নিজস্ব প্রতিনিধি, কুমিল্লা : সাত মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন মা। অবশেষে মায়ের কোলে ১৫ দিন কারাগারে কাটানো পর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে জেল থেকে বের হয়েছে ওই শিশু। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) সকালে কারামুক্তির পর ওই শিশুর মা শাহানাজ বেগম দাবি করেন, ‘আমি নির্দোষ। আমাকে এবং আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে।’
এসময় তিনি আরও বলেন, আমার দেবরের স্ত্রী আত্মহত্যা করে মারা যান। ওই মামলায় আমার স্বামীর সঙ্গে আমিও আত্মসমর্পণ করি। তখন বিচারক জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠান। তখন আমার কোলজুড়ে ছিল আমার সাড়ে ছয় মাসের ছোট্ট শিশুটি। কারাগারে চার দেয়ালে অন্ধকার একটি কক্ষে রাখা হয়। রাতে আলো না পেয়ে আমার শিশুটি কান্না করতে থাকতো। এদিকে খাবার না পেয়ে শিশুটি আরও বেশি কাঁদতো।
শাহানাজ বলেন, ‘মামলায় আমার স্বামীকেও কারাগারে পাঠানো ঞয়। আর কোলে শিশু সন্তানকে নিয়েই আমি দুই দিনের রিমান্ডে গিয়েছি। রিমান্ড নামঞ্জুরের আবেদনেও সহানুভূতি মিলেনি। দুই দিনের রিমান্ড শেষে ছেলেকে বুকে নিয়ে সেই অন্ধকার কক্ষে থাকতে হয়েছে। এরমধ্যে জেলখানার দূষিত পরিবেশে ছেলে চিকেনপক্সে আক্রান্ত হয়। চলমান করোনা ভাইরাসের ভয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে আমি কারাগারের ভেতরে কান্না করতাম।’
জানা যায়, রিমান্ড শেষে ১৫ দিন জেল হাজতে থাকার পর জামিনের আবেদনে বুধবার (৪ নভেম্বর) শিশুসহ শাহানাজকে আদালতে হাজির করা হয়। ওইদিন সকালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামসহ ঢাকা থেকে কয়েকজন আইনজীবী একটি মামলার শুনানির জন্য কুমিল্লার আদালতে যান। মামলা পরিচালনার সময় কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভেতরে তারা দেখেন একটি শিশু কাঠগড়ার মধ্যে গড়াগড়ি করছে। আবার কখনও কান্না করছে। বিষয়টি তাদের নজরে আসলে শিশুসহ ওই মাকে জামিনের জন্য বিচারকের কাছে আবেদন করেন তারা। পরে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আতাব উল্লাহ শিশুসহ মা শাহানাজ আক্তারকে জামিন দেন।
জামিনে মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আক্তার হামিদ খান কবির বলেন, ‘২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন গৃহবধূ আয়েশা আক্তার রীমা। এই মৃত্যুর ঘটনায় গৃহবধূ আয়েশার বাবা তার স্বামী নাসির উদ্দিন, ভাসুর মাসুম ও তার স্ত্রী শাহনাজ বেগমকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গত ১৯ অক্টোবর আদালতে শিশু সন্তানকে নিয়ে তার বাবা-মা আত্মসমর্পণ করেন। তখন আমরা মনে করেছি আদালত স্বামীকে কারাগারে পাঠিয়ে শিশুটির কারণে স্ত্রীকে জামিন দেবেন। কিন্তু আমরা হতাশ হয়েছি।
এরপর পুলিশ শিশুর মাকে রিমান্ডের আবেদন করে। ভেবেছিলাম চিকেনপক্সে আক্রান্ত শিশুর কথা চিন্তা করে পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করা হবে না। কিন্তু সেখানেও আমদের হতাশ করা হয়েছে। অসুস্থ শিশু কোলে থাকা একজন নারীকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তবে বুধবার জামিন শুনানির সময় মামলাটি নিয়ে বিচারক নিজেই সন্দেহ প্রকাশ করেন।’ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২৬ মাসেও এর চার্জশিট দিতে পারেননি বলে জানান ওই আইনজীবী।
সান নিউজ/এম/এস