৩৫ কিলোমিটার। যার মধ্যে পটুয়াখালী সার্কেলের অধীনে ৮২২ কিলোমিটার এবং কলাপাড়া সার্কেলের অধীনে রয়েছে ৫১৩ কিলোমিটার। এছাড়াও পোল্ডার রয়েছে ৩৬টি এর মধ্যে পটুয়াখালী সার্কেলে ১৯টি এবং কলাপাড়া সার্কেলে ১৭টি।
ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে এরমধ্যে মোটামুটি ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ১০ কিলোমিটার। আবার অতি ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রয়েছে ১৮ কিলোমিটার। যার মধ্যে পটুয়াখালী সার্কেলে ১০ কিলোমিটার এবং কলাপাড়া সার্কেলে ৮ কিলোমিটার এবং আংশিক ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রয়েছে ৩৪ কিলোমিটার এর মধ্যে পটুয়াখালী সার্কেলে ১৯ কিলোমিটার এবং কলাপাড়া সার্কেলে ১৫ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন : ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ এলাকা মির্জাগঞ্জ উপজেলা। নদী গর্ভে প্রায় বিলীন হয়ে গেছে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পিঁপড়াখালী গ্রাম। শত বছর ধরে নদী ভাঙনে এ এলাকার শত শত একর জমি, বসতবাড়ি, বাজার, কবরস্থান, মসজিদসহ বিলীন হয়েছে একাধিক বেড়িবাঁধ। ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসতে হয়েছে অনেককে। এবার ঝড়ের খবরে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ওই এলাকার মানুষ।
পরপর কয়েক বারের প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে ওই বেড়িবাঁধটি দূর্বল হয়ে পড়ে। গত বছর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে ৩ থেকে ৪ কিঃমিঃ বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন : ঘূর্ণিঝড় নিয়ে ব্রিফিং করবেন দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী
ঝুঁকিপূর্ণ এই বেড়িবাঁধ নিয়ে স্থানীয়রা রয়েছে চরম আতংকে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ গুলো জরুরী ভাবে কাজ করা হলেও পরবর্তীতে সেগুলো স্থায়ী ভাবে মেরামত না করার কারণে উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে। তাই আশ্বাস নয় স্থায়ী সমাধানের দাবী স্থানীয় ভুক্তভোগীদের।
এদিকে দূযোর্গ মোকাবেলায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে কাজ করার কথা জানালেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আরও পড়ুন : কমতে পারে তাপমাত্রা
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে অন্য সব জেলার চেয়ে বেড়িবাঁধ সব চেয়ে বেশি। এখানে ৩৬টি পোল্ডার ও ১৩৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এখানে যেহেতু সংখ্যা বেশি লেন্থও বেশি কাজের ঝুঁকিও বেশি। আমরা সকল বেড়িবাঁধগুলো সংরক্ষণ করার জন্য ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি।
প্রাকৃতিক দূর্যোগের সাথে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত উপকূলীয় জনজীবন। সর্বস্ব হারানো পরিবারগুলো আর নতুন করে কিছু হারাতে চায় না। তারা অতিদ্রুত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চায়।
সান নিউজ/এইচএন