শিক্ষা

দেড় বছরে ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাকালে বন্ধ ছিলো দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই দেড় বছর সময়ে দেশের ২১টি জেলার ৮৪ উপজেলায় প্রায় ১৪ হাজার (১৩৮৮৬) বাল্যবিবাহ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হয়েছে খুলনায়।

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর দেশের ২১টি জেলার ৮৪ উপজেলায় প্রায় ১৪ হাজার (১৩৮৮৬) বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।

সংস্থাটির তথ্যে দেখা যায়, দিনে গড়ে ১.৭টি বাল্যবিয়ে হয়েছে। এরমধ্যে ৫০৮৯ জন স্বীকার করেছে যে করোনাকালে তারা অপ্রত্যাশিতভাবে গর্ভধারণ করেছে। যেসব মেয়েরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে, তাদের মধ্যে শতকরা ৫০.৬ জনের বিয়ে হয়েছে ১৬-১৭ বছরের মধ্যে। শতকরা ৪৭.৭ জনের বিয়ে হয়েছে ১৩-১৫ এর মধ্যে। এমনকী শতকরা ১.৭ জনের বিয়ে হয়েছে ১০-১২ বছর বয়সে।

জরিপের তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে হয়েছে বরগুনা জেলাতে ১৫১২টি, ১২৭২টি কুড়িগ্রামে, নীলফামারিতে ১২২২, লক্ষীপুরে ১০৪১ এবং কুষ্টিয়াতে ৮৮৪ জন। বাল্যবিয়ের উদ্যোগ যারা নিয়েছেন, এরমধ্যে শতকরা ৭৮ জনই বাবা মা। অথচ শতকরা ৯৬ ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন, বাল্যবিয়ে বন্ধ হওয়া উচিত।

গত বছরের মার্চ থেকে টানা দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর সারাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। খোলার পরও অনেক ছাত্রী স্কুলে নিয়মিত আসছে না বলে নজরে আসে শিক্ষকদের। এরও আগে অনেক ছাত্রী নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্টও জমা দিচ্ছিলো না।

শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিপড়ুয়া অনেক ছাত্রীরই বিয়ে হয়ে গেছে। প্রধানত করোনাকালে আর্থিক অনিশ্চয়তা ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতাকে বাল্যবিবাহের কারণ হিসেবে দেখছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।

শুধু খুলনায় ৩ হাজার বাল্যবিবাহ: গত বছর মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরুর কিছুদিন পরই বিয়ে হয়ে যায় খুলনা নগরের রেলওয়ে মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া এক ছাত্রীর। তার মা বলছিলেন, ছোট একটি ভাতের হোটেল ছিলো তাঁদের। ব্যবসা করে কোনোমতে সংসার চলত। করোনা শুরুর পর লকডাউনে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। অভাবে পড়ে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন। এখন মেয়ের সংসারে কলহ আর অশান্তি।

করোনাকালে খুলনা জেলার ১০ উপজেলায় গত দেড় বছরে ৩ হাজার ৯টি বাল্যবিবাহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তারা। সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হয়েছে ডুমুরিয়ায় ৭৫১টি। এরপরে রয়েছে কয়রায় ৬৮১টি, পাইকগাছায় ৪৮৩টি। বাকি সাত উপজেলায় ১ হাজার ৯৪টি বাল্যবিবাহ হয়েছে।

অবশ্য বাল্যবিবাহ প্রতিরোধেরও উদ্যোগ আছে। মহিলা অধিদপ্তরের খুলনা কার্যালয়ের হিসাবমতে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত বাল্যবিবাহের বিষয়ে তথ্য পেয়ে খুলনায় ৬৮টি বাল্যবিবাহ ঠেকানো গেছে।
আরও ৮ জেলার চিত্র: টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম বলেন, করোনাকালে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ২৪২ ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে আরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

শহরের টাঙ্গাইল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং বিবেকানন্দ স্কুল অ্যান্ড কলেজের কিছু শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। টাঙ্গাইল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের ১৫-১৬ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। তবে তারা অনেকেই স্কুলে আসছে। বিয়ের কথা স্বীকার করছে না।

নেত্রকোনার খালিয়াজুরিতে শুধু দুটি বালিকা বিদ্যালয়েই ৩৫ জন ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অধিকাংশ ছাত্রীর বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। তারা সিদ্দিকুর রহমান বালিকা বিদ্যানিকেতন ও আবদুল জব্বার রাবিয়া খাতুন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

সিদ্দিকুর রহমান বালিকা বিদ্যানিকেতনের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটির (১৫) বাড়ি খালিয়াজুরি সদর ইউনিয়নে। গত নভেম্বরে তার বিয়ে হয় একই উপজেলার এক তরুণের (২৫) সঙ্গে। মেয়েটির বাবা বললেন, করোনায় ইস্কুল বন্ধ আছিল। আমারও কাজ কাম নাই। অভাবের সংসার। বালা (ভালো) একটা ছেরা (ছেলে) পাইছি, তাই বিয়া দিয়া দিছি। নিজের সংসার বুইঝিয়া লইছে।

নেত্রকোনো জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল গফুর জানান, নেত্রকোনায় ১০টি উপজেলায় ২৭০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে।

দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও রাজারহাট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ৭৬৭ ছাত্রীর বাল্যবিবাহের খবর পাওয়া গেছে।

বাল্যবিবাহ বন্ধের লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে দেশ: সাত বছর আগে লন্ডনে অনুষ্ঠিত গার্ল সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ ও ১৮ বছরের কম বয়সীদের বাল্যবিবাহ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা জানানোর পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ নির্মূলের অঙ্গীকার ঘোষণা করেছিলেন।

বাল্যবিবাহ নিরোধে নেওয়া জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে শূন্যের কোঠায় নামানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল। বছরের আর তিন মাস বাকি। যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সর্বশেষ জরিপ (মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯-এমআইসিএস) বলছে, দেশে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী মনে করেন, সরকারের সচেতনতা কার্যক্রমের ফলে কয়েক বছর ধরে বাল্যবিবাহ কমতে শুরু করেছিলো। করোনাকালে সে ধারা ব্যাহত হয়েছে।

তিনি বলেন, মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাল্যবিবাহের হার বেড়েছে। খানা জরিপ করে বের করতে হবে ইতোমধ্যে কত শিক্ষার্থী আমরা হারিয়ে ফেললাম।

বাল্যবিবাহের শিকার ছাত্রীদের আবার স্কুলে ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন রাশেদা কে চৌধূরী। বিয়ে হয়ে গেলেও লেখাপড়া চালু রাখতে ছাত্রীদের উপবৃত্তি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন এই শিক্ষাবিদ।

সান নিউজ/এফএআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত 

ভোলা প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহ থেকে...

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর গণসংযোগ

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ

সান নিউজ ডেস্ক: আজ বিশ্ব ম্যালেরি...

টঙ্গীবাড়ি ভাতিজারা পিটিয়ে মারলো চাচাকে

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

গরমে ত্বক ব্রণমুক্ত রাখতে যা খাবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গরমকাল এলেই ব্র...

মাকে গলা কেটে হত্যা করল ছেলে

জেলা প্রতিনিধি: বিয়ে না দেওয়ায় চা...

পঞ্চগড়ে দুই শিশুর মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে চাওয়াই নদীতে গোসল করতে নেমে আলমি আক্...

চারতলা থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

খায়রুল খন্দকার টাঙ্গাইল : টাঙ্গাই...

শনিবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না 

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাইপলাইনের কাজে...

ভারতীয় ৩ কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র স...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা