সারাদেশ

কৃষিতে সংকট, বোরো মৌসুমে শ্রমিক নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনার ঘাত-অভিঘাতে মানুষের জীবন মান আর অর্থনীতির প্রতিটি খাত যেমন লন্ডভন্ড, নিশ্চয় কৃষিও এর বাইরে নয়। উন্নত কৃষি ব্যবস্থার প্রতিটি দেশ তাই কৃষিখাতের দিকে নজর দিচ্ছে গুরুত্ব সহকারে। বাংলাদেশে কৃষিখাতে এখনও পর‌্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি বলে উদ্বেগে রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রধানমন্ত্রীর প্রনোদনা বরাদ্দের ঘোষণাতেও এ সম্পর্কে বিশেষ কিছু দেখা যায়নি। দেশে এখন বোরো ধানের ভরা মৌসুম। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শুরু হবে ধান কাটার কাজ। কিন্তু করোনা আতঙ্কে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় চিন্তিত কৃষক। সংকট নিরসনে কৃষি বিভাগের নেই সমন্তি উদ্যোগ। তবে ভয় উপেক্ষা করেই কোন কোন অঞ্চলে কৃষক নিরলস কাজ করে চলেছেন মাঠে মাঠে।

হাওরে ধান কাটার সময় কৃষিশ্রমিকরা আসেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে। শুধু হাওরেই নয়, কৃষিশ্রমিকরা শ্রম বিক্রি করেনএক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে গিয়ে। কিন্তু দেশজুড়ে সব ধরণের পরিবহন বন্ধ থাকায় তারা আটকে আছেন নিজ নিজ এলাকায়। তাছাড়া করোনাভাইরাসের ভয়ে তাদের কাজও মিলছে না সহজে। বাগেরহাটে নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। এর প্রভাব পড়েছে কৃষি কাজেও। বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য একসাথে কাজ করতে চাইছে না শ্রমিকরা। শ্রমিক সংকটে বোরোর ভরা মৌসুমে মাঠের ফসল নষ্ট হতে পারে বলে আশংকা চাষীদের।

ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলায় বোরো চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আর ১৫শ’ ৫০হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে সবজি। মোল্লারহাট ঘুরে জানা গেছে, এখানকার প্রান্তিক কৃষকদের কার্যক্রম তদারকিতে মাঠে নেই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা। করোনা আতঙ্কে চাষাবাদে স্থানীয় চাষী এবং শ্রমিকদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় ফসল উৎপাদনে সৃষ্টি হচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতা।

স্থানীয় কৃষকদের অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ‘ধান ক্ষেত আগাছায় ভরে গেছে। করোনাভাইরাসের ভয়ে কাউকে কাজে নিতে পারছিনা, আবার কেউ কাজেও আসতে চাইছে না। কৃষি কর্মকর্তাদেরও কোন উদ্যোগ নেই এক্ষেত্রে। তবে ফকিরহাটের চিন্তিত কৃষকদের দূরবস্থায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন লখপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দাশ। করোনাভাইরেস প্রভাব থেকে দূরে থাকতে কৃষক এবং শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিচ্ছেন সচেতনতামূলক নানা পরামর্শ। এর মাধ্যমে কৃষিকাজ সচল রাখতে উদ্বুদ্ধ করছেন সবাইকে।

এলাকার দিনমজুর গনি মোড়ল, ইদ্রিস গাজি, ওবায়দুর রহমান, মোঃ ওহিদ বললেন, ‘করোনা আতঙ্কে কেউ আমাদের কাজে নিচ্ছে না। খেয়ে না খেয়ে গত কয়েক দিন ধরে অলস সময় কেটেছে আমাদের। কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দাশের পরামর্শের পর এই মুহুর্তে কাজ জুটেছে। আমরা এখন মুখে মাক্স পরে একজন অন্যজনের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে মাঠে কাজ করছি। বাড়ি ফিরে সাবান দিয়ে গোসল করে নিচ্ছি।’

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার বলছেন, ‘কৃষকদের কথা চিন্তা করে খোলা রাখা হচ্ছে সার ও কীটনাশকের দোকান। সেখানে হাত ধোঁয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে।’

ময়মনসিংহ সদরের চরকালিবাড়ি এলাকার বোরো চাষি আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আর মাত্র এক মাসের মধ্যেই বোরো ধান ঘরে উঠবে। এই সময় ভয়ে ঘরে বসে থাকাতো সম্ভব নয়। ঘরে ধান তুলতে না পারলে সারাবছর ছেলেমেয়েদের নিয়ে সংসার চলবে কী করে?’ তার অভিযোগ, এখনও তাদের সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। কৃষি বিভাগের হিসেবে, জেলায় ২ লাখ ৫৯ হাজার হেক্টর জমিতে হয়েছে বোরোর চাষ। আর ময়মনসিংহের চরাঞ্চলে সবজি চাষ হয়েছে ব্যাপক হারে।

ময়মনসিংহ কৃষি খামারবাড়ির উপপরিচালক আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কৃষকদের সুরক্ষায় সরকারি পর্যায়ে এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ সম্পর্কে সরকারি কোনও নির্দেশনাও নেই। কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা কৃষকদের যতটুকৃ সম্ভব সচেতন রাখতে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।’

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় গম ও পেঁয়াজ ক্ষেতে ব্যস্ত কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা। করোনাভাইরাসের ভয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করলেও তাদের সবার হাতে নেই গ্লাভস কিংবা মুখে মাস্ক। কৃষকদের সবাই জানালেন, স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে কোনও দিকনির্দেশনা দেওয়া না হলেও অন্যদের দেখাদেখি তারা নিজেরাই কেউ কেউ মাস্ক পরেছেন।

যদিও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামসুল হকের দাবি, ‘প্রয়োজন ছাড়া কৃষকদের মাঠে যেতে মানা করা হচ্ছে। আর গেলেও তাদেরকে মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে। বাড়িতে ফিরে সাবান দিয়ে হাত পা মুখ পরিষ্কার করতে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কারোর সার দিতে সমস্যা হলে প্রশাসনের মাধ্যমে কৃষকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. আবদুল মুঈদ বলছেন, জরুরি পণ্য হিসেবে সার, বীজ, কীটনাশক সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফসল রোপন ও কর্তনে সাশ্রয়ী এবং ভর্তুকি মূল্যে খামারযন্ত্র ব্যবহারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এতে শ্রমিক সংকট মোকাবেলা সহজ হবে। করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক দুর্যোগে কৃষকদের যাতে কোনরকম সমস্যায় না পড়তে হয় সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড খলীকুজ্জামান বলেন, ‘চলমান সংকটের সময় শ্রমিক সংকটে না পড়ে কৃষক যেন তার ফসল ঠিকভাবে ঘরে তুলতে পারেন এবং একই সাথে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দামও পান সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’ শ্রমিকদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহের পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্য পরিবহনেরও ব্যবস্থা করা, সহজ শর্তে দেয়া এবং প্রয়োজনে কৃষকদেরকে প্রনোদনা দেয়ার দাবি জানান তিনি। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘দেশজুড়ে মে– জুন মাসে বোরো ধান কাটা হবে। আমাদের চালের ৬০ -৬৫ ভাগ আসে বোরে থেকে। তাই বোরোর প্রতি বেশি করে নজর দেয়া প্রয়োজন এই মুহুর্তে।’

ড. খলীকুজ্জামান বলেন, শ্রমিক যদি ভয়ে ফসল কাটতে যেতে না চান তবে স্বাস্থসম্মতভাবে তাদেরকে মাঠে কীভাবে নেয়া যায়, সেই পরিকল্পনা করতে হবে। বোরোর ব্যপারে এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে।’

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

দেশে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকাসহ দেশের ১৭টি অঞ্চলের উপর দিয়ে ঝোড়ো...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বে...

বাহাদুর হোসেন খান’র প্রয়াণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের...

দুর্জয়ের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মানিক...

সাবেক এমপি দবিরুল গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য দবিরুল...

পাকিস্তান যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রম...

হত্যা মামলায় সাবেক কাউন্সিলর গ্রেফতার

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক...

বৃষ্টি অব্যাহত থাকার আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ল...

ডেঙ্গুতে একদিনে আক্রান্ত ৩১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে আরও ৩১৭...

বিশ্বকাপে দ. আফ্রিকার শুভ সূচনা

স্পোর্টস ডেস্ক : নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা