কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা মো. আরিফুর রহমানকে এবার মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ মনির হোসেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর গেজেটটি প্রকাশ করা হয়।
গেজেটে উল্লেখ করা হয়—বিজ্ঞ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ও যুগ্ম জেলা জজ, ১ম আদালত, কুষ্টিয়া এ দায়েরকৃত নির্বাচনি মামলা নং- ০৩/২০২১ এর চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল আদেশ অনুযায়ী কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার মিরপুর পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচনে নির্বাচিত প্রার্থী মোহা. এনামুল হকের নাম বাতিলপূর্বক তদস্থলে 'মোবাইল ফোন' প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী মো. আরিফুর রহমানকে নির্বাচিত ঘোষণা করায় তাঁর দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র অনুসারে নির্বাচন কমিশন এতদ্বারা গত ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যার ১৪৭৩ নং পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ১নং কলামের বিপরীতে ২নং কলামে বর্ণিত মোহা. এনামুল হকের পরিবর্তে আরিফুর রহমান এবং ৩নং কলামে বর্ণিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিবর্তে 'স্বতন্ত্র' শব্দ ও চিহ্নসমূহ প্রতিস্থাপন করিলেন।
এর আগে চলতি বছরের গত ১২ আগস্ট আপীলে যথাযথ প্রমাণ না পাওয়ায় এবং বাদী পক্ষ উপস্থিত না হওয়ায় নির্বাচনী আপিল ট্রাইবুনাল এবং কুষ্টিয়া অতিরিক্ত জেলা জজ (২য় আদালত) মামলাটি খারিজ করে দিয়ে আরিফের পক্ষে রায় দেন। সেই রায়ের আলোকে গেজেট হলে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে আরিফুর রহমানকে শপথ নেয়ার জন্য একটি পত্র প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, এরআগে চলতি বছরের গত ২৭ এপ্রিল আরিফুর রহমানকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন কুষ্টিয়ার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর যুগ্ম দায়রা জজ মো. আলমগীর হোসাইন। আদালতের রায়ে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০-এর ৫৯(খ) বিধি অনুযায়ী আরিফুর রহমানের পক্ষে রায় দেওয়া হয়েছে।
রায়ে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. এনামুল হককে মেয়র নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করা হলো। ওই নির্বাচনে মোবাইল প্রতীকের প্রার্থী আরিফুর রহমানকেই যথাযথভাবে মেয়র নির্বাচিত ঘোষণা করা হলো। একইসঙ্গে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে ১০ দিনের মধ্যে আরিফুর রহমানকে মিরপুর পৌরসভার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের রায়ে মিরপুর পৌরসভায় নির্বাচিত মেয়র আরিফুর রহমানের গেজেট প্রকাশ আটকাতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার ও মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মিরপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. নাজমুল ইসলাম তৎপর হয়ে ওঠেন।
সে সময় কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাঈফ আহমেদ নাসিমের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। পরবর্তীতে তাকে বদলি করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সংযুক্ত করে ইসি। নির্বাচন কর্মকর্তা বদলি হলেও আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মিরপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. নাজমুল ইসলাম।
আদালতের রায়ে নির্বাচিত মেয়র আরিফুর রহমান বলেন, আমি ২০২১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোবাইল প্রতীকে নির্বাচন করি। কিন্তু তৎকালীন সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজী এনামুল হক অন্যায় ভাবে আমার বিজয় ছিনিয়ে নেয়। সে সময়ে আমাকে এবং আমার স্বজনদের উপরে হামলা চালানো হয়। এছাড়াও পৌর এলাকার ৮নং ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পোল দেখানো হয়। এর প্রেক্ষিতে আমি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে দীর্ঘদিন পর আদালত আমার পক্ষে রায় দেন। আদালতের এই রায় আটকাতেও নানা ভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত ন্যায্য বিচার করেছেন।
আরিফ আরও বলেন, ইতিমধ্যে বিজ্ঞ আদালতের রায়কে সম্মান জানিয়ে নির্বাচন কমিশন একটি গেজেট প্রকাশ করে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে শপথ পড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আমি প্রত্যাশা করি অবিলম্বে আমাকে শপথ গ্রহণ করিয়ে মিরপুর পৌর সভার জনমানুষের সেবা করার সুযোগ দেবেন।
সান নিউজ/আরএ