জেলা প্রতিনিধি, পাবনা: অবৈধভাবে নিয়োগ ও একাধিকবার পদোন্নতি পাওয়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুশফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি।
আরও পড়ুন: ইবিতে শ্বাসরোধ করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ
দীর্ঘ ৪ বছরেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই উল্টো তাকে গ্রেড টু অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৭ মার্চ) দিনের অফিসিয়াল যেকোনো সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুনের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের আপগ্রেডেশন বোর্ডের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। এ সভায় অধ্যাপক ড. মো. মুশফিকুর রহমানকে পদোন্নতি দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৮ সালে ইউজিসির তৎকালীন সদস্য প্রফেসর ড. এম শাহ নাওয়াজ আলির নেতৃত্ব গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি পাবিপ্রবি শিক্ষক ড. মুশফিকুর রহমানের নিয়োগ থেকে শুরু করে পদোন্নতি ও পদ-পদবি গ্রহণ সবকিছুতেই অনিয়মের প্রমাণ পায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে ইবি প্রেসক্লাবের শ্রদ্ধাঞ্জলি
কিন্তু সেই সুপারিশ দীর্ঘ ৪ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনের সে সুপারিশ অমান্য করে ক্ষমতার অপব্যবহার দ্বারা উপাচার্য হাফিজা খাতুন অদৃশ্য কারণে মুশফিকুর রহমানকে গ্রেড টু অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিচ্ছেন।
অধ্যাপক মুশফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়মের অভিযোগ, তার লিখিত বক্তব্য, পাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য এবং ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তরসহ সকল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি চাওয়া হলেও এই শিক্ষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েও তদবিরের জোরে কয়েকজন প্রথম শ্রেণি পাওয়া প্রার্থীকে পেছনে ফেলে সহকারী অধ্যাপক পদে চাকুরি বাগিয়ে নেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু
তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, মুশফিকুর রহমানের আবেদনপত্রটিই বাতিল হওয়ার কথা ছিল। ১ম শ্রেণি প্রাপ্ত যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও অযোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচনী বোর্ডে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা ও নিয়োগ প্রদান সম্পূর্ণ অবৈধ।’
এরপর মুশফিকুর রহমান অদৃশ্য কারণে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন পাবিপ্রবি পদোন্নতির নীতিমালার শর্ত পূরণ না করেই। নীতিমালায় সহকারী অধ্যাপক পদে সক্রিয় চাকুরি ৬ বছর থাকলে তবেই সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিধান রয়েছে।
আরও পড়ুন: পাবনায় বিএনপির আলোচনা ও ইফতার মাহফিল
কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘তার (মুশফিকুর রহমানের) এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় চাকুরিকাল ছিল ১ বছর ৭ মাস ২৪ দিন। তাই তার সহযোগী অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশন সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভুত।’ অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রেও তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, তারই বিভাগের শিক্ষক হাসিবুর রহমানের গবেষণাপত্র নিজ নামে প্রকাশ করার অভিযোগও ওঠে মুশফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। এছাড়া আরও একাধিক গবেষণাপত্রে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে বলে তার বিভাগের একাধিক শিক্ষক জানান।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সহযোগী অধ্যাপকের নিচে ডিন হওয়ার নিয়ম না থাকলেও সহকারী অধ্যাপক হয়েও তিনি ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় ‘ডিন পদে তার নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সুস্পষ্ট লংঘন।’
আরও পড়ুন: ঘোষণার পাঠক ঘোষক হতে পারে না
এসব কারণে তদন্ত কমিটি মুশফিকুর রহমান সম্পর্কে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।
কিন্তু সে সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করে অতীতের উপাচার্যগণের অনিয়মের ধারাবাহিকতায় বর্তমান উপাচার্য হাফিজা খাতুনও ক্ষমতার অপব্যবহার করে মো. মুশফিকুর রহমানকে গ্রেড টু অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মুশফিকুর রহমান বলেন, এটা কোনো পদন্নোতি নয় অর্থনৈতিক লাভজনক একটা বিষয় অন্য কোনো বিষয় নয়। ২০১৮ সালে ইউজিসির দেয়া আমার বিরুদ্ধে সেই সব অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে বলেই আমি অধ্যাপক পদে পদোন্নত পেয়েছি।
আরও পড়ুন: পুলিশ সদস্যের স্ত্রীর গলায় ফাঁস
কেউ হয়তো ব্যক্তিগতভাবে অভিযোগ দিয়েছিলেন আমরা বিরুদ্ধে সেই সব অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে।’ তদন্ত কমিটি তো আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিল, কোনো ব্যবস্থা নিয়েছিল কিনা- এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুন বলেন, আপনার কাছে এই নিউজটা কে দিয়েছে? ইউজিসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন তো শুধু আমার কাছে থাকবে! কিন্তু আমাদের ফাইলে তো নাই সেটা (তদন্ত প্রতিবেদন), থাকলেও হয়তো ওটা উনার ওভারকাম হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঈশ্বরদীতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
কেউ হয়তো আপনাকে রিকুয়েস্ট করেছে তাই আপনারা শুধু তার ব্যাপারই (নিউজ) দেখছেন! শুধু একজনের বিরুদ্ধে নিউজ করা কি আপনাদের সাংবাদিকতার মধ্যে পড়ে ভাই? সেটা আগে জানতে চাই। কিন্তু এখন আমার মিটিং চলছে, এখন কথা বলতে পারবো না।
পাবিপ্রবি অফিসার সমিতির সভাপতি হারুনার রশিদ ডন বলেন, উপাচার্য হাফিজা খাতুনের হাতে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জিম্মি হয়ে পড়েছে। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে যা খুশি তাই করছেন। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না। তার পছন্দের কিছু চাটুকার শিক্ষক-কর্মকর্তাকে যখন যেভাবে ইচ্ছা পদোন্নতি দিচ্ছেন।
সান নিউজ/এনজে
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            