একটি দুর্ঘটনা কতটা নিঃস্ব করে দিতে পারে, শরীয়তপুরের নড়িয়ার আবুল কালাম আজাদের মৃত্যু সেই প্রশ্নটাই নতুন করে তুলেছে। ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের বেয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে তার মৃত্যু গোটা দেশকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। শোকের ছায়ায় ডুবে গেছে কালামের গ্রাম ঈশ্বরকাঠি; নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা।
২৭ অক্টোবর, ২০২৫ সোমবার সকালে উপজেলার মোক্তারের চর পূর্ব পোড়াগাছা দাখিল মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় কালামকে। এর আগে রাত একটার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে মরদেহ পৌঁছালে শোকের মাতম শুরু হয় গ্রামে। জানাজায় অংশ নেন শত শত মানুষ, স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু ও সহকর্মীরা। সবাই একটাই কথা বলেছেন ‘এমন পরিশ্রমী, শান্ত মানুষটি এমনভাবে চলে যাবে, বিশ্বাসই হয় না।’
স্থানীয়রা জানান, মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে সেই ভয়াবহ ঘটনায় কালাম মারা যাওয়ার পর থেকেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার ছোট ভাই ও বোনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। গ্রামের মানুষের দাবি, দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াক সরকার ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।
গ্রামের জলিল চোকদার ও হনুফা বেগমের সর্বকনিষ্ঠ ছেলে আবুল কালাম (৩৮)। ২০ বছর আগে বাবা-মাকে হারানোর পর বড় ভাইবোনদের কাছে বেড়ে ওঠেন তিনি। সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে ২০১২ সালে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান, সেখান থেকে ফিরে ২০১৮ সালে বিয়ে করেন পাশের গ্রামের আইরিন আক্তারকে। দাম্পত্য জীবনে তাদের এক ছেলে (৬) ও এক মেয়ে (৪)।
স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় থাকতেন কালাম। ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো রবিবার সকালে তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে মতিঝিলে যান, তারপর কাজের প্রয়োজনে বেরিয়ে পড়েন, কিন্তু আর ফেরেননি।
রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের বেয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে সেটির নিচে চাপা পড়ে মারা যান আবুল কালাম আজাদ। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত মানুষ উদ্ধার কাজে অংশ নেয়, কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।
নিহতের স্ত্রী আইরিন আক্তার প্রিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যবসা ভালো যাচ্ছিল না, প্রায়ই ক্ষতির মধ্যে পড়ত আমার স্বামী। ধারদেনায় চলত সংসার। তারপরও সবসময় বলত, ছেলেমেয়েকে মানুষ করতেই হবে। এখন জানি না কীভাবে তাদের ভবিষ্যৎ গড়ব।”
গ্রামজুড়ে এখন কেবল কান্না, শোক আর অপূর্ণতার আক্ষেপ। এলাকার মানুষ বলছে ‘কালামের মতো সৎ ও পরিশ্রমী মানুষকে আমরা হারালাম, এটা শুধু এক পরিবারের নয়, পুরো গ্রামের ক্ষতি।’
নিহতের জানাজায় শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) মোঃ ইমরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বলেন,
“এই পরিবারকে সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ প্রদানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।”
সাননিউজ/এও