বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের ঢোলারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় এবং হিসাব সহকারী ইব্রাহিম আলীর বিরুদ্ধে একই অফিসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করতে পুলিশের বিরুদ্ধে নাটকীয়তার অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন: নরসিংদীতে ট্রাকচাপায় নিহত ৪
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে ভিকটিম থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলেও পুলিশ অজ্ঞাত কারণে মামলা রুজু করতে টালবাহানার আশ্রয় নেয়। একদিন পর মামলা নিলেও পালাক্রমে ধর্ষণের ওই ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে। গণধর্ষণের ধারা ৯(৩) না লিখে ৯(২) লিপিবদ্ধ হয়েছে।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিতর্কিত চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় নির্বাচিত হবার পর দরিদ্র এক গৃহবধূকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়। সেই থেকে চেয়ারম্যান ও হিসাব সহকারী ইব্রাহিম আলী ওই নারীর স্বামীকে প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে করে আসছিল।
আরও পড়ুন: বিএনপি ভোট ডাকাতের সর্দার
এদিকে, গত মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে ওই নারী চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষের বাথরুম পরিষ্কার করতে গেলে চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় বাথরুমের দরজা আটকে দিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং পরিষদ থেকে দ্রুত সটকে পড়ে।
পরে ইজ্জত হারিয়ে ওই নারী কাঁদতে কাঁদতে হিসাব সহকারী ইব্রাহিম আলীর কক্ষে গিয়ে ঘটনা জানালে সে ঘটনা ফাঁস না করতে ভয়ভীতি দেখায় এবং সেও ওই নারীকে ধর্ষণ করে।এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূ বৃহস্পতিবার রাতে রুহিয়া থানায় অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়।
আরও পড়ুন: পলিশ করলে চালের পুষ্টি অপচয় হয়
কিন্তু পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে মামলা রুজু না করে ভুক্তভোগীকে একটি কক্ষে আটকে রাখে এবং তাকে মামলা না করতে ভয় ভীতি দেখায় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর স্বামী। ওই সময় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুলিশকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালায় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল।
বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল সুলতানা রাজিয়া রুহিয়া থানায় গিয়ে ধর্ষণের শিকার নারী জবানবন্দি দীর্ঘসময় ধরে শোনেন এবং সাংবাদিকেদের সহযোগিতা চেয়ে থানা কম্পাউন্ড ত্যাগ করেন। সে সময় তাকে মামলা রুজু হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
আরও পড়ুন: সারিকার জাঁকজমকপূর্ণ বিবাহোত্তর সংবর্ধনা
অবশেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ মূল এজাহার পরিবর্তন করে ২য় ধর্ষক ইব্রাহিম আলীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টা এবং চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১)/ ৯ (৪) (খ) ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-১০ (তাং ৩০.০৯.২০২২)।
অথচ ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী পালাক্রমে ধর্ষনের ঘটনায় মামলাটি ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৩) ধারায় রুজু করার কথা বলে জানান ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আবু তোরাব মানিকসহ কয়েকজন আইনজীবী।
আরও পড়ুন: কাবুলে নিহত বেড়ে ৩৫
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীর স্বামীর অভিযোগ করে বলেন, আমরা অশিক্ষিত মানুষ। আইনের ধারা বুঝি না। প্রথম অভিযোগটি ছিল হাতের লেখা। পরে পুলিশ ওই অভিযোগটি পরিবর্তন করে তাদের নিজস্ব কম্পিউটারে দরখাস্ত লিখে এনে আমার স্ত্রীর সাক্ষর নেয়। তাতে কি লেখা ছিল আমরা কিছুই জানি না।
রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সোহেল রানা জানান, বাদীনীর জবানবন্দি এবং হাতের লেখা অভিযোগে খানিকটা ফারাক থাকায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বাদীনীর অভিযোগ মামলা হিসেবে রুজু করা হয়।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল সুলতানা রাজিয়া জানান, ভুক্তভোগী যেভাবে জবানবন্দি দিয়েছে সেভাবে মামলা হয়েছে। এটা পালাক্রমে ধর্ষণের ঘটনা নয়।
সান নিউজ/কেএমএল