রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া বিমান বিধ্বস্ত দুর্ঘটনার অন্যতম বেঁচে থাকা শিক্ষার্থী নাভিদ নেওয়াজ (১২) ৯৭ দিন হাসপাতালে যুদ্ধের মতো চিকিৎসা শেষে অবশেষে ঘরে ফিরেছেন। নাভিদ ইংলিশ ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তার ৩৬ বার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, ২২ দিন কাটিয়েছে আইসিইউতে, ৩৫ দিন এইচডিইউতে এবং ৪০ দিন আইসোলেটেড কেবিনে।
আজ (সোমবার) দুপুরে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দীন জানান, নাভিদের চিকিৎসা একটি চ্যালেঞ্জের মতো ছিল। তিনি বলেন, “ফুসফুস আক্রান্ত হওয়ায় তাকে আইসিইউতে উপুড় করে শুইয়ে চিকিৎসা করতে হয়েছে। মুখে বিভিন্ন ধরনের মাস্ক পরিয়ে চিকিৎসা করা খুবই কঠিন কাজ। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও অনেক রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তবে নাভিদের চিকিৎসা সফল হয়েছে, আর সে অবশেষে নিরাপদে বাড়ি ফিরেছে।”
নাভিদের মা আবেগে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “৯৭ দিন আমরা নাভিদের জন্য রাতের ঘুম হারিয়েছি। দেখেছি কতোবার তাকে অপারেশনে নিতে হয়েছে, কতবার আমরা ভয়ে কাঁপেছি। আজ সে আমাদের কোলে ফিরেছে, মনে হচ্ছে স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যাম্পাসের ওপর আছড়ে পড়ে। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং ভবনের একটি অংশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পাইলটসহ বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ৩১ থেকে ৩৬ জন নিহত হন এবং অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হন।
সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিহত পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন, যাতে প্রাণহানি কম হয়। এই সাহসিকতায় তিনি বহু প্রাণ বাঁচিয়েছেন।
ডা. নাসির উদ্দীন আরও জানান, এই দুর্ঘটনার চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল ছিল। ফুসফুসে পানি ভরার মতো জটিলতায় রোগীকে উপুড় করে রাখা, মাস্ক ব্যবহার করে শ্বাসযন্ত্র চালানো, এগুলো চিকিৎসকদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে আরও পাঁচজন আহত শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং আশা করা যায়, আগামী সপ্তাহের মধ্যে তাদেরও ছুটি দেওয়া সম্ভব হবে।
সরকার ওই ঘটনায় একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। এছাড়া, দুর্ঘটনার সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য জাপানি ঠিকাদারের সহায়তা নেওয়া হবে।
নাভিদের দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধ, অস্ত্রোপচার ও অব্যাহত চিকিৎসার গল্প শুধু একটি শিশুর নয়, এটি মাইলস্টোন ট্রাজেডির একটি মানবিক দিক, যা পাঠককে বিমূর্ত সংখ্যার পেছনের বাস্তব কষ্ট ও সাহসিকতার সঙ্গে পরিচিত করে।
সাননিউজ/এও